বন্যার পানিপ্রবাহ

কমছে পূর্বে বাড়ছে উত্তরে

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৪, ০৫:৫২ পিএম
  • সিলেটে পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি
  • পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
  • গাইবান্ধায় সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে
  • সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বিপদসীমার কাছাকাছি
  • লালমনিরহাটে বানভাসিদের দুর্ভোগ চরমে

সিলেটসহ দেশের পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। এতে এ অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বেশিরভাগ নদ-নদীর পানি গত দুদিন থেকে কমতে শুরু করেছে। অন্যদিকে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলা, তিস্তাসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চর, দ্বীপচর ও নিম্নাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ। সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বাড়ছে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও। ফলে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। 

সবশেষ তথ্য অনুযায়ী সিলেটে এক সপ্তাহ পর গতকাল রোদের দেখা মিলেছে। বৃষ্টি কমে আসায় বিভিন্ন পয়েন্টে নদীর পানি কমছে। এতে নগরসহ বন্যাকবলিত অন্যান্য স্থানে পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে। তবে মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। সিলেটে চলতি বছর বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা সাড়ে ৯ লাখ ছাড়িয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৩টি ওয়ার্ডসহ জেলার ১৩ উপজেলার ১৩০ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যাকবলিত হয়েছেন ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৮ বাসিন্দা। এ অবস্থায় সিলেটের ১৩ উপজেলার ৬৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬১ আশ্রয়কেন্দ্রে ২১ হাজার ৭৮৬ জন আশ্রয় নিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে গতকাল এ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে শুক্রবার সকাল ৯টায় বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে গতকাল এই পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশীদ পয়েন্টে শুক্রবার সকাল ৯টায় বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে গতকাল এই পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। একইভাবে কুশিয়ারা নদীর পানি শেওলা পয়েন্টে সকাল ৯টায় বিপদসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে এ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। 

অপরদিকে সিলেট আবহাওয়া অফিস বলছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত কোথাও বৃষ্টির খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে বৃহস্পতিবার বন্যাকবলিত সিলেট পরিদর্শন শেষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, নিয়মিত নদী খননে দেশের ৯টি স্থানে ড্রেজিং স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। সিলেট নগরকে বন্যার কবল থেকে রক্ষায় সুরমা নদীতে দ্রুত ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সিলেট বিভাগের আরেক জেলা সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি না হওয়ায় উজানের পাহাড়ি ঢল নেমেছে কম। তাই সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এতে স্বস্তি ফিরেছে ভাটির জেলার মানুষের মনে। তবে দুর্ভোগ কমেনি বন্যাকবলিতদের। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, তাহিরপুরসহ সাত উপজেলার ৭৮ ইউনিয়নের ১০১৮ গ্রাম ঢলের পানিতে তলিয়ে যায়। এমনকি পানিবন্দি হয়ে এখনও চরম কষ্টে জীবনযাপন করছেন জেলার সাড়ে ছয় লাখ মানুষ। 

স্থানীয়রা জানান, বন্যার কারণে ভেসে যায় ঘরে থাকা ধান-চাল, গৃহপালিত পশু ও আসবাবপত্র। সে সঙ্গে তলিয়ে গেছে পুকুরের মাছ ও ফসলি জমি। সে সঙ্গে জেলা সদরের সঙ্গে এখনও সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে তাহিরপুর উপজেলার। এছাড়া ছাতক, দোয়ারাবাজার, জগন্নাথপুরসহ কয়েকটি উপজেলার সঙ্গে দুর্গম এলাকার ৪০টিরও বেশি গ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে পাহাড়ি ঢল কম নামায় এরই মধ্যে পৌর শহরের তেঘরিয়া, আরপিননগর, বড়পাড়া, ওয়েজখালী, মল্লিকপুর, ষোলঘর, নতুনপাড়া, মধ্যবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার হাঁটুসমান পানি থাকলেও বর্তমানে এক থেকে দুই ইঞ্চি রয়েছে। অর্থাৎ ধীরে ধীরে পৌর শহর থেকেও পানি কমে যাওয়ায় স্বাভাবিক হচ্ছে যানবাহন চলাচল। মৌলভীবাজারের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে। তবে জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা নদীগুলোর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে ওঠানামা করছে। বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়েও প্রবাহিত হচ্ছে। সদর উপজেলার জুগিডহর এলাকায় মনু নদের বাঁধে ভাঙনের ঝুঁকি থাকায় জিওব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষার কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম জানান, বন্যাকবলিতদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে।  

