রাজধানীর বিপুলসংখ্যক সিসি ক্যামেরা নষ্ট

সুযোগ নিচ্ছে অপরাধী চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৫, ১২:২৫ এএম
  • ছিনতাইকারী ও ডাকাত আতঙ্কে তটস্থ সাধারণ মানুষ

  • সন্ধ্যায় ঘর থেকে বেরোতে শঙ্কা

নষ্ট হয়ে রয়েছে রাজধানীর বিপুলসংখ্যক সিসি ক্যামেরা। তাতে পোয়াবারো হয়েছে অপরাধীদের। বর্তমানে ছিনতাইকারী ও ডাকাতের আতঙ্কে তটস্থ নগরের সাধারণ মানুষ। অনেক এলাকায় মানুষ সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কিন্তু ওসব অপরাধ তদারকে পর্যাপ্ত ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা নেই। রাজধানীতে বসানো ছিল মোট দুই হাজার ১০০ সিসি ক্যামেরা। তা দিয়ে এতদিন তদারকির কাজ করা যায়নি রাজধানীর অর্ধেক এলাকায়ও। 

তার মধ্যে অকেজো হয়ে রয়েছে তিন শতাধিক ক্যামেরা। তাতে পর্যবেক্ষণ করা যাচ্ছে না অপরাধমূলক বিভিন্ন ঘটনার ভিডিও চিত্র। ফলে অনেক অপরাধীকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকালে ভাঙচুর করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক সিসি ক্যামেরা। এখন ওই ক্যামেরাগুলো মেরামত করে কাজে লাগাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর অপরাধীরা অপরাধমূলক ঘটনার তদারকি ব্যাহত হওয়ায় সুযোগ নিচ্ছে। 

বিগত ২০১২ সালে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনারের উদ্যোগে বেসরকারি অর্থায়নে ল অ্যান্ড অর্ডার কো-অর্ডিনেশন কমিটি বা এলওসিসি নামের একটি ট্রাস্ট গড়ে তোলা হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় রাজধানীতে সিসি ক্যামেরা প্রকল্প চালু করা হয়। পর্যায়ক্রমে দুই হাজার ১০০ ক্যামেরা বসানো হয়। ট্রাস্টের অধীনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের গুলশান, বনানী, উত্তরা, বিমানবন্দর, নিকেতন, বারিধারা ও ডিওএইচএস এলাকায় এক হাজার ৪০০টি ক্যামেরা বসানো হয়। আর ৭০০ ক্যামেরা বসানো হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কয়েকটি এলাকায়। উত্তর সিটিতে বসানো এক হাজার ৪০০ ক্যামেরার মধ্যে বর্তমানে এক হাজার ২০০ ক্যামেরা রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আবার কিছু নষ্ট। এক হাজার ২০০ ক্যামেরা গুলশানের মনিটরিং সেন্টার থেকে মনিটর করা হচ্ছে। 

তাছাড়া স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর কমিটির মাধ্যমে প্রশাসনিক কাজ ডিএমপির অপারেশনস বিভাগ, আইসিটি বিভাগ ও এমআইএস শাখার মাধ্যমে নবাব আব্দুল গনি রোডের সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার থেকে মনিটর করা হচ্ছে সাত শতাধিক সিসি ক্যামেরা। ওসবের মধ্যেও বেশ কিছু নষ্ট।

সূত্র জানায়, অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে রাজধানীর উত্তরা এলাকাকে গণ্য করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে ওই এলাকায়ও কোনো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা নেই। আর আগে যেগুলো ছিল সেগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে বাড়ির মালিকদের লাগানো ক্যামেরা ও সাধরণ মানুষের ভিডিও করা ছবির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। 

যদিও ইতিপূর্বে উত্তরা এলাকায় বেশ কিছু ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। কিন্তু জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে ওই ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরাও ভাঙচুর হয়। তারপর ওই ক্যামেরাগুলো এখনো মেরামত করা যায়নি। তবে থানাগুলোর সিসি ক্যামেরাগুলো ঠিক করা হয়েছে। আর বাইরের ক্যামেরাগুলো এখনো সেভাবে মেরামত করা যায়নি। আর যেখানে পুরো রাজধানীকে তদারকের আওতায় আনতে কক্ষপক্ষে ১০ হাজার সিসি ক্যামেরার দরকার। সেখানে বসানো হয়েছিলো মাত্র দুই হাজার ১০০ ক্যামেরা।

সূত্র আরও জানায়, সিসি ক্যামেরা অপরাধী ধরার জন্য সবচেয়ে বেশি কাজে আসে। ছবি দেখে গ্রেপ্তারের পর অপরাধীর অস্বীকার করার সুযোগ থাকে না। তাতে পুলিশের তদন্ত কাজের অনেক সুবিধা হয়। তাছাড়া অপরাধীর অপরাধও আদালতে সহজে প্রমাণ করা যায়। কিন্তু ওই ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার বেশ কিছু নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এখন পুলিশকে নির্ভর করতে হচ্ছে ব্যক্তিগত ক্যামেরার ওপর। অথচ শুধু অপরাধী শনাক্ত কিংবা রহস্য উদঘাটন করার ক্ষেত্রেই নয়, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও সিসি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জুলাই বিপ্লবের সময় রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, ভাটারা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা, মতিঝিল ও যাত্রাবাড়ী এলাকার কিছু ক্যামেরাও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। তাছাড়া গুলশান-বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোন হওয়ায় সেখানে সবচেয়ে বেশি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। যে কারণে রাজধানীর অন্যান্য এলাকার তুলনায় ওই এলাকায় অপরাধও কম।

এদিকে এ বিষয়ে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, রাজধানীতে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ডিএমপি থেকে ক্যামেরাগুলো পরিচালনা করা হয়। বর্তমানে যে ক্যামেরাগুলো নষ্ট, সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে।