ইজতেমার পাশেই জমজমাট মেলা

আনোয়ার হোসাইন সোহেল প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৫, ১২:০৮ এএম
  • পাওয়া যাচ্ছে তাবলিগের ব্যবহৃত ব্যাগসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী
  • পাকিস্তান থেকে এসেছে পেহেলওয়ান মিষ্টি

তাবলিগ জামাতের বৃহৎ মিলনমেলা ‘বিশ্ব ইজতেমা’র পাশেই চলছে জমজমাট মেলা। মেলায় খাদ্যপণ্য, প্রসাধনী, ব্যাগ, জুতা, মেসওয়াক, তাসবিহসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ব্যবসায়ীরা। মেলায় বাড়তি আকর্ষণ পাকিস্তানি ‘পেহেলওয়ান মিষ্টি’র দোকানও।     

ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার গাজীপুর জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ইজতেমার প্রধান ফটকের সামনেই চলছে এই মেলা। ইজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ ফজর থেকে পাকিস্তানের মাওলানা খোরশেদ আহমদের বয়ানের মাধ্যমে ধারাবাহিক বয়ান শুরু হয়। বয়ানে নিজেদের ঈমান-আমল বৃদ্ধি, পরকালের প্রস্তুতি, বিশ্বজুড়ে দ্বীন কায়েম এবং মুসলিমরা কীভাবে এক ও নেক থাকতে পারেন, সেসব বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। 

বেলা ১টার দিকে তাবলিগ জামাতের মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী সমন্বয়ক মুফতি কেফায়াতুল্লাহ আজহারী বলেন, সাদপন্থীদের রিউমার উপেক্ষা করে ৪১ জেলার লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমায় উপস্থিত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে ইজতেমা চলছে। আগামীকাল রোববার (আজ) সকাল ৯টায় আখেরি মুনাজাতের মধ্যে দিয়ে এবারের ইজতেমার প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটবে। এরপর ইজতেমায় জমায়েত মুসল্লিরা দ্বীনের দাওয়াত প্রচারে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়বেন।  

ইজতেমার মেলায় আসা মুসল্লি জামিল আহমদ বলেন, এই মেলায় এসেছি মিসওয়াক কিনতে। তবে এখানে তুলনামূলক দাম বেশি। তবে কিছু করারও নেই। বাধ্য হয়ে দেড়শ টাকায় একটা মিসওয়াক কিনেছি। নোয়াখালী থেকে আসা মঈন উদ্দিন জানান, মেলায় যখন আসছিলাম তখন বেশ শীত ছিল। এখানে আসার পর গরম লাগবে। তাই পাতলা পাঞ্জাবি কিনতে এসেছি। এখনো দেখছি পছন্দ হলে একটা কিনব।

এদিকে মেলায় গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী টি-শার্টের ওপর তৎক্ষণিক ক্যালিওগ্রাফি প্রিন্ট করে দিচ্ছেন এমন এক দোকানি নুরুল ইসলাম জানান, গত তিনদিন ধরেই তারা এই মেলায় আছেন। গ্রাহকের বেশ সাড়াও পাচ্ছেন। ইসলামিক বিভিন্ন ক্যালিওগ্রাফি, মসজিদুল আকসার এবং হামাসের মুখপাত্র আবু ওবায়দার ছবি সম্বলিত প্রিন্টেড টি-শার্টের বেশ বিক্রি লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিটি টিশার্ট বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা করে। 

এবারের মেলায় ইতোমধ্যে দর্শনার্থী ও মুসল্লিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে পাকিস্তানের ‘পেহেলওয়ান মিষ্টি’। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানের পাশে মানুষের ভিড় লেগে থাকে এই দোকানে। হাত বাড়ালেই পেহেলওয়ান মিষ্টি দোকানের বিক্রেতারা মুসল্লিদের হাতে তুলে দিচ্ছেন তিলের তৈরি সুস্বাধু এই মিষ্টি। 

মিষ্টি খেয়েছেন এমন একজনের অনুভূতি জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সৌরভ জানান, এক কথায় সত্যি অসাধারণ। দোকানি রুমন জানান, অনেকে একাধিকবার আসছেন। ছোট্ট শিশুরাও মিষ্টি খেতে দোকান ভিড় করছে। বারবার দেয়ার পরও তারা আবারও চাচ্ছে। 

এদিকে দোকানের সামনে হিন্দি/উর্দু মিশেল কথা বলা স্কুলশিক্ষার্থী ফাহিম জানিয়েছে, এখানে পাকিস্তানি ভাষায় কথা বললে মিষ্টি দোকানদার খুশি হয়ে মিষ্টি দিচ্ছে। তাই আমরা হিন্দি বলছি। মিষ্টি খেয়েছো? জানতে চাইলে সে বলেছে হ্যাঁ ভাইয়া, একটু আগে কয়েকজন পুলিশও খেয়ে গিয়েছে। আপনি সাংবাদিক পরিচয় দিলে আপনাকেও দিবে। 

ব্যবসা কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে দোকানি জানান, মোটামুটি ভালো। প্রতিকেজি মিষ্টির দাম কত জানতে চাইলে দোকানি জানান, মিষ্টির ধরন ও আকার ভেদে প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে।

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন সকালে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা, ছাত্রদের উদ্দেশে নামাজের মিম্বরে বয়ান করেন মাওলানা আকবর শরিফ (ভারত), এছাড়া বাদ জোহর মাওলানা ইসমাঈল গোদরা (ভারত), বাদ আসর মাওলানা জুহায়ের (ভারত), বাদ মাগরিব মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা এবং আজ বাদ ফজর মাওলানা আব্দুর রহমান (ভারত) নসিহত পেশ করবেন। এরপর আখেরি মুনাজাতের পূর্বে নসিহতমূলক বক্তব্য দেবেন মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা। মুনাজাত পরিচালনা করবেন বাংলাদেশ মাওলানা জুবায়ের সাহেব।

উল্লেখ্য, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশ নেবেন ২২ জেলা ও ঢাকার বাকি অংশের মুসল্লিরা। দুই ধাপের আখেরি মুনাজাত হবে যথাক্রমে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি। মাঝে আট দিনের বিরতি দিয়ে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি অনুসারীদের ইজতেমা পর্ব।