১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ‘ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট’। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নামে নামকরণ করা হয়। ৬৮ বছর ধরে একটি পরিকল্পিত-পরিবেশবান্ধব নগরীর লক্ষ্য নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবার জন্য টেকসই আবাসন নিশ্চিত করা। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ রাজউক প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
গণপূর্ত বিভাগের সহযোগিতায় এক সময়ের বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী শহর ঢাকার সঙ্গে পর্যায়ক্রমে ওয়ারী ও ধানমন্ডি সংযুক্ত হয়েছে। পরিকল্পিত নগরায়ণে রাজউকের প্রচেষ্টায় গুলশান, বনানী, উত্তরার মতো অংশের বাস্তবায়ন হয়। শুধু পরিকল্পিত নগরায়ণ নয়, বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলও গড়ে তুলছে রাজউক। রাজউকের প্রচেষ্টায় বাড্ডা পুনর্বাসন এলাকা, শ্যামপুর-কদমতলী শিল্প এলাকা, টঙ্গী শিল্প এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে।
একসময় রাজউকের সেবা নিতে প্রচুর সময় ব্যয় হতো। ফলে গ্রাহক হয়রানি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তবে সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। কিছু কিছু জায়গায় ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। প্রচেষ্টা চলছে রাজউকের প্রতিটি সেবা খাতকে ডিজিটালাইজড করার। রাজউকের সেবা সহজকরণবিষয়ক কর্মশালা থেকেও রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার রাজউকের সেবাকে যুগোপযোগী করার জন্য ডিজিটালাইজেশনের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন। ইতোমধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ বিষয়ে ভূমি ছাড়পত্র, বিশেষ প্রকল্পের ছাড়পত্র, ভবন নির্মাণের নকশা দাখিল ও অনুমোদন অনলাইনের মাধ্যমে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করেছে রাজউক। ফলে অসৎ কর্মকর্তাদের উৎকোচ গ্রহণের সুযোগ যেমন কমেছে, তেমনি গ্রাহক হয়রানি কমেছে বহুগুণ। রাজধানীতে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য অনুমতির প্রয়োজন হয়। তবে এতে করে অনেক ক্ষেত্রে অনুমতি পেতে দীর্ঘসূত্রতা দেখা যায়। ফলে নতুন ভবনের ছাড়পত্র পেতে জনগণকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ ভোগান্তি লাঘবের লক্ষ্যে অনলাইনে আবেদনের ব্যবস্থা ও সুযোগ করে দেয় রাজউক। ফলে জনসাধারণ ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া আবেদন থেকে শুরু করে সলভেন্সি সার্টিফিকেট পাওয়া পর্যন্ত সব কার্যক্রম ঘরে বসেই অনলাইনে সম্পন্ন করতে পারছেন।
এ বিষয়ে দৈনিক আমার সংবাদকে রাজউক চেয়ারম্যান মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার বলেন, ‘রাজউকের সব তথ্য ও কার্যক্রম যেন সবাই অনলাইনে পেতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার অনেক কিছু সম্পন্ন করে ফেলেছি আমরা।’
পরিকল্পিত নগরায়ণ, ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার ও বিধি মোতাবেক ভবন নির্মাণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে ঢাকা নগরীর আবাসন সমস্যা সমাধানে পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা ও স্যাটেলাইট টাউন গড়ে তোলার পাশাপাশি বিধি অনুযায়ী বেসরকারি আবাসন প্রকল্পসমূহের অনুমোদন প্রদান ও তদারকি কার্যক্রম গ্রহণ করছে রাজউক। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অবৈধ ও অপরিকল্পিত ভবন-স্থাপনা উচ্ছেদ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রয়েছে কি না, তাও যাচাই করছে রাজউক। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রেমালের বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যেও খিলগাঁও, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে দেখা গেছে রাজউককে। এছাড়া রাজধানীর শ্যামলীতে নকশা অনুযায়ী ভবন তৈরি হচ্ছে কি না কিংবা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পরিপূর্ণ রয়েছে কি না, সেসব পরিদর্শনেও যেতে দেখা গেছে রাজউককে।
ঢাকাকে বাসযোগ্য ও পরিবেশসম্মত আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
রাজধানী শহর ঢাকার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলতে মতিঝিল, কেরানীগঞ্জ ও পূবাইলে কমন স্পেস, ইকোপার্ক ও উদ্যান তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পরিবেশবান্ধব রাজধানী গড়তে হাতিরঝিল বাস্তবায়ন করেছে রাজউক। এছাড়া কুড়িল ফ্লাইওভার ও ৩০০ ফিট তৈরিতে ভূমিকা রেখেছিল রাজউক। সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনকে সামনে রেখে আধুনিক নগরায়ণন গড়ার পরিকল্পনা চলছে জানিয়েছে রাজউক চেয়ারম্যান আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমরা এবার লক্ষাধিক গাছ রোপণের পরিকল্পনা করেছি। ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তুলতে বৃক্ষরোপণকে গুরুত্ব দিয়ে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।’ ঢাকাকে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে পরিকল্পনামাফিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও জানান রাজউক চেয়ারম্যান।