পুঁজিবাজারে সংকট উত্তরণে লক্ষণ নেই

আনোয়ার হোসাইন সোহেল প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৪, ১২:৫৪ এএম

দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত পরিবর্তন করতে হবে 
—ডিএসই চেয়ারম্যান

ওরা আমাকে হয়তো চেনে না
—আইসিবি চেয়ারম্যান

একদিন উত্থান তো পরের দিনই পতন। কখনো দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দর ফুলে ফেঁপে বেড়ে যায়, আবার কখনো ভালো কোম্পানির শেয়ার দরে বড় পতন লক্ষ্য করা যায়। দেশের পুঁজিবাজার নজিরবিহীন দরপতনের এমন রোগে রোগাক্রান্ত। এখানে কোনো অর্থনৈতিক পূর্বাভাসই কাজ করে না। যে কারণে দিনকে দিন পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা প্রকট আকার ধারণ করেছে। 

গত ২৭ অক্টোবর পুঁজিবাজারের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৬৭৪ পয়েন্ট (১১.৯৫%) কমেছে। রোববার সূচক ১৫৯ দশমিক ২০ পয়েন্ট (২.৯১%) পতন হওয়াকে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে মনে করছে বিএসইসিও। সোমবার প্রধানসূচক নেতিবাচক থাকার পর গতকাল মঙ্গলবার পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক বেড়ে ১১৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বাজারের দুরাবস্থার কারণে বিএসইসির ও আইসিবির চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে বিনিয়োগকারীরা মানববন্ধন করেছে। 

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, টানা দরপতনে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন লাখো বিনিয়োগকারী। অথচ পুঁজির নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিএসইসি। তারা বলেন, বিনিয়োগকারীরা রাজপথে থাকতে চান না। কিন্তু সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা পতন ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় বাধ্য হয়ে আমরা রাস্তায় নেমেছি। সোমবার লেনদেনের শুরুর প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬০ পয়েন্টের বেশি কমে যায়। গতকাল সূচকটি প্রায় দেড়শ পয়েন্ট কমে ৫ হাজারের মাইলফলকের নিচে নেমে এসেছিল। তাতে ডিএসইএক্স সূচকটি চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়।
সূচকের বড় উত্থান পতনে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা বাড়ছে। রাজধানীর মতিঝিলে গতকালও বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা। 

মতিঝিল শাপলা চত্বরে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদের পদত্যাগের দাবি জানান। বক্তারা এ সময় বলেন, বিএসইসি চেয়ারম্যান ও আইসিবির চেয়ারম্যান পুঁজিবাজারের গ্যাম্বলিং নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। অনতিবিলম্বে তাদের পদত্যাগ করতে হবে। তবে বিনিয়োগকারীদের দাবি প্রসঙ্গে অধ্যাপক আবু আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘যারা আমার পদত্যাগ চেয়ে মানববন্ধন করেছে এরা হয়তো আমাকে চিনে না। গত কয়েক দশক ধরে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আমি কাজ করেছি। যাতে দেশে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হন। বিনিয়োগকারীদের ওপর আরোপিত ট্যাক্স কমানো, ভালো কোম্পানি বাজারে আনা, দুর্বল ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বড় বড় কোম্পানির জাঙ্গ শেয়ার কেনা হয়েছে। কিন্তু ঋণের একটি টাকাও পরিশোধ করেননি। আইসিবি এখন সেই ঋণের বোঝার কারণে ডুবতে বসেছে। 

