আমরা জানি না কোন পক্ষ গুলি করছে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে হবে কে বা কারা এর সঙ্গে জড়িত
—ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সংঘাত চলছে। এই পরিস্থিতিতে দেশটির সীমান্ত এলাকা থেকে বাংলাদেশের দিকে ছোড়া হচ্ছে গুলি। এ জন্য ছয়দিন ধরে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দ্বীপে বসবাসকারী প্রায় ১০ হাজার মানুষ খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংকটে পড়েছেন। বুধ ও শনিবার মিয়ানমার সীমান্ত থেকে বাংলাদেশি ট্রলারকে লক্ষ্য করে দুই বার গুলি চালানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কর্মকর্তারা। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেন্টমার্টিনে ট্রলারে ছোড়া গুলি কি সংঘাতের নাকি ইচ্ছেকৃত।
এক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন, কারা করছে গুলি, দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী নাকি বিদ্রোহীরা। এ বিষয়ে সদর দপ্তরের কোনো বক্তব্য আছে কীনা জানতে চেয়ে ফোন ও ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কিছুই জানায়নি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। এদিকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে স্পিডবোট-ট্রলারে গুলির ঘটনায় নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে আপদকালীন রুট হিসেবে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমে জেটি ঘাট চালু করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদের মোহনার শেষে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা অতিক্রম করার সময় মিয়ানমারের প্রান্ত থেকে বোটগুলো লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে। এ কারণে মানুষ প্রাণের ভয়ে চলাচল করতে চায় না। তবে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী, নাকি বিদ্রোহীরা গুলি চালাচ্ছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। গত কয়েক দিনে দু-তিনটি বোটে গুলি চালানো হয়েছে। এ কারণে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাতের মধ্যে সেন্টমার্টিনে এভাবে গুলির ঘটনা অবশ্যই একটি সমস্যা উল্লেখ করে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, যদিও গুলি কারা করছে আমরা জানি না। বিদ্রোহী না সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলতে পারবে, তারা কেন চলাচল করতে দিচ্ছে না। যেহেতু আমরা জানি মিয়ানমারের ওই এলাকাটি (মংডু) ঘেরাও করা আছে। খাদ্য সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারকে নেভাল স্কোয়াডের মাধ্যমে সেখানে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে হবে। জানতে হবে এটা কেন করছে বা কারা করছে।
এদিকে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের ফলে সেন্টমার্টিনে দেখা দিচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সংকট। দ্বীপে বসবাসরত ১০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে যারা দিনে এনে দিনে খায়, বেশি সমস্যায় পড়েছেন তারাই। খাদ্য ও পণ্যবাহী বোট চলাচল করতে না পারায় সেন্টমার্টিনের দোকানগুলোতে যেমন মজুত করা খাদ্যপণ্য শেষ হতে চলেছে; তেমনি সেই সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম দ্বিগুণ নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত সমাধান না হলে দ্বীপবাসীর জন্য খাদ্য, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সমস্যা বাড়তে পারে বলে ধারণা স্থানীয়দের। দ্বীপের মুদির দোকানি মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, ‘ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকার কারণে টেকনাফ থেকে কোনো ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আনতে পারেনি। যার ফলে দোকানে থাকা সবকিছু শেষের পথে। শুধু চাল ছাড়া কোনো মালামাল নেই। এভাবে চলতে থাকলে দ্বীপের মানুষদের না খেয়ে থাকতে হবে।’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, মিয়ানমার থেকে গুলি ছোড়ার কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে ছয় দিন ধরে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দ্বীপে কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও মালামাল আনা যাচ্ছে না। এ জন্য অনেক মুদির দোকানে পণ্য নেই। পাশাপাশি দ্বীপে মানুষের মাঝেও খাদ্যপণ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। এটি দ্রুত সমাধান না হলে বড় ধরনের অভাব দেখা দিতে পারে দ্বীপে। সেন্টমার্টিন বোট মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ জানান, বোটে প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখে মানুষ ভয়ে যাচ্ছে না। তাছাড়া ওই পথ ছাড়া সেন্টমার্টিনে আসার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা বা রুটও নেই। প্রতিদিন সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌপথে ছয়-সাতটি বোটের মাধ্যমে শতাধিক মানুষ আসা-যাওয়া করার পাশাপাশি খাদ্য ও নিত্যপণ্য বহন করতেন। কিন্তু নৌযান বন্ধ থাকায় মানুষজন খুব বিপদে আছে। শনিবার দুপুর ১টার দিকে নাফ নদের বদরমোকাম মোহনায় নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে একটি পণ্যবাহী ট্রলারে গুলি করা হয় মিয়ানমার সীমান্ত থেকে। এর আগে বুধবার রাতে নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনি কর্মকর্তাদের ওপর গুলি ছোড়া হয়েছে। ওই এলাকাটি বর্তমানে আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে বলে জানা গেছে। এই গোষ্ঠীর সদস্যরাই গুলি ছুড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।