এজেন্ট ব্যাংকিং চাঙ্গা

তিন মাসে বাড়ল ১০ লাখ গ্রাহক

আনোয়ার হোসাইন সোহেল প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৪, ১১:১৫ পিএম
  • তিন মাসে হিসাব বেড়েছে ১০ লাখ ১৭ হাজার
  • আমানত বেড়েছে ৪,১৮১ কোটি টাকা
  • ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২,০৭৮ কোটি টাকা

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে প্রচলিত ব্যাংকের চেয়ে সহজ ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছেন গ্রাহক। এ জন্য মানুষের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রতি আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলছে। এমনকি টাকা জমা দেয়া ও উত্তোলন করার জন্য গৎবাঁধা নির্ধারিত সময়ে ব্যাংকে হাজির হওয়া থেকে নিস্তার দিয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং। মূলত হাতের নাগালেই মিলছে ব্যাংকিং সেবা। সবমিলে বিভিন্ন ব্যাংকের এজেন্ট ও আউটলুট থেকে লেনদেন, ঋণ সুবিধা, রেমিট্যান্স উত্তোলনের সেবা পাচ্ছেন গ্রাহকরা। চলতি বছরের জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সব সূচকই উর্ধ্বমুখী দেখা গেছে। আর তিন মাসে গ্রাহক বেড়েছে অন্তত ১০ লাখ। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মোট হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল দুই কোটি ২০ লাখ ১৪ হাজার ৬১০টি। আর তিন মাস পর অর্থাৎ জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মোট হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৩০ লাখ ৩২ হাজার ১৫টি। সে হিসাবে তিন মাসে হিসাব বেড়েছে ১০ লাখ ১৭ হাজার ৪০৫টি। আর গত মার্চ শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানতের পরিমাণ ছিল ৩৫ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। জুন শেষে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত বেড়েছে চার হাজার ১৮১ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। 

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর নতুন নতুন সেবা বিস্তারের কারণে ব্যাংকিং সিস্টেমে গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে। আর এজেন্ট ব্যাংকিং প্রসারের কারণ, গ্রামীণপর্যায়ে ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রান্তিকপর্যায়ে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি করতে পেরছে। সুবিধা বিবেচনায় সামনে যত সময় যাবে, এজেন্ট ব্যাংকিং ততই জনপ্রিয় হবে। এখন গ্রামীণ পর্যায়ে বায়োমেট্রিক মডেলে ব্যাংকিং সেবা দেয়া হচ্ছে। লেনদেন হলেই মেসেজ সার্ভিস রয়েছে। যার কারণে অনিয়ম হওয়ার আশঙ্কা কমেছে। ফলে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণে উৎসাহ বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় ঋণ বিতরণের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছিল আট হাজার ৮৭২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের জুন শেষে ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১৫০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে ঋণ বিতরণের স্থিতি বেড়েছে দুই হাজার ৭৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা বা ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ। 

প্রতিবেদন বলছে, এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকের বড় অংশই গ্রামের মানুষ। এ সময়ে গ্রামে গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৯৮ লাখ ১২ হাজার ২৯৫ জন আর শহরের গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ১৯ হাজার ৭২০ জন। এছাড়া, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাবধারীদের মধ্যে নারী গ্রাহকের সংখ্যা এখন এক কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার ১১ জন আর পুরুষ গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ১২ লাখ ৩৬ হাজার ২৮ জন। এর বাইরে অন্যান্য গ্রাহক রয়েছে তিন লাখ ৫৫ হাজার ৯৭৬ জন।

ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, আমাদের দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী এখনো ব্যাংক সেবার বাইরে। তাদের এই সেবার আওতায় আনতে এজেন্ট ব্যাংকিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এর মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেক বেড়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে এজেন্ট ব্যাংকিং আগামী দিনে আরও বড় ভূমিকা রাখবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ৪৮ হাজার ২৯২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের জুন শেষে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৫০৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে লেনদেন বেড়েছে ২১৩ কোটি চার লাখ টাকা। একইভাবে চলতি বছরের মার্চ শেষে এজেন্টের সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৮৩৫টি। আর জুন শেষে এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯৯১টি। সে হিসাবে তিন মাসে এজেন্টের সংখ্যা বেড়েছে ১৫৬টি। তবে মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় জুন প্রান্তিকে আউটলেটের সংখ্যা কমেছে। মার্চ শেষে আউটলেটের সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৬১৩টি। আর জুন শেষে আউটলেটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৪৭৩টি। সেই তিন মাসে আউটলেটের সংখ্যা কমেছে ১৪০টি।

জানা গেছে, দেশের সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতেই ২০১৪ সালে চালু হয় এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম। যদিও ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করা হয়। আর ২০১৪ সালে প্রথম এ সেবা চালু করে ব্যাংক এশিয়া। এখন পর্যন্ত সেরা তিনে অবস্থান করছে ব্যাংক এশিয়া, ইসলামী ব্যাংক ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক।