কবে-কখন জাতীয় নির্বাচন
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পুরোই পালটে গেছে। ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনায় দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব নেয়ার পর ড. ইউনূস বিএনপি ও জামায়াতসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। ওই বৈঠকগুলোতে ড. ইউনূস রাষ্ট্রপরিচালনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা চান। সে প্রেক্ষিতে দলগুলোও তাকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। ইউনূস বনাম রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে সম্ভাব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা না হলেও বিভিন্ন সভা-সেমিনার-সমাবেশে নির্বাচিত সরকার কর্তৃক দেশ পরিচালনার তাগিদ এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচন কবে-কখন হতে, তার একটা সম্ভাব্য সময় জানার চেষ্টা করছে সরকারের কাছ থেকে।
এদিকে সরকারও এ বিষয়ে নেতিবাচক কোনো মন্তব্য না করে অনেকটা কৌশলী বক্তব্য দিচ্ছে। বলছে, সংস্কারের পরই জাতীয় নির্বাচন। ফলে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে কি-না, ঠিক কত সময় পর নির্বাচন হবে— সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত হতে পারছে না। অর্থাৎ ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে অনেকটা অন্ধকারেই রয়েছে দলগুলো।
জাতীয় নির্বাচন কবে— এমন প্রশ্ন সর্বত্রই। শুধু রাজনৈতিক দলগুলোই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও একই প্রশ্ন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতদিন দেশ পরিচালনা করবে, কবে নির্বাচন হবে, নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে আর কত সময় লাগতে পারে। এদিকে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাগ্যুদ্ধও দেখা দেয়। নতুন (অন্তর্বর্তী) সরকার গঠনের পর আন্দোলনে থাকা বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি তোলে; অন্যদিকে নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যৌক্তিক সময় দেয়ার কথা তোলে জামায়াতে ইসলামী। বলা যায়, রাজপথে থাকা দলগুলোর মধ্যে এই বড় দুটি দল নির্বাচন নিয়ে অনেকটা বিপরীতমুখী অবস্থান নেয়।
সম্প্রতি নির্বাচন নিয়ে দুটি দলের বক্তব্য একই কক্ষপথে বিচরণ করছে। বিএনপির মতো জামায়াতও নির্বাচনের জন্য যৌক্তিক সময়ের ব্যাখ্যা দেবে শিগগিরই। অর্থাৎ জামায়াতে ইসলামী এখন দ্রুত নির্বাচন দেয়ার পক্ষে।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে জামায়াতে ইসলামীর আমির জানিয়েছেন, তার দল শিগগিরই জাতীয় নির্বাচনের জন্য যৌক্তিক সময় নিয়ে একটি রোডম্যাপ জাতির কাছে তুলে ধরবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নানা উদ্যোগের প্রশংসা করে দলটির আমির বলেন, যে সংস্কারগুলো করলে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে, সে সংস্কার করতে ঠিক যেটুকু সময় দরকার, ন্যূনতম সে সময় বর্তমান সরকারকে দেয়া উচিত, কিন্তু বছরের পর বছর নয়। অল্প সময়ের মধ্যেই যৌক্তিক সময়ের (কতদিন) ব্যাখ্যা দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইফ জয়নুল আবেদীন ফারুক মনে করেন, রাষ্ট্রে যেসব সংস্কার দরকার, সেসব সংস্কার বর্তমান সরকার করতে পারে; কিন্তু সংবিধান সংস্কার করতে হলে তো একটি নির্বাচিত সরকার দরকার। সেই নির্বাচিত সরকার পেতে হলে একটি জাতীয় নির্বাচন দেয়ার বিকল্প নেই। দৈনিক আমার সংবাদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কবে হবে— সে বিষয়ে একটি সময়সীমা থাকা উচিত। সময়সীমা জানা থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুতি নিতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত হবে সংলাপের আয়োজন করা। আওয়ামী লীগ সরকার হটানোর আন্দোলনে থাকা দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করা জরুরি। এটা করা হলে ভোটের প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হবে। তিনি বলেন, আমরা (বিএনপি) আন্দোলনে ছিলাম, রাজপথে ছিলাম, এখন একটি নির্বাচন হলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করবে। জনগণও এটাই চায়।
নির্বাচন বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন জাতীয় নির্বাচন কবে হবে, তার একটি রোডম্যাপ থাকা জরুরি; তবে এই রোডম্যাপ তৈরি করবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করবে, যাতে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে কোনো সংশয় না থাকে। আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার।