ছাত্রশিবিরের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫, ১২:২১ এএম

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা অনুষ্ঠান ‘দুর্বার ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অদম্য মেধাবী (শারীরিক প্রতিবন্ধী) শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে ছাত্রশিবিরের পক্ষ হতে ৬ দফা দাবি ও ২টি করণীয় উপস্থাপন করা হয়। 

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বিকাল ৩টায় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. আব্দুর রব। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর ড. ফখরুল ইসলাম, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের সভাপতি ডা. নজরুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, জাহিদুর রহমান এবং ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলামসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আব্দুর রব বলেন, ‘আজকের এই অনুষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ। আমাদের দেশে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রতি যে মনোভাব রয়েছে, তা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। এই শিক্ষার্থীরা তাদের অদম্য মেধা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সমাজে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। তাদের সাফল্য আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। আমি আশা করি, এ ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে এবং সব প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে সমান সুযোগ প্রদান করা হবে, যাতে তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।’

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, যেখানে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত হতে পারবেন। আমরা চাই, তারা সংসদ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় অংশ নিতে সক্ষম হোক। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করার চেষ্টা করব এবং সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যাতে তারা এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে।’

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য সব সময় অনুপ্রাণিত। তবে এখনও আমরা অনেক ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে, বিভিন্ন প্রোগ্রামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো আমাদের অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করা হয় না। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন ব্যবস্থা, উপযোগী ওয়াশরুম এবং অন্যান্য মৌলিক সুবিধা নিয়েও আমাদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা সরকারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, ছাত্রশিবির এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের কাছে আমাদের দাবি তুলে ধরছি। আশা করছি, আমাদের এই সমস্যাসমূহের স্থায়ী সমাধান হবে।’

অনুষ্ঠানে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বিশেষ প্রয়োজনসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো-

১. শারীরিক প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য চাহিদার আলোকে ভাতা ও শিক্ষাবৃত্তি বাড়ানো এবং সহায়ক উপকরণ সহজপ্রাপ্য করতে হবে।

২. সরকারি-বেসরকারি ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালের অবকাঠামো এবং গণপরিবহনকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিবন্ধীবান্ধব করতে হবে।

৩. জাতীয় সংসদ ও নীতিনির্ধারণী জাতীয় পর্যায়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা ও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪. প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহায়ক উপকরণ, প্রশিক্ষিত শিক্ষক, বিশেষ শিক্ষা পদ্ধতি ও প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।

৫. সরকারি-বেসরকারি খাতে প্রতিবন্ধীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশ ও সমান বেতন নিশ্চিত করতে হবে।

৬. প্রতিবন্ধীদের জন্য অধিকার রক্ষায় UNCRPD-এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও কার্যকর মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে। ‘এ সময় তিনি সরকারের কাছে এসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে তিনি দুটি গুরুত্বপূর্ণ করণীয় তুলে ধরেন। তিনি আশ্বাস প্রদান করে বলেন- ১. শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফরমের সাথে ছাত্রশিবিরের ছাত্রকল্যাণ, ছাত্র অধিকার এবং মানবাধিকার বিভাগ যৌথভাবে কাজ করবে। 

২. পাশাপাশি ছাত্রশিবিরের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগ তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে কার্যকর প্রচারণা চালাবে এবং তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’