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে আইসিবির চেয়ারম্যান আরও বলেন, পুঁজিবাজারে টাকা আনার জন্য আমি ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছি যাতে মার্কেটে সাপোর্ট দেয়া যায়। অত্যন্ত দুঃখজনক হলো সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনও একটা সময় ব্যক্তি স্বার্থের কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ এনেছিল। তবে বিনিয়োগকারীদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই, সরকার পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসইতে ম্যারাথন বৈঠক : পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সাথে মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানিগুলোর বৈঠকে ডিএসইও চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিনের অনিয়ম, দুর্নীতি, বিচারহীনতা, নীতি অসঙ্গতি ও ভুল সিদ্ধান্তে অনিবার্য কারণস্বরূপ বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আজ অত্যন্ত দুর্বল ভিত্তিতে অবস্থান করছে। বর্তমান বাজারে কাঠামোগত সংস্কার ও অনিয়ম দূরীকরণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জসহ সব বাজার মধ্যস্থতাকারীরা একযোগে কাজ করছে। কিন্তু মধ্যবর্তী সময়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে না পারলে কোনো সংস্কারই ফলপ্রসূ হবে না। স্বল্পমেয়াদে বাজারের আস্থা বৃদ্ধির জন্য আমাদের করণীয় কি, সে বিষয়েও একইসঙ্গে কাজ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদে মার্কেটের আস্থা বৃদ্ধির জন্য আমাদের এই মুহূর্তে কি করণীয় আছে, সেগুলো খুঁজে বের করে অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম আরও বলেন, পুঁজিবাজারকে দক্ষ, স্বচ্ছ ও অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বর্তমানে একটি দুর্লভ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত পরিবর্তন, অনিয়ম-দুর্নীতির বিচারের সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগকারী এবং মধ্যস্থতাকারীদের আস্থা অর্জনে বাজার সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। ডিএসই বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে কিছু কাজ স্বল্পমেয়াদি। পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা পুনরুদ্ধার করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। সেটির কয়েকটি ধাপ রয়েছে। একটি হলো নীতিগত সহায়তা বৃদ্ধি করা। এ জন্য আমরা এনবিআরের সাথে যোগাযোগ করে পুঁজিবাজারের স্বার্থে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স, ডিভিডেন্ড ট্যাক্স, টার্নওভার ট্যাক্স হ্রাস করণসহ প্রাসঙ্গিক সমস্যাগুলো দূর করার চেষ্টা করছি। আরেকটি হলো তারল্য সাপোর্ট। এ জন্য আমাদের দেশীয় উৎসের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। ব্যাংক খাতের মতো পুঁজিবাজারের জন্য সরকারের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন। বাজার মধ্যস্থতাকারীরা যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একসাথে একটি প্লাটফর্ম হিসেবে যেতে পারি, তবে আমাদের পলিসিগত সুবিধা পাওয়া সহজ হবে। 

এছাড়াও বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে আমাদের এক প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত গণসংযোগ করতে হবে। তিনি বলেন, ডিএসইর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মার্কেটের প্লেয়ারদের প্লে করতে দিতে হবে। যদি তারা কোনো অনিয়ম করে তবে রেগুলেটর তাদের ধরবে। আমাদের মার্কেটের যে সব সংস্কার প্রয়োজন তা করার জন্য আপনাদের সবাইকে সাথে নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যাব। তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে রিসার্চবেসড কমিউনিকেশন বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় রুলস রেগুলেশন্স পরিবর্তন করার বিষয়ে আমরা কাজ করব। বাজারের উন্নয়নের জন্য সুশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি ডিএসই, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানিজ এবং ডিবিএ একসাথে কাজ করে তাহলে এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। একদিনে সব সমাধান করা সম্ভব হবে না। কিন্তু সততা, দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সবাই একযোগে কাজ করলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাস নতুনভাবে লেখা হবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানিজ-এর প্রতিনিধিরা বাজারের ওপর আস্থা, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়, তারল্য সংকট সমাধানে ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের জন্য মূল ব্যাংক কর্তৃক পুঁজিবাজারে এক্সপোজার বৃদ্ধি, ডাইরেক্ট লিস্টিং রুলস সংস্কার, দ্বৈত কর প্রত্যাহার, সাপোর্ট ফান্ড সৃষ্টি, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহার, ইস্যুয়ার কোম্পানির জন্য প্রণোদনা, ডিএসইর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণ, ফ্লোর প্রাইসের মতো হটকারী সিদ্ধান্ত না নেয়া, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, প্রযুক্ত উন্নয়ন, মানসম্পন্ন আইপিও নিশ্চিতকরণ, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আইপিও কোটা বৃদ্ধি, পাবলিক ইস্যু রুলসের সংস্কার, তালিকাভুক্তির পর কোম্পানির মনিটরিং জোরদারকরণ, মার্জিন রুলস সংস্কার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড রুলসের সংস্কার, গবেষণা জোরদারকরণ, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, অতিরিক্ত তদারকি রহিতকরণ, পলিসিগত প্রতিবন্ধকতা দূরকরণ, এটিবি মার্কেট গতিশীল করাসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ চলমান বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণে শীর্ষ মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানির প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেন। এ সময় ডিএসইর পক্ষে পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, নাহিদ হোসেন, সৈয়দ হাম্মাদুল করীম, মোহাম্মদ ইশহাক মিয়া, শাহনাজ সুলতানা, মো. শাকিল রিজভী, শরীফ আনোয়ার হোসেন, রিচার্ড রি রোজারিও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সাত্বিক আহমেদ শাহ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। 

