ইমিগ্রেশন নয়, অবৈধভাবে যাওয়ায় তথ্য-প্রমাণ নেই : এসবি প্রধান
উদাসীনতা বা গাফিলতি নেই, দায়িত্ব ও কর্মপরিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ কাজ করছি : মুখপাত্র, র্যাব
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে দেশ ছাড়ছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে হেভিওয়েটরাও রয়েছেন। যারা মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে সীমান্তবর্তী চিহ্নিত দালাল চক্রের মাধ্যমে দেশ ছাড়ছেন অনায়াসে। অথচ এসব তথ্য জানেই না পুলিশ। পুলিশ বলছে, ইমিগ্রেশন পার হলেই কেবল তথ্য থাকবে। অবৈধভাবে সীমান্ত পার হলে সেক্ষেত্রে তথ্য-প্রমাণ থাকে না। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ আওয়ামী লীগের আরও একাধিক এমপিকে ভারতের কলকাতার একটি পার্কে দেখা যাওয়ার পর থেকেই মূলত সীমান্তে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। সীমান্তের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারণ অবৈধভাবে সীমান্ত পার হতে সহযোগিতা করছে দালাল চক্র। যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বর্তমান সময়ে এসব ঘটনায় আলোচনার ঝড় বইছে, সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেয়েও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালাল চক্র।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে নিয়েও সৃষ্টি হয়েছিল ধূম্রজাল। সরকার পতনের পর যাকে গ্রেপ্তারের কথা বলা হলেও পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, দুবাই হয়ে বেলজিয়াম পাড়ি জমিয়েছেন আওয়ামী সরকারের ক্ষমতাধর মন্ত্রীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাবেক এই মন্ত্রী। কবে, কখন, কীভাবে দেশ ছেড়েছেন হাছান মাহমুদ এ নিয়ে কারো কাছেই নেই সুনির্দিষ্ট তথ্য। কিংবা তার দেশ ছাড়ার তথ্যও কতটুকু সঠিক, সে তথ্যও এখন পর্যন্ত জানাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নারায়ণগঞ্জের সর্বোচ্চ প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। যিনি আন্দোলনের একেবারে শেষ দিকেও দেশে ছিলেন, এমনকি তা প্রমাণ করতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে দেশে রয়েছেন উল্লেখ করে নিজের অবস্থানের কথাও জানান দেন। তাকেও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতের দিল্লিতে নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজারে দেখা গেছে বলে আলোচনার ঝড় উঠে। যার সত্যতা নিশ্চিত নয়। তবে তিনি দেশে আছেন কিনা সে তথ্যও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। এরই মধ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে হাসিনা সরকারের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মন্ত্রী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
শুধু তিনিই নন, আওয়ামী সরকারের ক্ষমতাকালে দাপট দেখানো আরও অসংখ্য নেতাকর্মী, যাদের কেউ কেউ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি ছুড়েছেন কিংবা গুলির নির্দেশ দিয়েছেন, তারাও পালিয়েছেন বিভিন্ন দেশে। কেউ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শেষ দিকে, কেউ আবার পতনের পর। তবে পতনের পর সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বারবার কড়াকড়ি অবস্থানের কথা জানালেও কার্যত চুনোপুটি কিংবা দু-একজন নেতা ছাড়া কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কাউকে আটকাতে পারেনি। তাদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান উল্লেখযোগ্য একজন। শুধু আসাদুজ্জামানই নয়, তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল, তার স্ত্রী অপু উকিলসহ পুরান ঢাকার এমপি হাজী সেলিমের ছেলেকেও দেখা গেছে কলকাতার একটি ইকো পার্কে। দেশের বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে এমন সংবাদ প্রচারের পর থেকেই এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে শোরগোল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমান্তে এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সব সংস্থার যে ভূমিকা তার চেয়েও বেশি সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িতরা। দুই দেশের সীমান্তবর্তী দালালদের ভূমিকাও সক্রিয়। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ইমিগ্রেশন এড়িয়ে দুর্গম সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। যে কারণে তাদের দেশ ছাড়ার তথ্যও জানতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে আইনশঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সাথে মানবপাচারকারী কিংবা দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার কথা বলছেন তারা।
পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান অতিরিক্ত আইজি (চলতি দায়িত্বে) শাহ আলম গতকাল বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ যাদের কথা জানা যাচ্ছে, তারা বৈধভাবে যাননি এটা নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে। জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে ঘটে যাওয়া হত্যার ঘটনায় যে সব মামলা হয়েছে, তার অনেকগুলোতে আসাদুজ্জামান খান কামালও আসামি।
সাবেক সরকারের যেসব মন্ত্রী-এমপিদের খোঁজ মিলছে না তাদের মধ্যে একজন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ইকোপার্কে আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল, তার স্ত্রী অপু উকিলসহ কয়েকজনকে দেখা গেছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল। বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই তৈরি হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, ওই খবর তিনিও শুনেছেন। এ বিষয়ে খোঁজখবর করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন পার হলে আমাদের কাছে প্রমাণ থাকবেই। তাদের ক্ষেত্রে কোনো প্রমাণ নেই। অন্য যারা গেছেন তাদের ব্যাপারেও ‘কোনো তথ্য নেই’ জানিয়ে অতিরিক্ত আইজি শাহ আলম বলেন, অনেকেই অবৈধভাবে গেছেন। কেউ দেশে আছেন। অনেককেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তারও করছে। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরপরই অনেকে ‘বৈধভাবেও’ দেশ পার হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহ আলম। তিনি বলন, ৬-৭ আগস্ট কয়েকজন গেছেন। মূলত সে সময় কোনো নির্দেশনা ছিল না। এদের মধ্যে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল কাহহার আকন্দ রয়েছেন।
কারওয়ান বাজারে র্যাবের সংবাদ সম্মেলনেও আসাদুজ্জামান খান কামালের কলকাতায় অবস্থানের বিষয়টি নজরে আনা হয়। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। এখানে র?্যাবের কোনো ধরনের উদাসীনতা বা গাফিলতির বিষয় নেই। আমাদের যে দায়িত্ব ও কর্মপরিধি, সে অনুযায়ী সর্বোচ্চ কাজ করে যাচ্ছি।