অন্যদিকে সবশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার পানিপ্রবাহ বাড়ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত কদিনের টানা ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর, যাদুরচর, শৌলমারী বন্দবেড় ও চরশৌলমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রৌমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কদিনের টানা বর্ষণে আমাদের ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আরও কদিন এ অবস্থা থাকলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে।’ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামসুদ্দিন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ১৬ মেট্রিক টন চাল এবং ৮৫ হাজার টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে এসব এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা। নিমজ্জিত হয়েছে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক। নিম্নাঞ্চলের বসতভিটায় পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। এছাড়াও তলিয়ে গেছে মৌসুমি ফসলের ক্ষেত। ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও তা এখনও বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে জেলায় ৪৫৩ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত কদিনের টানা বৃষ্টি এবং উজান থেকে ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর, যাদুরচর, শৌলমারী বন্দবেড় ও চর শৌলমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। 

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধার সব নদ-নদীর পানি বাড়া অব্যাহত আছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদ, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি বেড়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সংলগ্ন কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য তিনটি নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার একই সময়ে একই পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গাইবান্ধা পাউবো সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ২৮ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার ও করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চকরহিমাপুর পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।  এদিকে গতকাল শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯৭ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপদসীমা ১২ দশমিক ৯০ মিটার)। 

অপরদিকে কাজিপুর মেঘাই পয়েন্টে পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৭১ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার এক দশমিক ৯ মিটার নিচ প্রবাহিত হচ্ছে (বিপদসীমা ১৪ দশমিক ৮০ মিটার)। পাউবো সূত্র জানায়, জুন মাসের শুরুতে যমুনায় পানি বাড়া শুরু হয়। ৩ জুন থেকে অস্বাভাবিকভাবে পানি বাড়লেও এক সপ্তাহ পর কমতে থাকে। এরপর ১৮ জুন থেকে আবারও দ্রুত বাড়ছে যমুনার পানি। ওদিকে হুহু করে পানি বৃদ্ধি পেয়ে যমুনার অভ্যন্তরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে চরাঞ্চলের ফসলি জমি। এতে বন্যা-আতঙ্ক বিরাজ করছে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে। চরাঞ্চলের বিভিন্ন ইউনিয়ন ছাড়াও যমুনার পশ্চিম তীরবর্তী সদর উপজেলার বাঐতারা, পূর্ব মোহনপুর, বেলুটিয়া এলাকায় নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেছেন, আরও চারদিন যমুনায় পানি বাড়বে। এতে বিপদসীমা অতিক্রম করে ছোট থেকে মাঝারি বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

লালমনিরহাটে বানভাসিদের দুর্ভোগ চরমে

লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির এখনও উন্নতি হয়নি। এখনও পানিবন্দি রয়েছে অন্তত সাত হাজার পরিবার। পানিবন্দি মানুষগুলোর মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় চলাচলের ভোগান্তি বেড়েছে বহুগুণ। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, পানিবন্দি মানুষগুলোর মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে ত্রাণ দেয়া হবে। লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গরিবুল্লাহপাড়া, বারোঘরিয়া, গোবরধন, সদর উপজেলার কালমাটি এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িঘরে পানি থাকায় বন্ধ রয়েছে রান্না, দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। এছাড়া পানিবন্দি হয়ে পড়া এসব নিম্নাঞ্চলে তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, কৃষকের ধান, বাদাম, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটির বাসিন্দা শফিয়ার রহমান (৩৫) বলেন, গত চার দিন ধরে নদীর পানি বেড়েছে। আর তিন দিন হলো বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। রান্না করার জন্য চুলা জ্বালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাছাড়া খাবার পানি সংগ্রহ করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। একই এলাকার বাসিন্দা বদিউজ্জামান জানান, চরের জমিতে চাষ করা বাদাম এখনো ঘরে তোলা হয়নি। পানির স্থায়িত্ব আর একদিন থাকলে বাদামগুলো পচে যাবে। 

সদর উপজেলার পাকারমাথার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, নদী, চর ও গ্রামে পানি থাকায় গরু-ছাগল রাস্তায় রেখেছি। নিজেদের খাবারের কষ্ট তো আছেই, গরু-ছাগলের জন্যও খাবার মেলানো যাচ্ছে না। জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের আবলার বাজার এলাকার বাসিন্দা রুপন মিয়া বলেন, তিন দিন ধরে বাড়িতে পানি। স্ত্রী-সন্তানকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে এসেছি। শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটছে। প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেন আদিতমারী উপজেলার বারোঘরিয়া, গোবরধনসহ তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দি থাকা পরিবারের লোকজন। গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টায় লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় অবস্থিত তিস্তার ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১.৬৮ মিটার, যা বিপদসীমার মাত্র ৪৭ সেন্টিমিটার নিচে। তবে তিস্তার রেল সেতু পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ২৯.৩০ মিটার, যা বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। 

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তাসহ লালমনিরহাটের সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদীতে পলি পড়ে পানি ধারণক্ষমতা কমে আাাসায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পানি কমে গেলে কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিতে পারে। নদীভাঙন ঠেকাতে জরুরি আপদকালীন কাজ হিসেবে জিওব্যাগ ফেলা হবে। পানি শুক্রবার সকাল থেকে কমতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, আগামী ২৪ জুন থেকে আবারও তিস্তার পানি বাড়তে পারে।

আরএস