শুল্ক ছাড়েও চড়া চাল-আলু-পেঁয়াজের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৪, ১১:০৬ পিএম

সবজির বাজারে স্বস্তি \ অপরিবর্তিত মুরগি-গরু

বাজারে স্বস্তি ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও ‘দামের উত্তাপ’ এখনও আগের মতোই। ভোক্তাদের অভিযোগ— চাল, পেঁয়াজ ও আলুতে শুল্ক প্রত্যাহার করা হলেও তার প্রভাব নেই বাজারে। এসব তাদেরকে বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের ভাষ্য, যেমন দামে তারা পণ্য কিনছেন, ঠিক সে অনুপাতেই বিক্রি করছেন।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আলু ও পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় আরও বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। রসুনের বাজারও সুবিধার নয়। আমদানি রসুন কেজি প্রতি ২৪০ টাকা বিক্রি হলেও দেশি রসুনের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়।

শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় বাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। মাছের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও দাম কমেছে মুরগির। গরুর মাংসের দাম অপরিবর্তিতই রয়েছে। এদিকে সবজির মধ্যে আলু চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলু না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন বিক্রেতারা। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলুর দাম গত সপ্তাহের চেয়ে পাঁচ টাকা এবং দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছে, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ কেজি টাকা দরে। আলুর এ দাম চলতি বছরে সর্বোচ্চ। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি আলু ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

তার আগের সপ্তাহে আরো পাঁচ টাকা কম ছিল। অর্থাৎ দুই সপ্তাহ আগে আলুর দাম ছিল ৬০ টাকার মধ্যে। নপাইকারি বিক্রেতারা জানান, এখন পাইকারিতেই প্রতি কেজি আলু ৬২-৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা এক সপ্তাহ আগে ৫৮-৬০ টাকা ছিল।

এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। তবে সিম ও কাঁচা মরিচ কেজিতে ৪০ টাকা কমে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখি প্রতি কেজি ৭০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ফুলকপি ৩০ থেকে ৫০ টাকা পিস, বাঁধাকপি ছোট সাইজের ৪০ টাকা পিস, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা ও জলপাই ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।  

বাজার ঘুরে আরও দেখা যায়, লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনেপাতা কেজিতে ১০০ টাকা কমে ২০০ টাকা, কাঁকলা হালি ৫০ টাকা, চালকুমড়া ৬০ টাকা পিস ও মিষ্টিকুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া লালশাক ১৫ টাকা আঁটি, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ২০ টাকা, কলমিশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা ও ডাঁটাশাক ৩০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।  

বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ ১৬০ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১২০ টাকা, কাঁচা আদা ১২০ টাকা, পুরান আদা ২৮০ টাকা, রসুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২৪০ টাকা, নতুন আলু ১২০ টাকা, বগুড়ার আলু ১০০ টাকা ও পুরান আলু ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, হাঁসের ডিম ২৩০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে বাজারে কমেছে সব ধরনের মুরগির দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি কক মুরগি কেজিতে ৪০ টাকা কমে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩০০ টাকা ও সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও খাসির মাংস এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৫০০ গ্রামের ইলিশ এক হাজার টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের এক হাজার ৫০০ টাকা, এক কেজি ওজনের এক হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে প্রতি কেজি শিং মাছ (চাষের, আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি, টেংরা এক হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা, পাঁচমিশালি মাছ ২২০ টাকা, রূপচাঁদা এক হাজার ২০০ টাকা, বাইম এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা ও কোরাল মাছ ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।