বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের কোনো তদারকি নেই, এজন্য সবকিছুর পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে
—এসএম নাজির আহমদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট, কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)
মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেও নিত্যপণ্যের বাজারে দেখা নেই স্বস্তির। গত ঈদুল আজহার আগ থেকেই নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। তবে বিগত এক সপ্তাহের বেশি নিত্যপণ্যের বাজার চরম ঊর্ধ্বমুখী। হাঁসফাঁস অবস্থা জনজীবনে। চরম ভোগান্তিতে নিম্ন আয়ের মানুষ। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, খরচ সাশ্রয়ের জন্য অনেকে বেছে নিচ্ছেন নিম্নমানের পণ্য। ৬০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না কোনো সবজি, পেঁয়াজের ঝাঁজ তুঙ্গে। অপরদিকে চোখ রাঙাচ্ছে কাঁচামরিচও। বেসামাল বাজারব্যবস্থা নিয়ে কর্তৃপক্ষেরও নেই কোনো নজরদারি। নানা অজুহাতে বেড়ে চলছে জিনিসপত্রের দাম। অনেকেই বলছেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে নিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়ায় প্রতি কেজি বেগুনের দাম ২০ টাকা, ঠিক সেই বেগুন ঢাকায় বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। অনুরূপভাবে পাবনায় প্রতি কেজি ঢেঁড়স ১৩ থেকে ১৫ টাকায় পাওয়া গেলেও ঢাকায় তা ৭০ থেকে ৮০ টাকা। অর্থাৎ ঢাকায় পৌঁছাতেই প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে যায় ৫০ থেকে ৮০ টাকা।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন খুচরা পণ্যের বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজের ঝাঁজ বেশ বাড়ন্ত। প্রতিকেজি পেঁয়াজ ছুঁয়েছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ টাকা। মরিচের ঝালও কম নয়, ভালো মানের প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। বিগত সপ্তাহ দুই ধরে এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দামে টানা অস্থিরতা চলছে। এর আগে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকার প্রতি কেজি মরিচ পাওয়া গেলেও এ সপ্তাহে বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা।
যাত্রাবাড়ীর ধোলাইরপার বাজারের সবুজ নামের এক বিক্রেতা আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের তো আর কিছুই করার নেই। আড়ত থেকে বেশি দামে কিনি, তাই দাম একটু বাড়িয়েই বিক্রি করতে হয়। তিনি এও বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে টানা বর্ষা-বৃষ্টি এবং বন্যার কারণে দাম একটু বেশি।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ঢেঁড়স ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এছাড়া কাঁকরোলের কেজি ৮০ থেকে ১০০, পটোল ৬০ থেকে ৭০, ধুন্দল ও চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০, কাঁচা পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। গা জরের কেজি ১০০ থেকে ১৫০ ও টমেটো ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা বলেন, বাজার করার আগই পকেট খালি হয়ে যায়। সবকিছুর যে দাম, তাতে চলা খুব মুশকিল হয়ে যায়।
এদিকে টানা উত্তেজনা দেখা গেছে আলুর বাজারেও। এ নিত্যপণ্যটি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে আলুর কেজি ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে দাম প্রায় আরও পাঁচ টাকা বেড়েছে। গেলো বছরের এ সময় পণ্যটির দাম ছিল বর্তমান দামের অর্ধেকেরও কম।
স্বস্তি নেই প্রোটিনের ঘাটতি মেটানোর শেষ ভরসা ডিমেও। চড়া দামে থাকা ডিমের বাজারও অপরিবর্তিত রয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি হালি ডিমের দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। তবে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম তুলনামূলক বেশি। প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২১০ টাকা দরে। সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা। গরুর মাংসের কেজি কোথাও ৭৫০, কোথাও ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
গত সপ্তাহের মতোই মাছের বাজারও বেশ চড়া। বাজারে প্রতি কেজি পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়; চিংড়ি ৭০ থেকে ১১০০, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০, তেলাপিয়া ২৫০, রুই ৩৫০, কাতল ৪০০, কই ২৫ থেকে ৩০০, শিং ৪০০ থেকে ৬০০, গুলসা ৫৫০ থেকে ৬০০, টেংরা ৫৫০ থেকে ৬০০, বড় বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০, বড় আইড় প্রতি কেজি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে দেশের জাতীয় মাছ ইলিশ এখন অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। বাজারে প্রতি কেজি ছোট ইলিশ ৯০০ থেকে ১১০০ এবং এক কেজি সাইজের প্রতিটি ইলিশের দাম প্রায় ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজির আহমদ আমার সংবাদকে বলেন, চাল, ডাল, পেঁয়াজ সবকিছুর দামই বেশি। বর্তমান বাজার ব্যবস্থায় সরকারে কোনো তদারকি নেই; এজন্য সবকিছুর পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে নিচ্ছেন। বাজারে ব্যবস্থায় নেই কোনো তদারকি।
এ বিষয়ে জানতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে বারবার জিজ্ঞেস করা হলেও কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।