রাজধানীতে বেড়েছে মশার উপদ্রব

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৫, ১২:১৬ এএম
  • মশক নিধনে দুই সিটির বাজেট ২০০ কোটি টাকা

  • নিয়মিত ওষুধ ছিটায় না সিটি কর্পোরেশন

  • বৈজ্ঞানিক উপায়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই

শীত শেষ হতে না হতেই রাজধানীতে বেড়েছে মশার উপদ্রব। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, অফিস-আদালত, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান- সর্বত্রই যেন মশার রাজত্ব। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মশা তাড়াতে ২০০ কোটি টাকার বাজেট থাকলেও সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। মশা নিধনে নিয়মিত ওষুধ না ছিটানো এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে মশার ঘনত্ব বেড়েছে বহুগুণ। নানা পরিকল্পনা নিলেও দুই সিটির উদাসীনতায় স্থবির মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মশক নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বছরে কমবেশি ২০০ কোটি টাকা বাজেট আছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ব্যয় হয়েছে ৮৭ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ১১১ কোটি টাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও প্রায় কাছাকাছি বাজেট ধরা হয় মশক নিধনে। মশার পেছনে দুই সিটি করপোরেশনের এত বিপুল ব্যয়ের সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী।

রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, সন্ধ্যা নামার আগেই মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। বাসাবাড়িতে গৃহিণীরা মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে সন্ধ্যার সময় মশারি টানিয়ে নেন। মশা বেড়ে গেলে কয়েলও কাজ হয় না।

মাতুয়াইল এলাকার বাসিন্দা জোসনা আহমেদ জবা জানান, মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের কাজ এখন আর দেখা যায় না। ফলে সম্প্রতি মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। মশারি টানিয়েও মশা থেকে নিস্তার পাওয়া যায় না। বিভিন্ন ফাঁকফোকড় দিয়ে মশা ঢুকে পড়ে। আর ঘুম নষ্ট করার জন্য একটা মশাই যথেষ্ট।

বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ আহমেদ বলেন, কিছুদিন ধরে এ এলাকায় মশার উপদ্রব এত বেড়েছে যে, বাসায় থাকাই দুষ্কর। রুমের ভেতর কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার করে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া গেলেও খাওয়া বা গোসলের সময় মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হতে হচ্ছে।

শনির আখড়ার বসবাসরত আলেয়া খাতুন বলেন, এই এলাকায় সিটি করপোরেশন মশার ওষুধ ছিটায় না। স্বাভাবিক সময় মশার কয়েল বা স্প্রে করলে মশা নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু মশার প্রজনন মৌসুমে কয়েল জ্বালিয়ে বা স্প্রে করেও মশার উপদ্রব থেকে নিস্তার পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় এক মাস ধরে আমরা মশার উপদ্রবের মধ্যে আছি। কিন্তু সিটি করপোরেশনের কোনো কার্যক্রম লক্ষ্য করছি না। খাল ও ডোবা-নালাগুলো পরিষ্কার করে দিলে মশার উপদ্রব থেকে কিছুটা হলেও নিস্তার পেতাম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগে মশক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বেশির ভাগ পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। ফলে মশক নিধন কার্যক্রমের তদারকি ছাড়াও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজটি স্থবির হয়ে পড়ে। উত্তর সিটিতে নতুন করে এসবের দায়িত্ব নেন প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। এই কর্মকর্তার পক্ষে প্রশাসনিক কার্যক্রম শেষে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে মশক নিধন কার্যক্রম দেখভালের খুব একটা সুযোগ নেই। ফলে মশক নিধনে যে স্বল্পসংখ্যক কর্মী মাঠে কাজ করেন, তাদের মধ্যেও গা-ছাড়া ভাব চলে এসেছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মোট ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের দায়িত্বে আছেন ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা। তাদের অধীনে মশক কর্মীরাও কাজ করেন। যদিও এ কাজটি আগে সরাসরি দেখভাল করতেন ৫৪টি ওয়ার্ডের একজন করে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তাদের সঙ্গে আরও ১৮ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরও ছিলেন। ডিএনসিসি এলাকায় এসব জনপ্রতিনিধি মশক নিধন কার্যক্রমের তদারকি ছাড়াও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজটি মনিটরিং করতেন।

মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা বা সীমাবদ্ধতা মানতে নারাজ ডিএসসিসি। পুরো ১০টি অঞ্চলের আওতায় ৭৫টি ওয়ার্ডে কর্মীরা কাজ করছে বলে জানায় সংস্থাটি। তবে শহরের নিম্নাঞ্চলগুলোতে মশার উৎপাত কিছুটা বেড়েছে বলে স্বীকার করেছে ডিএসসিসি।