এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হলেও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর এক অঙ্কের অভিশাপ থেকে বের হতে পারছে না। গত পাঁচ মাসে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংকটির শেয়ার দর ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে। ডিএসইর সবশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গতকাল বুধবার ব্যাংক কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দর ছিলো ৯ টাকা, যা ফেসভ্যালু থেকে এখনো ১ টাকা কম। এদিন প্রতিটি শেয়ারের দর বেড়েছে শূন্য দশমিক ২ পয়সা। বুধবার দিনের শুরুতে প্রতিটি শেয়ারের দর ছিল ৮ দশমিক ৭০ পয়সা। আলোচ্য সময়ে প্রতিটি শেয়ারের দর বেড়েছে ২ দশমিক ২৭ শতাংশ। একই দিন লেনদেন হয়েছে এক কোটি ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকার শেয়ার। আলোচ্য সময়ে হাত বদল হয়েছে ২০২টি শেয়ার।
এসআইবিএলের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের জন্য আগামীতে কোনো সুখবর আছে কিনা জানতে চাইলে ব্যাংকের কোম্পানি সেক্রেটারি নাজমুল আহসান বলেন, আমার কাছে আপাতত কোনো সুখবর নেই। বার্ষিক প্রতিবেদন ছাড়া কোনো সুখবর দিতে পারছি না।
এদিকে ব্যাংকের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা সামিয়া তাহসিন আমার সংবাদকে বলেন, কয়েক মাস ধরে এসআইবিএল ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে রাইট অফ ও ওভারডিউ থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা আদায় করেছি। ২৪ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করেছি। তাছাড়া বর্তমানে আমাদের সবগুলো শাখা ও এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রাহক সেবা আরও বৃদ্ধির জন্য নতুন আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গত ২৫ আগস্ট এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়ার পর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম পদত্যাগ করেছেন। বর্তমানে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ড. এম. সাদেকুর ইসলাম আর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নাজমুস সাদাত।
কবে থেকে নতুন এমডি পেতে যাচ্ছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক জানতে চাইলে ব্যাংকটির মুখপাত্র সামিয়া জানান, আগামী মাসের মধ্যে নতুন এমডি দায়িত্ব নেবেন।
২০১৭ সালে এসআইবিএলের মালিকানায় আসে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ। ওই ব্যাংকটির শীর্ষ পদে বসেন এস আলমে আস্থাভান তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে দুজন ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা; আরেকজন এসেছিলেন ভিন্ন আরেকটি ব্যাংক থেকে। মূলত তাদের মাধ্যমে ব্যাংকটি থেকে নামে-বেনামে বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে নেয় এস আলম গ্রুপ। যে কারণে ব্যাংকটি ইতিমধ্যে আর্থিক সংকটে পড়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে রক্ষিত চলতি হিসাবেও ঘাটতিতে আছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে এসআইবিএল ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। গত ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার লক্ষ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। একজন উদ্যোক্তা শেয়ারধারীকে পরিচালক ও চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি এই ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেয়। একই সঙ্গে আগের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হয়। এস আলমের হাতে নিয়ন্ত্রণের যাওয়ার সময় ব্যাংকটি থেকে কয়েকজন উদ্যোক্তা ও পরিচালককে বাদ দেয়া হয়।
এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী, ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্, ন্যাশনাল ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের মালিকানাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান আভিভা ফাইন্যান্সের পর্ষদও ভেঙে দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে ব্যাংকটিতে উদ্যোক্তাদের শেয়ার রয়েছে ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ রয়েছে ৬৫ দশমিক ৮২ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ২১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ২০২৩ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ও ৫ শতাংশ বোনাস (স্টক ডিভিডেন্ড) দিয়েছে।