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট ও আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাজেদা খাতুন, বিএমবির ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. রিয়াদ মতিন, সেকেন্ড ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান, শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান, ভ্যানগার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াকার আহমেদ চৌধুরীসহ আরও অনেকে।কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ নানা ইস্যুতে আমি গণমাধ্যমে সব সময় কথা বলেছি। গত ১৫ বছরে জাঙ্গ শেয়ার কেনার মাধ্যমে আইবিসির ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বড় বড় কোম্পানির জাঙ্গ শেয়ার কেনা হয়েছে। কিন্তু ঋণের একটি টাকাও পরিশোধ করেননি। আইসিবি এখন সেই ঋণের বোঝার কারণে ডুবতে বসেছে। বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে আইসিবির চেয়ারম্যান আরও বলেন, পুঁজিবাজারে টাকা আনার জন্য আমি ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছি যাতে মার্কেটে সাপোর্ট দেয়া যায়। অত্যন্ত দুঃখজনক হলো সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনও একটা সময় ব্যক্তি স্বার্থের কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ এনেছিল। তবে বিনিয়োগকারীদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই, সরকার পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসইতে ম্যারাথন বৈঠক : পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সাথে মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানিগুলোর বৈঠকে ডিএসইও চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিনের অনিয়ম, দুর্নীতি, বিচারহীনতা, নীতি অসঙ্গতি ও ভুল সিদ্ধান্তে অনিবার্য কারণস্বরূপ বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আজ অত্যন্ত দুর্বল ভিত্তিতে অবস্থান করছে। বর্তমান বাজারে কাঠামোগত সংস্কার ও অনিয়ম দূরীকরণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জসহ সব বাজার মধ্যস্থতাকারীরা একযোগে কাজ করছে। কিন্তু মধ্যবর্তী সময়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে না পারলে কোনো সংস্কারই ফলপ্রসূ হবে না। স্বল্পমেয়াদে বাজারের আস্থা বৃদ্ধির জন্য আমাদের করণীয় কি, সে বিষয়েও একইসঙ্গে কাজ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদে মার্কেটের আস্থা বৃদ্ধির জন্য আমাদের এই মুহূর্তে কি করণীয় আছে, সেগুলো খুঁজে বের করে অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম আরও বলেন, পুঁজিবাজারকে দক্ষ, স্বচ্ছ ও অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বর্তমানে একটি দুর্লভ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত পরিবর্তন, অনিয়ম-দুর্নীতির বিচারের সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগকারী এবং মধ্যস্থতাকারীদের আস্থা অর্জনে বাজার সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। ডিএসই বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে কিছু কাজ স্বল্পমেয়াদি। পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা পুনরুদ্ধার করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। সেটির কয়েকটি ধাপ রয়েছে। একটি হলো নীতিগত সহায়তা বৃদ্ধি করা। এ জন্য আমরা এনবিআরের সাথে যোগাযোগ করে পুঁজিবাজারের স্বার্থে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স, ডিভিডেন্ড ট্যাক্স, টার্নওভার ট্যাক্স হ্রাস করণসহ প্রাসঙ্গিক সমস্যাগুলো দূর করার চেষ্টা করছি। আরেকটি হলো তারল্য সাপোর্ট। এ জন্য আমাদের দেশীয় উৎসের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। ব্যাংক খাতের মতো পুঁজিবাজারের জন্য সরকারের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন। বাজার মধ্যস্থতাকারীরা যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একসাথে একটি প্লাটফর্ম হিসেবে যেতে পারি, তবে আমাদের পলিসিগত সুবিধা পাওয়া সহজ হবে। এছাড়াও বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে আমাদের এক প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত গণসংযোগ করতে হবে। 

