জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুর রহমান ও তার স্ত্রী নারগীছ আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক আল আমিন বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার নারগীছ আক্তার ও তার স্বামী শহিদুর রহমান বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। মামলা নং ১০।
এর আগে ২০১৯ সালের শেষদিকে আমার সংবাদে শহিদুর ও তার স্ত্রীর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে ‘সিংগাইর উপজেলার ভিপি শহিদ, রাজনীতির সিঁড়ি বেয়ে কোটিপতি’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে সিংগাইর পৌর সদরে ওই দম্পতির বিশাল অট্টালিকার তথ্য ছাড়াও স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জন, ব্যাংক ব্যালেন্স, পরিবহন নেতা না হয়েও পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি, নদী দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে সব অভিযোগের বিষয়ে জানালে সে সময়কার জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানান। যদিও কোনোরকম ব্যবস্থা আদৌ নেননি তারা। উল্টো তার রাজনৈতিক প্রমোশন হয়েছে। বর্তমানে তিনি ওই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তবে তার বিরুদ্ধে সে সময়কার অভিযোগের দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সত্যতা পায় দুদক। যে কারণে মাঝে কয়েক বছর পার হলেও অনুসন্ধান শেষে গত মঙ্গলবার দুদকের পক্ষ থেকে মামলাটি করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শহিদুর রহমানের স্ত্রী নারগীছের বিরুদ্ধে প্রায় তিন কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক। যে কারণে শহিদুর রহমানের স্ত্রীকে সম্পদের বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করে সংস্থাটি। আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সম্পদের বিবরণীও দাখিল করেন তিনি। বিবরণীতে তিনি তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেন প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। পরবর্তীতে অনুসন্ধানে তার স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তিন কোটি ৬৬ লাখ টাকারও বেশি সম্পদের তথ্য পায় দুদক। যার মধ্যে মানিকগঞ্জের সিংগাইর মৌজায় ১২.৫০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত বাড়ি নির্মাণ ব্যয় দুই কোটি ২৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা দেখালেও দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া যায় দুই কোটি ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকারও বেশি। এক্ষেত্রে তিনি ৩০ লাখ ৭৮ হাজার টাকার বেশি সম্পদের তথ্য গোপন করেন। সর্বোপরি দুদকে দাখিল করা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় তিন কোটি টাকার সম্পদ বিবরণীতে ৩০ লাখ ৭৮ হাজার টাকারও বেশি সম্পদের তথ্য গোপন করেন তিনি। এছাড়াও সম্পদ অর্জনকালীন সময়ে তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় পাওয়া যায় প্রায় ৩২ লাখ টাকা। যার ফলে তার অর্জিত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় চার কোটি টাকায়।
দুদকে দাখিল করা তার সম্পদের বিবরণীতে স্বামীর সঙ্গে যৌথ নামে ব্যাংক ঋণ পাওয়া যায় ১৮ লাখ টাকা। ঋণ বাদ দিয়েও তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় চার কোটি টাকা। তার অর্জিত সম্পদের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় প্রায় এক কোটি টাকা। এক্ষেত্রে আয় অপেক্ষা অতিরিক্ত সম্পদ পাওয়া যায় প্রায় তিন কোটি টাকা। যা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়। দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, নারগীছ আক্তার একজন গৃহিণী। তার নিজস্ব আয়ের কোনো উৎসই নেই। স্বামীর আয়ের ওপরই নির্ভরশীল। তিনি তার স্বামীর আয়ের ওপর নির্ভরশীল হলেও তার অর্জিত সম্পদের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় প্রায় কোটি টাকার মতো।
দুদকের অনুসন্ধানে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই একে অপরের যোগসাজশে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনসহ ভোগদখলে রাখার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলার এজাহারে বলা হয়, স্বামী-স্ত্রী দুজনই অসৎ উদ্দেশ্যে একে অপরের যোগসাজশে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় তিন কোটি টাকার সম্পদ নিজ নামে অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত এই সম্পদের মধ্যে প্রায় ৩১ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য দুদকে দাখিল করা সম্পদের বিবরণীতে গোপন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ৬২(২) ধারা ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।