এমডি, সিওও এবং সিটিও পদ শূন্য

কাণ্ডারি নেই ডিএসইর

আনোয়ার হোসেন সোহেল প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২৪, ১১:৫৬ পিএম

শীর্ষ তিন কর্মকর্তা ছাড়াই চলছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নেই প্রায় দেড় মাস, ছয় মাস পেরিয়েছে চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) পদত্যাগের। শেয়ার লেনদেন অনলাইনে হলেও অব্যাহতির প্রায় এক বছর ৯ মাসেও নিয়োগ দেয়া হয়নি প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও)। 

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন ‘যেনতেনভাবে’ চলছে ডিএসই। যেকোনো সময় অঘটন ঘটলে রক্ষার উপায় নেই। তবে ডিএসই জানায়, শিগগিরই চূড়ান্ত হবে সবগুলো নিয়োগ।  শেয়ারবাজার অত্যন্ত সেনসিটিভ বাজার। এখানে ভারপ্রাপ্ত লোক দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো কতখানি যুক্তিসঙ্গত, জানতে চাইলে থ্রিআই সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইস্তাক আহমেদ শিমুল আমার সংবাদকে বলেন, ডিএসইর তিনটি শীর্ষ পদ দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা। অ্যাডহক দিয়ে দীর্ঘদিন কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে, এতে কাজের গতি মন্থর হয়ে পড়ে। আর সিটিও ও সিওও খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ, টেকনিক্যাল এসব পদ বিকল্প লোক দিয়ে চললে যেকোনো সময় বড় সমস্যা হতে পারে। তখন উত্তরণের উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাধারণ মানুষের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ রয়েছে শেয়ারবাজারে। এমন প্রতিষ্ঠান ‘আল্লাহরওয়াস্তে’ চলতে পারে না।

ইস্তাক আরও বলেন, চীনের সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ আমাদের পুঁজিবাজারের কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে যুক্ত হয়েছে অনেকদিন। আমরা আশা করেছিলাম, তারা এলে টেকনিক্যাল ও ফন্যান্সিয়াল সাপোর্ট পাবো, কিন্তু তার কিছুই হয়নি। চলতি বছরের ১০ মার্চ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসের শুরুতেই ডিএসইর ওয়েবসাইটে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর পর থেকে ভুল তথ্য দেয়া শুরু হয়। ওই সময় ডিএসইর ওয়েবসাইটে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ছয় হাজার ১২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে দশমিক ৩৯ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। অথচ তখন পর্যন্ত বাজারে ২২৬টি কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যার মধ্যে ১৫৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, যা লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ। ওই সময়ে শরিয়াহ সূচক ডিএসইএসের অবস্থান দেখানো হয় দশমিক শূন্য চার পয়েন্ট, যা আগের দিনের চেয়ে এক হাজার ৩৩৫ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বা ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ কম। অবশ্য পরে তা ঠিক হয়েছে। 

ডিএসইর একাধিক সূত্র জানায়, ২০২২ সালের অক্টোরবে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তাকে (সিটিও) বরখাস্ত করে। সেই থেকে ওই পদ শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিনেও পদটি পূরণ করা হয়নি। 

সিটিওর নিয়োগ না হওয়া প্রসঙ্গে, ডিএসইর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. হাফিজ এমডি হাসান বাবু আমার সংবাদকে বলেন, সিটিও পদটি টেকনিক্যাল একটি পদ। দীর্ঘদিন ধরে পদটি খালি আছে। একটি জটিল পরিস্থিতিতে বিসেক সিটিওকে অব্যাহতি দিয়েছে। সেই অবস্থায় আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। আমরা পারলে এক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন সিটিও নিয়োগ দিয়ে দিতাম। কিন্তু যোগ্য কাউকে না পাওয়ায় নিয়োগ দিতে পারিনি। তবে সিটিওর খোঁজ চলমান রয়েছে।  

চলতি বছরের জানুয়ারিতে চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) সাইফুর রহমান মজুমদার ডিএসই থেকে পদত্যাগ করেন। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ওই পদটি পূরণ করতে পারেনি ডিএসই। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে কর্মরত আছেন। গত ২০ মে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এটিএম তারিকুজ্জামান পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার হিসেবে যোগদান করায় প্রায় দেড় মাস ধরে ডিএসইর এমডি পদ ফাঁকা হয়। তবে এমডির জন্য গত ২০ জুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ নিয়ে ডিএসইর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. হাফিজ এমডি হাসান বাবু আমার সংবাদকে বলেন, ‘যোগ্য লোকের অভাবে এতদিন পদগুলো খালি আছে। আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি; শিগগিরই শূন্য পদগুলো পূরণ হবে। তবে কতদিনের মধ্যে এই পদগুলো পূরণ হবে জানতে চাইলে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ বা মাস জানাতে পারেননি ডিএসইর চেয়ারম্যান। 

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) শফিকুর রহমান আমার সংবাদকে জানান, ডিএসইর গত ২০ জুন এমডি নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এছাড়া শূন্য হওয়া সিটিও ও সিওও পদের জন্য নির্বাচিতদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই ওই পদগুলোতে নিয়োগ দেয়া হবে। 

উল্লেখ্য, ডিএসইতে তিন বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক (নবায়নযোগ্য) এমডির নিয়োগ দেয়া হয়। এমডি পদ পেতে প্রার্থীকে অবশ্যই বিজনেস, অর্থনীতি, পরিসংখ্যান, গণিত বা আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিসহ ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে অন্তত ১০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অথবা সিএফএ, সিএ, সিএমএ, সিএস, সিপিএ প্রফেশনাল ডিগ্রিসহ অন্তত ১০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পুঁজিবাজার বা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলযোগ্য। ফিনটেক, তথ্যপ্রযুক্তি ও গভর্নেন্স বিষয়ে জানাশোনা অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। কোনো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে অন্তত ১০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পুঁজিবাজার বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কৌশলগত নেতৃত্বের সক্ষমতা থাকতে হবে। উপস্থাপনা ও যোগাযোগে দক্ষ হতে হবে।