দুর্নীতি-অনিয়মের কারণে দুর্বল হয়ে পড়া বেসরকারি খাতের পাঁচ ব্যাংক শিগগিরই তারল্য সহযোগিতা পাচ্ছে না। যদিও গভর্নরের মধ্যস্থতায় দুর্বল ব্যাংকগুলোকে অর্থ ধার দিতে রাজি হয়েছে সবল ১০ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। তবে তাতে শর্ত জুড়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। যে কারণে এখনই সেই ঋণ পাচ্ছে না আবেদনকারী ব্যাংকগুলো। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, দুর্বল ব্যাংকগুলোর ঋণে নিশ্চয়তা দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দুর্বল ব্যাংককে অর্থ ধার দেয়ার বিষয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে সবল ব্যাংকের এমডিদের এক বৈঠ?কে ধার দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা জানিয়েছেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয়ার টাকা সবল ব্যাংকগুলো ফেরত চাইলেই গ্যারান্টার হিসেবে ওই টাকা তিন কার্যদিবসের মধ্যে ফেরত দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোন ব্যাংককে কত টাকার তারল্য সহায়তা দেয়া হবে, সেটিও ঠিক করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক্ষেত্রে দুই ব্যাংকের সমঝোতার ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে। কোনো ব্যাংক ঋণ দেয়ার জন্য কোনো টাকা নিতে পারবে না।
দুর্বল ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত তারল্য থাকা যে ১০ ব্যাংক ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে, সেগুলো হলো রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক, বেসরকারি খাতের ব্র্যাক, ইস্টার্ন, দ্য সিটি, শাহ্জালাল ইসলামী, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, পূবালী, ঢাকা, ডাচ্-বাংলা এবং ব্যাংক এশিয়া।
ইতোমধ্যে তারল্য সহায়তা পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে পাঁচটি ব্যাংক। এগুলো হচ্ছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। তবে ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক সহায়তা চাইলেও বাংলাদেশ ব্যাংক এ দুটি ব্যাংকের সঙ্গে এখনো চুক্তিবদ্ধ হয়নি।
এদিকে ঋণ সহায়তার বিষয়ে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন আমার সংবাদকে বলেন, আমরা আশা করছি আগামী সাপ্তাহে সিদ্ধান্ত পাওয়া যেতে পারে। তবে তার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক তাদের পরিচালনা পর্ষদে বিষয়টি পাস করাতে হবে। তারপরই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ধার চাওয়া ব্যাংকগুলো তারল্য সহযোগিতা পাবে। এতে হয়তো কিছুটা সময় লাগতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানায়, সংকটে থাকা ব্যাংকের কোনো কোনোটি পাঁচ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত তার?ল্য সহায়তা চেয়েছে। প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে নগদ টাকার সংকটে শরিয়ািভত্তিক পরিচালিত বেশ কিছু ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে সংকটে আছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরাসরি টাকা ছাপিয়ে সহায়তার বিকল্প হিসেবে ব্যাংকের ডিমান্ড প্রমিসরি (ডিপি) নোটের বপরীতে অন্য ব্যাংক থেকে ধারের ব্যবস্থা করে দেয়ার ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই ঘোষণার পর এসব ব্যাংক ঋণ পেতে আবেদন করেছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের আগে ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি শরিয়ািভত্তিক ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে ধার দিয়ে আসছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর টাকা ছাপিয়ে ব্যাংককে ধার দেয়া ব্যবস্থা বন্ধ করে দেন। একইসঙ্গে দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেন। এ সময় ব্যাংকগুলো নগদ টাকার তীব্র সংকট পড়ে। সংকট উত্তরণে ব্যাংকগুলো বিকল্প উপায়ে সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা জানান, আপদকালীন সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে বিশেষ ধার দিতে একটি নীতিমালার খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। ওই নীতিমালার আলোকে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো অন্য ব্যাংক থেকে তিন মাস, ছয় মাস কিংবা এক বছরের জন্য বিশেষ নগদ অর্থের সহায়তা পাবে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রথমে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আবেদন করতে হবে। এতে ব্যাংকের আমানত, ঋণ, খেলাপি ঋণসহ বিভিন্ন বিষয় যুক্ত করে দেবে।
সূত্র জানায়, গ্যারান্টির বিপরীতে টাকা নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে। একইসঙ্গে ঋণ আদায় জোরদার করতে হবে। এছাড়া আয় অব্যাহত রাখতে ক্ষুদ্রঋণ দেয়া যাবে। তবে কোনো অবস্থায় বড় ঋণ দিতে পারবে না ধার নেয়া এসব ব্যাংক।