তিনি বলেন, ডিএসইর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মার্কেটের প্লেয়ারদের প্লে করতে দিতে হবে। যদি তারা কোনো অনিয়ম করে তবে রেগুলেটর তাদের ধরবে। আমাদের মার্কেটের যে সব সংস্কার প্রয়োজন তা করার জন্য আপনাদের সবাইকে সাথে নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যাব। তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে রিসার্চবেসড কমিউনিকেশন বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় রুলস রেগুলেশন্স পরিবর্তন করার বিষয়ে আমরা কাজ করব। বাজারের উন্নয়নের জন্য সুশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি ডিএসই, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানিজ এবং ডিবিএ একসাথে কাজ করে তাহলে এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। একদিনে সব সমাধান করা সম্ভব হবে না। কিন্তু সততা, দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সবাই একযোগে কাজ করলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাস নতুনভাবে লেখা হবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানিজ-এর প্রতিনিধিরা বাজারের ওপর আস্থা, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়, তারল্য সংকট সমাধানে ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের জন্য মূল ব্যাংক কর্তৃক পুঁজিবাজারে এক্সপোজার বৃদ্ধি, ডাইরেক্ট লিস্টিং রুলস সংস্কার, দ্বৈত কর প্রত্যাহার, সাপোর্ট ফান্ড সৃষ্টি, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহার, ইস্যুয়ার কোম্পানির জন্য প্রণোদনা, ডিএসইর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণ, ফ্লোর প্রাইসের মতো হটকারী সিদ্ধান্ত না নেয়া, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, প্রযুক্ত উন্নয়ন, মানসম্পন্ন আইপিও নিশ্চিতকরণ, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আইপিও কোটা বৃদ্ধি, পাবলিক ইস্যু রুলসের সংস্কার, তালিকাভুক্তির পর কোম্পানির মনিটরিং জোরদারকরণ, মার্জিন রুলস সংস্কার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড রুলসের সংস্কার, গবেষণা জোরদারকরণ, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, অতিরিক্ত তদারকি রহিতকরণ, পলিসিগত প্রতিবন্ধকতা দূরকরণ, এটিবি মার্কেট গতিশীল করাসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ চলমান বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণে শীর্ষ মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানির প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেন। এ সময় ডিএসইর পক্ষে পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, নাহিদ হোসেন, সৈয়দ হাম্মাদুল করীম, মোহাম্মদ ইশহাক মিয়া, শাহনাজ সুলতানা, মো. শাকিল রিজভী, শরীফ আনোয়ার হোসেন, রিচার্ড রি রোজারিও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সাত্বিক আহমেদ শাহ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট ও আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাজেদা খাতুন, বিএমবির ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. রিয়াদ মতিন, সেকেন্ড ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান, শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান, ভ্যানগার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াকার আহমেদ চৌধুরীসহ আরও অনেকে।