টিসিবি পণ্য নিতে দীর্ঘ লাইন
চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা ও পেঁয়াজসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম চড়া দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির ট্রাকসেলের লাইনে দাঁড়ান অনেক মানুষ। ভোর থেকেই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন মোড়ে ট্রাকসেলে সাশ্রয়ী দামে পণ্যের আশায় নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় শুরু হয়।টিসিবির এসব ট্রাকসেল থেকে ফ্যামিলি স্মার্ট কার্ড ছাড়াও ২০০ মানুষকে পণ্য দেয়া হয়। তবে সেখানে বাস্তবতা ভিন্ন পরিলক্ষিত হয়। মানুষের উপস্থিতি এত বেশি থাকে যে হুড়োহুড়ি, ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি ও মারামারির ঘটনাও ঘটে। এর মধ্য থেকে যারা পণ্য পান তার মুখে হাসির ফোটে কিন্তু ট্রাকের সামনে লম্বা লাইনে যে পরিমাণ মানুষ থাকে তাদের বেশিভাগই ফেরেন খালি হাতে।
বিশেষ করে বয়স্ক ও শারীরিকভাবে দুর্বল মানুষরা পণ্য পাওয়ার তালিকায় থাকেন না। সূত্রমতে, টিসিবি থেকে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি করে মসুর ডাল ও ছোলা, এক কেজি চিনি এবং ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারছেন। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম রাখা হয় ১০০ টাকা। প্রতি কেজি চিনি ৭০ টাকা, মসুর ডাল ও ছোলা ৬০ টাকা করে কেজি এবং খেজুর ১৫৬ টাকা। যেখানে বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ২০০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ১২৫ টাকা, মসুর ডাল ও ছোলা ১২০ টাকা এবং খেজুর ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। অর্থাৎ টিসিবির একটি প্যাকেজ পেলে সাধারণ মানুষের অর্ধেকের বেশি সাশ্রয় হয়।
মূলত এই অর্থ সাশ্রয়ের জন্যই তীব্র ভিড় সত্ত্বেও মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। জানা যায়, টিসিবির পণ্যের প্রতি নিম্ন আয়ের মানুষের আগ্রহ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ একেবারেই কম। বিভিন্ন এলাকায় টিসিবির গাড়ি এসে দাঁড়ানোর আগেই প্রায় প্রতিটি ট্রাকের পেছনে ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষের লম্বা সারি হয়। জনবহুল আবাসিক এলাকায় মানুষের সংখ্যা আরও বেশি থাকে।
র মধ্যে ২০০ মানুষকে টোকেন বিতরণ করে পরে পণ্য দেয়া হয়। যদিও বিক্রি কার্যক্রম চলা ওই দু-তিন ঘণ্টায় আরও কয়েকশ মানুষ পণ্য নিতে এসে আশাহত হয়ে ফিরে যান। সব মিলিয়ে বরাদ্দের চেয়ে পণ্য নিতে মানুষের সংখ্যা এলাকাভেদে দ্বিগুণ থেকে চারগুণ হয়।
রামপুরা, মালিবাগ, মৌচাক, কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণির একাধিক স্থান ও একাধিকবার বিক্রি কার্যক্রম পরিদর্শনে দেখা যায়, টিসিবির ট্রাকের পেছনে দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য পাননি কেউ কেউ। আবার অনেকে আগে এলেও ট্রাক আসার সঙ্গে সঙ্গে হুড়োহুড়ি-ঠেলাঠেলিতে টিকতে পারেন না। অনেকে লাইনে থাকলেও বিশৃঙ্খলার কারণেও টোকেন পান না। অবশেষে পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যান অনেকে।
টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, রমজানজুড়ে ঢাকা ও দেশের বিভাগীয় শহরসহ বিভিন্ন স্থানে এভাবে ট্রাকসেলে ১২ লাখ পরিবারের মধ্যে পণ্য বিক্রি করা হবে। এছাড়া টিসিবির নিয়মিত উপকারভোগী ৫৭ লাখ স্মার্ট কার্ডধারী পরিবার ভর্তুকি মূল্যে পণ্য পাবে। স্মার্ট কার্ডে পণ্য বিক্রিতে কিছুটা শৃঙ্খলা থাকলেও ট্রাকসেলে যে কেউ পণ্য নিতে পারেন বলে বিশৃঙ্খলা বেশি। টিসিবির নিবন্ধিত ডিলার বা সরবরাহকারীরা ট্রাকে প্রতিদিন ঢাকা শহরের ৫০টি স্থানে পণ্য বিক্রি করেন।
দেখা গেছে, টিসিবির এসব ট্রাকের পেছনে নারী ও পুরুষরা সাধারণত দুটি সারিতে দাঁড়ান। যিনি আগে আসবেন তিনি লাইনের সামনে থাকবেন- নিজেদের মধ্যে এমন সমঝোতায় সবাই ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করেন আগে থেকেই। কিন্তু ট্রাক এসে দাঁড়ানোর পরে এ শৃঙ্খলা থাকে না। কারণ ট্রাকের সঙ্গে সঙ্গেই দৌড়ে আসেন শতাধিক মানুষ। এরপর আগে ও পরে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে শুরু হয় হুড়োহুড়ি-ঠেলাঠেলি। এরপর ডিলারের কর্মচারীরা উপস্থিত মানুষের মধ্যে টোকেন বিতরণ করেন। অনেক ক্রেতা আগে পণ্য নেয়ার জন্য লাইন ভেঙে সামনে চলে যান টোকেন নিতে। তাতেই শুরু হয় হট্টগোল। এসব হুড়োহুড়িতে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়েন বয়স্ক ও শারীরিকভাবে দুর্বল মানুষরা।
চাহিদা প্রসঙ্গে ডিলাররা বলছেন, বাজারে তেল পাওয়া যায় না, অন্য সব জিনিসের দামও চড়া। টিসিবিতে এসব পণ্য অর্ধেক দামে দেয়া হয়। সেজন্য পণ্য নিতে একরকম যুদ্ধ শুরু হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। মারামারিও হয় অনেক এলাকায়। এত মানুষ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়। বিশৃঙ্খলা এড়াতে টোকেন দেয়া হয় স্থানীয়দের সহায়তায়। তারপরও অনেক ঝামেলা হয়। টোকেন নেয়ার জন্য গণ্ডগোল ও চাপ তৈরি করছে কিছু মানুষ।
ডিলাররা জানান, মানুষের ভিড় বেশি থাকায় বিশৃঙ্খলা এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। অনেকে তাদের কথা শোনেন না।