ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ডিলার নিয়োগে নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। ডিলার নিয়োগ সংক্রান্ত নতুন নিয়মে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার বা অনুমতিপত্র বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ঢাকাসহ সারা দেশে ডিলার নিয়োগের নতুন এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন টিসিবির ডিলার হিসেবে ব্যবসায়ীদের অনেকেই নতুন নিয়মে বঞ্চিত হচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দলের কোনো পদ-পদবীতে না থাকায় তাদের ডিও লেটার দিচ্ছেন না এমপিরা। ফলে ডিলার নিয়োগপ্রাপ্তিতে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র থাকার পরও নতুন করে ডিলার ডিলারশিপ নবায়ন করাতে পারছেন না তারা।
বিষয়টি নিয়ে টিসিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন ডিলার কল্যাণ সমিতির নেতারা। তবে তাতে কাঙ্ক্ষিত কোনো ফল হয়নি। বাধ্য হয়ে টিসিবির ডিলার সমিতির নেতারা বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়েছেন, কিন্তু এতেও কাজ হয়নি। প্রতিমন্ত্রী তাদের সাক্ষাৎ দেননি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, টিসিবির ডিলার হতে এতদিন এমপিদের কোনো ডিও লেটার বা অনুমতিপত্র লাগত না। ডিলার ফরম দোকানের ট্রেড লাইসেন্স, দোকানের চুক্তিনামা, ডিলার ছবি আইডি কার্ডের সত্যায়িত কপি লাগত, টিন সার্টিফিকেট, ব্যাংক সলভেন্সি লাগত। এসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও শর্ত পূরণ করলে এসিল্যান্ড সরেজমিন তদন্ত করে রিপোর্ট দিলে টিসিবি থেকে আঞ্চলিক কার্যালয়ে পাঠানো হতো কাগজপত্র। এরপর অফেরতযোগ্য ১০ হাজার একটি ও ৩০ হাজার টাকা ফেরতের শর্তে দুই বছরের জন্য ডিলারশিপের অনুমোদন পেতেন ডিলাররা।
জানা গেছে, গত ৩ জুলাই টিসিবির চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত এই সংক্রান্ত একটি চিঠিতে ডিলারশিপ নবায়নের জন্য এমপিদের ডিও লেটার যুক্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিসিবির একাধিক ডিলার জানান, আমরা দীর্ঘদিন সরকারের সব নিয়ম মেনে ডিলারশিপ নিয়ে কাজ করছি। এখন আমাদের কাগজপত্র নবায়নের জন্য এমপিদের কাছ থেকে ডিও লেটার নিতে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হচ্ছে। তবে এমপিরা বলছেন, এবার আমাদের দলীয় কর্মী ছাড়া অন্যদের দেয়া হবে না। ঢাকার প্রায় সবগুলো আসনের সংসদ সদস্যরা এমন কথা জানিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন ডিলাররা।
এ বিষয়ে ডিলার্স কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের প্রায় আট হাজার ডিলার আছেন। দীর্ঘদিন ধরে সরকারের নিয়ম মেনে আমরা ব্যবসা করে আসছি। এখন ডিলারশিপ নবায়ন করতে এমপিদের ডিও লেটার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে অনেক ডিলার হতাশ হয়ে পড়েছেন। কারণ আমরা সবাই ব্যবসায়ী (মুদি দোকানি) অনেকেরই কোনো রাজনৈতিক পদ-পদবী ও পরিচয় নেই। তিনি আরও বলেন, আমাদের মধ্যে অনেকে নারী ডিলার রয়েছেন, যাদের মধ্যে বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তাও আছেন, নতুন এই নিয়ম চালুর কারণে তারা বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, তাদের অনেকেরই রাজনৈতিক পরিচয় নেই, আবার স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে পৌঁছানোর সুযোগও এদের কম। এছাড়া অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা ডিও লেটার আনতে না পারলে তাদের ডিলারশিপ হারাবেন। অথচ এরাই করোনাকালেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন। এ নিয়ে আমরা বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার দেখা করার চেষ্টা করেছি কিন্তু তার দেখা পাইনি।
এদিকে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবির আমার সংবাদকে বলেন, ডিও লেটার আনতে বলা হয়েছে। তবে দলীয় নেতাকর্মী হতে হবে এমন কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে টিসিবির চেয়ারম্যানের নম্বরে কল করা হলে, তিনি মোবাইলে কথা বলবেন না বলে জানান।
গতকাল টিসিবির একটি নিয়মিত মিটিংয়ে ডিলার্স কল্যাণ সমিতির নেতারা বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি সুরাহার আহ্বান জানালেন প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু তাদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘আপনারা আছেন, আপনারাই থাকবেন। তবে ডিও লেটার অবশ্যই লাগবে! প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে হতাশ ডিলার্স কল্যাণ সমিতির নেতারা জানান, প্রতিমন্ত্রী একবার বলছেন আপনারা আছেন আপনারা থাকবেন, আবার বলছেন ডিও লেটার লাগবে। কিন্তু এমপিদের কাছে গেলে তারা ডিও লেটার দিচ্ছেন না।
এ নিয়ে আমার সংবাদকে ডিলার্স সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা আশান্বিত হতে পারছি না। এ নিয়ে আমরা রোববার (আজ) আমাদের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে গণমাধ্যমে বিষয়টি জানাবো। ডিলারদের ডিও লেটার না দেয়া প্রসঙ্গে ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য সাঈদ খোকন আমার সাংবাদকে বলেন, অনেকদিন আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠির মাধ্যমে টিসিবির ডিলার নিয়োগের জন্য ডিও লেটার দিতে এমপিদের অনুরোধ করা হয়েছে। আমিও পেয়েছি। তবে দলীয় পদ-পদবী থাকতেই হবে এমন কোনো নির্দেশনা পাইনি। আমি আমার এলাকায় কোনো বিভাজনের রাজনীতি করি না। তবে আমাদের দলে ও দলের বাইরে থাকা অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আমি সব সময় কাজ করেছি এবং কাজ করে যাব।