বড় সহায়তার প্রতিশ্রুতি

জাতিসংঘে ড. মুহাম্মদ ইউনূস

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪, ১২:০৩ এএম
  • বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক খাতে সহায়তার ঘোষণা চীনের
  • জ্বালানি ও বাণিজ্য সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস নেপালের
  • স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে সহায়তা দেবে গেটস ফাউন্ডেশন
  • আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে সার্ক পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ অধিবেশেনের ফাঁকে বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ও সংস্থাপ্রধানের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এসব বৈঠকে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য সহায়তার আশ্বাস দেয়। বিশেষ করে চীন, নেপাল, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়। একইভাবে বিশ্বব্যাংক ঋণ সুবিধা এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দাতব্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে সহায়তার আশ্বাস দেয়। 

বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক খাতে সহায়তার ঘোষণা চীনের : বাংলাদেশে বিনিয়োগে চীনের সোলার প্যানেল প্রস্তুতকারকরা আগ্রহী বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তিনি বলেন, তার দেশ বাংলাদেশে সোলার প্যানেলে বিনিয়োগ করতে চায় এবং বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করার মাধ্যমে কৌশলগত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে আগ্রহী। গত বুধবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশেনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন বলে বাসস জানিয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, চীনের সোলার কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বড় আকারে বিনিয়োগ করতে পারে, যা অনেক ধনী দেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারমূলক বাজার প্রবেশাধিকারের সুবিধা পাবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, অধ্যাপক ইউনূসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে চীনা সোলার প্যানেল প্রস্তুতকারকরা বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনে আগ্রহী। চীনা সরকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখছে। 

গত মাসে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি চীনের সোলার প্যানেল প্রস্তুতকারকদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। শফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে সোলার প্যানেলে চীনা বিনিয়োগ এলে সেটি আমাদের বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মাইলফলক হবে।’ অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সোলার কোম্পানি ছাড়াও অন্যান্য চীনা প্রস্তুতকারক তাদের কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তর করতে পারে। চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান উপদেষ্টা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ‘নতুন অধ্যায়’ সূচনার আহ্বান জানান। তিনি দুই দেশের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বৃদ্ধিরও আহ্বান জানান।

জ্বালানি ও বাণিজ্য সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস নেপালের : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে জ্বালানি, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করেন। গত বুধবার স্থানীয় সময় বিকালে এখানে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনের ফাঁকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে উভয় নেতা এ সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেন। একইসঙ্গে দুই নেতা বাংলাদেশে নেপালি শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির কথা স্বীকার করেন। 

নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে আমি আনন্দিত। তার সঙ্গে আমার নেপাল-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় জ্বালানি ও ট্রানজিট সহযোগিতা, পর্যটন, সাংস্কৃতিক বিনিময়, শিক্ষাগত সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক ফোরামে সহযোগিতার ওপর নজর দেয়া হয়।’ বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অধ্যাপক ইউনূস ও কে পি শর্মা ওলির মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। 

তিনি বলেন, বৈঠকে তারা ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি ও বাণিজ্য সহযোগিতা কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করেন। প্রেস সচিব বলেন, নেপালের জলবিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত রয়েছে এবং তারা দু-তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জলবিদ্যুৎ রপ্তানিতে সক্ষম হবে। বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি দীর্ঘ ও গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং দুই প্রতিবেশী দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। অনেক নেপালি শিক্ষার্থী প্রতি বছর বাংলাদেশে পড়াশোনা করতে আসেন উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, অধ্যাপক ইউনূস এবং ওলি বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে জ্বালানি, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সম্ভবত নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে।

স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে সহায়তা দেবে গেটস ফাউন্ডেশন
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দাতব্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে আরও সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় গত ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গেটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক সুজমান সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে তাদের সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ‘প্রধান উপদেষ্টা গেটস ফাউন্ডেশনকে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য খাতে প্রতিষ্ঠানটির সহযোগিতা বাড়ানোর অনুরোধ করেন। এতে মার্ক সুজমান ইতিবাচক সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর বিষয়ে আগ্রহ দেখান।’ 

তিনি বলেন, গেটস ফাউন্ডেশন বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য খাতে আর্থিক সহায়তা ও দাতব্য কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে। বাংলাদেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং আইসিডিডিআর,বিতে প্রতিষ্ঠানটি যুক্ত রয়েছে। প্রেস সচিব বলেন, গেটস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে তাদের সহায়তা বাড়ানোর যে আগ্রহ দেখিয়েছে, তার অর্থ হলো— বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরি। সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি অন্যান্য খাতে সামাজিক ব্যবসা পরিচালনারও আহ্বান জানান।

আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে সার্ক পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ
দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতার সর্ববৃহৎ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত সার্ক পুনরুজ্জীবনে পাকিস্তানের সহায়তা চেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় বুধবার সকালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি পাকিস্তান সরকারের প্রতি এই সহায়তা কামনা করেন। সাক্ষাৎকালে দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে সার্ক পুনরুজ্জীবন একটি ভালো উপায় হতে পারে এবং এ বিষয়ে তিনি পাকিস্তানের সমর্থন কামনা করেন। শেহবাজ শরিফ ড. ইউনূসের এমন উদ্যোগের প্রতি সমর্থন প্রদানের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যেন আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মটিকে ধাপে ধাপে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয়, সে প্রস্তাবও দেন।

ড. ইউনূসকে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের শুভেচ্ছা
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সাক্ষাৎ করেন তারা। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় উভয় নেতা কুশল বিনিময় করেন।