কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ বে-টার্মিনাল প্রকল্প। এক দশকের বেশি সময় ধরে আলোচনা চললেও বে-টার্মিনাল এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এখন পর্যন্ত ওই প্রকল্পের আংশিক ভূমি বুঝে পাওয়া ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি নেই।
তবে শেষ পর্যন্ত বর্তমান সরকার বে-টার্মিনাল বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকল্পটির ভৌত অবকাঠামোগত কাজ শুরু করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিশ্বব্যাংকের ঋণের অপেক্ষায় রয়েছে। গত বছরের জুনে বিশ্বব্যাংক ওই প্রকল্পের জন্য ৬৫ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। ওই অর্থ দিয়ে প্রকল্পের চ্যানেল (জাহাজ চলাচলের পথ) খনন ও ছয় কিলোমিটার ব্রেক ওয়াটার (সাগরের স্রোত থেকে রক্ষায় বাঁধ) নির্মাণের কথা ছিল। ঋণ হাতে পেলেই ওই দুটি কাজ শুরু হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর চেয়েও বড় বে-টার্মিনাল পতেঙ্গা ও হালিশহরে সাগরের উপকূল ঘেঁষে হচ্ছে। বিগত ২০১৯ সালে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ হিসেবে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাবিত ৯০০ একর ভূমির মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন ৬৮ একর বুঝে পাওয়া গেছে। আর বন্দরের অনুকূলে ৫০০ একর খাস জমি বন্দোবস্তি দেয়া হয়েছে। আরও কিছু জমি পাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
বে-টার্মিনালের প্রায় পুরোটাই বিদেশি বিনিয়োগে হতে চলেছে। একটি টার্মিনাল দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড, একটি পিএসএ সিঙ্গাপুর এবং আরেকটি আবুধাবি পোর্ট ও চট্টগ্রাম বন্দর মিলে করার কথা। সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে পারে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফট ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ। বে-টার্মিনালের চ্যানেলের গভীরতা বেশি থাকায় ১২ মিটার ড্রাফট ও ৩০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়তে পারবে। তাছাড়া বর্তমানে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য জোয়ারের ওপর নির্ভর করতে হয়। বে-টার্মিনাল হলে সবসময়ই জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারবে। দেশের ইকোনমিক জোনগুলোতে উৎপাদন শুরু হলে দেশের আমদানি-রপ্তানি অনেক বেড়ে যাবে। সেজন্য অবশ্যই বে-টার্মিনাল নির্মাণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
এদিকে বে-টার্মিনাল প্রসঙ্গে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে এসে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, চ্যানেল ও স্রোত প্রতিরোধক তৈরিতে বিশ্বব্যাংক ৬৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগ নিয়ে এসেছে। আশা করা যায়, আগামী ৩-৫ মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এমওইউ হবে। এটি হবে বাংলাদেশে অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগ। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে এবং ডিপিপি তৈরি হয়েছে।