ডেঙ্গুতে আবারও উৎকণ্ঠা

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৪, ০৪:১৪ পিএম
  • জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ২৫৮৯ জন আক্রান্ত
  • পুরুষদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি
  • চলতি বছর মৃত্যুহার অন্য যে
  • কোনো বছরের চেয়ে বেশি

ডেঙ্গু চিকিৎসায় কোনো সংকট নেই। রোগটি নিয়ন্ত্রণে এডিস মশক নিধনে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে

 —অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী

দুই যুগ আগে দেশে প্রথম ডেঙ্গু রোগের প্রার্দুভাব দেখা যায়। তারপর থেকে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। সবশেষ গত বছর দেশে ডেঙ্গুতে রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে। জনস্বাস্থ্যবিদরা আশঙ্কা করছিলেন ভবিষ্যতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে এমন আশঙ্কা উৎকণ্ঠায় রূপ নিয়েছে চলতি বছরের জুলাই মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা থেকে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর গতকাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছয় হাজার ৩২০ জন। এ সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের। মোট আক্রান্ত ও মৃত্যুর মধ্যে শুধুমাত্র জুলাই মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৫৮৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে আক্রান্ত ছিল এক হাজার ৫৫ জন মৃত্যু ১৪ জন। ফেব্রুয়ারি মাসে আক্রান্ত ছিল ৩৯৯ জন মৃত্যু তিনজন। মার্চ মাসে আক্রান্ত ছিল ৩১১ জন মৃত্যু পাঁচজন। এপ্রিল মাসে আক্রান্ত ছিল ৫০৪ জন মৃত্যু দুজন। মে মাসে আক্রান্ত ছিল ৬৪৪ জন মৃত্যু ছিল ১২ জন। জুন মাসে আক্রান্ত ছিল ৭৯৮ জন মৃত্যু ছিল আটজন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৬১ দশমিক ১ শতাংশ এবং ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ। মোট মৃত্যুর মধ্যে ২৮ জন পুরুষ এবং ২৮ জন নারী। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে যত রোগী আক্রান্ত হয়েছেন, তা গত বছরের এ সময়ের চেয়ে প্রায় সাত ভাগের এক ভাগ। 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে সন্তুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। কারণ বর্ষার মূল মৌসুমের পর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার নজির আছে। এ ছাড়া এবার ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার অন্য যে কোনো বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। উৎকণ্ঠার সাথে আশার কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞরা।তার কারণ গত বছরের তুলনায় চলতি বছর আক্রান্তের হার কম। 

তারা বলছেন, ডেঙ্গু রোগের চারটি ধরন আছে। সেগুলো হলো ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) গবেষণায় দেখা যায়, গত বছর মোট আক্রান্তের ৭৪ শতাংশই ডেঙ্গুর ডেন-২ ধরনে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরপর ছিল ডেন-১-এ ২০ শতাংশ, ডেন-৩-এ ৬ শতাংশ। ওই গবেষণায় বলা হয়েছিল, যদি একই ধরনে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসতে পারে। এ বছর সংক্রমণ কম হলেও মৃত্যুহার গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ। এ বছর রোগী অনুপাতে মৃত্যুহার প্রায় ১ শতাংশ। যেটি গত বছর এ সময়ে ছিল শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ। দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও চিকিৎসাসেবা নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবায় কোনো সংকট নেই। ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য ওষুধপত্র, স্যালাইনসহ হাসপাতালে সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি বলেন, সম্মিলিতভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি যথেষ্ট। তবে এডিস ঠেকাতে না পারলে চিকিৎসা প্রস্তুতি শুধুমাত্র ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না।

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমদ বলেন, ডেঙ্গু আমাদের দেশে স্থায়ী রোগে পরিণত হচ্ছে। তার কারণ হিসেবে আমাদের এডিস মশকনিধন পদ্ধতি খুব বেশি একটা কাছে আসছে না। সাধারণ মশকনিধন পদ্ধতিতে এডিস মশা নিধন সম্ভব নয়। এবার মৃত্যুহার বেশি হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে শঙ্কা ছিল। মানুষ দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতো। এবার সংক্রমণ কম হওয়ায় হাসপাতালে রোগী যাচ্ছে দেরিতে। তাতে মৃত্যু বাড়ছে। এর পাশাপাশি ঢাকার বাইরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণেও মৃত্যু বাড়ছে এবং নতুন এক শঙ্কা সৃষ্টি করেছে।

আরএস