হাতবদলে রয়েই গেছে চাঁদাবাজি

ইয়ামিনুল হাসান আলিফ প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪, ১২:৩০ এএম
  • সরকার পতনের পর ২-৪ দিন বন্ধ ছিল চাঁদাবাজি
  • লাইনম্যান রয়েছে একই, শুধু পরিবর্তন চাঁদাগ্রহীতায়
  • প্রশাসনের নজরদারির দাবি ব্যবসায়ীদের

রাজধানীর ব্যস্ততম তেজগাঁও এলাকার ট্রাকস্ট্যান্ড ঘিরে মাসে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন সদ্য পদ হারানো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আসাদুজ্জামান খান কামালের পৃষ্ঠপোষকতায় ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মগবুল হোসেন, ট্রাক ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সভাপতি মনির তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাশেম গংয়ের নেতৃত্বে দোকান দখল, গাড়ি প্রতি চাঁদা আদায়, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করা হতো এই ট্রাকস্ট্যান্ড ঘিরে।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও বন্ধ হয়নি চাঁদাবাজি। শুধুমাত্র পরিবর্তন হয়েছে মূলহোতা। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পরিবর্তে এখন ট্রাকস্ট্যান্ডের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা। তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের মতোই অবস্থা দেশের সব স্থানে। চাঁদা নেয়ার লাইনম্যান অব্দি একই রয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে কেবল চাঁদা গ্রহীতা বা মূলহোতা। ফুটপাত, গার্মেন্ট, দোকান, স্ট্যান্ডসহ কোথাও বন্ধ নেই চাঁদাবাজি। 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। শুধু চাঁদাবাজদের মুখ বদল হয়েছে। প্রকাশ্যে না হলেও তারা নীরবে চাঁদা তুলছে। মিরপুর-১০-এ আগের মতোই ফুটপাতে বসছে দোকান। তাদের সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যবসায়ীরা আমার সংবাদকে বলেন, এখনো দিতে হয়। লাইনম্যানই চাঁদা তুলছে। শুধুমাত্র আগে চাঁদা নেয়া আওয়ামী লীগের লোকেরা এখন নেই। আগের সরকারের বিরোধীপক্ষ এখন চাঁদা তুলছে। একই অবস্থা কারওয়ান বাজারেও। 

চাঁদাবাজির পাশাপাশি দখলেও এসেছে মুখ পরিবর্তন। সরকার পরিবর্তনের পর কারওয়ান বাজারের টিনশেড পার্ক মার্কেটের সামনে কয়েক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ফুটপাতের অস্থায়ী আড়ত দখলে নেন তেজগাঁও থানার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের এক যুবদল নেতা। একই দিন কয়েকটি মাছের আড়ত দখল করেন পূর্ব সরকারের বিরোধীরা। পরিবহন খাতেও বন্ধ নেই চাঁদাবাজি। এখানেও শুধু পরিবর্তন হয়েছে চাঁদা গ্রহীতা। তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর অনেক দিন এখানে যারা চাঁদা তুলত তারা আত্মগোপনে ছিল। কিন্তু তাদের অনেকেই এখন প্রকাশ্যে এসে চাঁদা দাবি করছে। 

ফার্মগেটে এক লেগুনা চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার সংবাদকে বলেন, আগে যুবলীগ নেতা, কাউন্সিলর, পুলিশ সবাই চাঁদা নিতো। সরকার পতনের পর বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকলেও এখন আবার চাঁদা দিতে হচ্ছে। তবে আগের কারো নামে এখন চাঁদা উঠছে না। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পোশাক খাতেও বন্ধ হয়নি চাঁদাবাজি। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীতে ঝুট বের করা থেকে বিভিন্ন খাতে এখনো দিতে হচ্ছে চাঁদা। আগের চাঁদা গ্রহীতা না থাকলেও বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদা দাবি করছেন অনেকে। ব্যবসায়ীরাও বাধ্য হচ্ছেন চাঁদা দিতে।