লক্ষ্যমাত্রা বাড়লেও কমেছে বিতরণ

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ১২:০০ এএম
  • ঋণ বিতরণ কমেছে ২১.৪৮ 
  • আদায় হয়েছে ১২.৫৫
  • লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ৮.৫৭ শতাংশ

লক্ষ্যমাত্রা বাড়লেও কমেছে কৃষিঋণ বিতরণের পরিমাণ। তবে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর চার মাসে কৃষিঋণ বিরতণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। তবে একই সময়ে ঋণ আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যার কারণে বিদায়ী বছরের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে চিত্র পরিবর্তন হয়েছে। 

২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা। যা আগের বছরের  চেয়ে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একই সময়ে বিতরণ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০২৪ অর্থবছরের চেয়ে ঋণ বিতরণের প্রকৃত লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ২ দশমিক ২৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ৯ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। যা ২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১১ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের একই তুলনায় কৃষিঋণ বিতরণ কমে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। 

ঋণ বিতরণ কমলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো একই সময়ে কৃষিঋণ আদায় বাড়িয়েছে। জুলাই-অক্টোবর ২০২৪ এ কৃষিঋণ আদায় হয়েছে ১২ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ১০ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল। অর্থাৎ শেষ চার মাসে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ আদায় বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে, সমস্ত সিডিউল ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণের অবশিষ্ট ব্যালেন্স (সুদসহ) দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৮৪ কোটি টাকা, যা অক্টোবর ২০২৪ শেষে ৫৪ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। যা আগের বছরে তুলনায় শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়েছে। 

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জুলাই বিপ্লব সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাংকগুলোতে মানুষের আনাগোনা কমে যায়। এ সময় ব্যাংকে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে এক হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। তবে ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি পায়। আগস্টে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে দুই হাজার ৮০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে দুই হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা, নভেম্বরে দুই হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা।  

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের শেষে, সব নির্ধারিত ব্যাংকগুলোর কৃষি ঋণের বকেয়ার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা। যা ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে আট হাজার ৫২২ কোটি টাকা। যা বিদায়ী বছরের তুলনায় বকেয়া বেড়েছে ৪০.০২ শতাংশ। এই ঋণ পরিশোধের সময় বৃদ্ধি পূর্ববর্তী মাসগুলোর তুলনায় ব্যতিক্রমী নয়, কারণ নিয়মিত ঋণের তুলনায় বকেয়া ঋণ পুনরুদ্ধারের হার কম ছিল। বিশেষভাবে, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে বকেয়া পরিমাণ বেশি হয়েছে, কারণ ২০২৪ সালের জুলাই-অক্টোবর মাসে তাদের পুনরুদ্ধার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমে গেছে।

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, কৃষি উৎপাদন এবং খাদ্যনিরাপত্তা বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিবছর কৃষিঋণ নীতিমালা ঘোষণা করে। সেখানে কৃষকদের জন্য একটা ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে। ব্যাংকগুলোকে কৃষিঋণ বিতরণে বাধ্য করার নানা বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু তারা বিভিন্ন অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে কৃষিঋণ বিতরণে অনীহা দেখায়। এমনকি কৃষকের ঋণ বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দেয়। মূলত ছোট গ্রাহককে ঋণ বিতরণ, মনিটরিং এবং আদায়ে ঝামেলা মনে করায় অনেক ব্যাংক ঋণ দিতে অনীহা প্রকাশ করে। এতে কৃষক ঋণ পান না। আর ঋণ না পাওয়ায় কৃষিকাজ ছেড়ে দিচ্ছে কৃষক। এতে উৎপাদন কমে যাচ্ছে; যা পণ্যের জোগানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে উসকে যাচ্ছে মূল্যস্ফীতি।

কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে আবাদযোগ্য পতিত জমির পরিমাণ দুই লাখ ২৫ হাজার ৫৫১ হেক্টর। চাষাবাদের আওতায় এসেছে ৫৫ হাজার ৫৬ হেক্টর জমি। আবাদযোগ্য পতিত জমির মধ্যে এক লাখ ৭০ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমি এখনো পড়ে আছে।