দুর্বল ব্যাংকগুলোতে ‘গ্যারান্টি সহায়তা’ যথেষ্ট নয়

আস্থা অর্জনই সমাধান

আনোয়ার হোসাইন সোহেল প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২৪, ১১:৪১ পিএম

খণ্ডকালীন সহায়তা বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি সহায়তার মাধ্যমে কোনো দুর্বল ব্যাংকের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়; এ জন্য প্রয়োজন দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই নীতি প্রণয়ন এবং ঋণ আদায়ের নতুন কৌশল অবলম্বন করা। এমনটি জানিয়েছেন ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।   

তাদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি সহায়তা দিয়ে যে কোনো ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। সহায়তার পাশাপাশি ঋণ আদায়ে ব্যাংকের নিজস্ব কৌশল থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা। কিছু কিছু ব্যাংক ঋণ আদায়ে খুব ভালো করছে। তাদের মতো সবাইকেই উদ্যোগী হতে হবে। শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তার আশায় বসে থাকলে চলবে না।

সম্প্রতি তারল্য ঘাটতি মেটাতে দুর্বল সাত ব্যাংকে ছয় হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার সহায়তা দিয়েছে সবল ৯টি ব্যাংক। তবে এসব ব্যাংক থেকে চাওয়া হয়েছিল ১১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে সবচেয়ে বেশি তারল্য সহায়তা পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক। সাতটি ব্যাংক থেকে তারা পেয়েছে দুই হাজার ৯৫ কোটি টাকা। এসব ব্যাংককে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে হলে ঋণ আদায়ে নিজস্ব কৌশলও অবলম্বন করতে হবে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানায়, সহায়তা পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো— সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এক হাজার ১৭৫ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এক হাজার কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক ৯২০ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৭০০ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংক ৪০০ কোটি এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ২৯৫ কোটি টাকা পেয়েছে। যে ব্যাংকগুলো তারল্য সহায়তা দিয়েছে সেগুলো হলো— সোনালী, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ইস্টার্ন, শাহজালাল ইসলামী, সিটি, ব্র্যাক, পূবালী, ঢাকা ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, দুর্বল ব্যাংকে তারল্য সহায়তা দেয়া হবে। তবে আমানতকারীদের স্বার্থ সবার আগে বিবেচনা করা হবে। গত ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ১৭টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে সভা করেন। সেই সভায় দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা অব্যাহত রাখতে শক্তিশালী ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ করেন তিনি। ক্ষমতার পালাবদলের পর ইসলামি ধারার শরিয়ািভত্তিক ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ দেয়া বন্ধ করে দিলে ব্যাংকগুলোতে শুরু হয় তারল্য সংকট। পরিস্থিতি এমন হয় যে, গ্রাহকরা ২০ হাজার টাকাই তুলতে পারছিলেন না। এ পরিস্থিতিতে গভর্নর সবল ব্যাংক থেকে দুর্বল ব্যাংকের নগদ টাকা ঋণ নেয়ার বিষয়টি অনুমোদন করেন। এরপর সবল ১০ ব্যাংক তারল্য সহায়তা দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে সম্মতি দেয়।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দুর্বল ১২টি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। ওই সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি)  প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি। তবে বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা। 

এর আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তারল্য সহায়তা নেয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে কয়েকটি ইতোমধ্যে বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের সব সময় দুর্বল ভাবলে চলবে না। তারা দুর্বলতা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি সহায়তার মাধ্যমে তারল্য দুর্বলতা কাটানো সম্ভব কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক আব্দুল আউয়াল সরকার আমার সংবাদকে বলেন, ব্যাংকগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাওয়ার কারণেই ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এটার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাময়িক যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। তবে এটা স্থায়ী কোনো পন্থা নয়; এজন্য শরিয়ািভত্তিক ব্যাংকগুলোতে প্রয়োজন ছিল দেশবরেণ্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় এমন কোনো আলেমকে বসানো। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক শরিয়ািভত্তিক ব্যাংকগুলোর বোর্ড সংস্কার করলেও সেখানে সর্বজন গ্রহণযোগ্য কোনো আলেম নেই। যারা ব্যাংক লুটপাটের সময় চুপ করে বসে ছিলেন; এখনো তারাই আছেন। যারা লুটপাটের সময় ন্যূনতম প্রতিবাদটুকুও করেননি। তাই এভাবে গ্যারান্টির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিয়ে সাময়িকভাবে তারল্য প্রবাহ বাড়ানো গেলেও আস্থার সংকট দূর হবে না।