ক্যাম্পাসে নানা আন্দোলন

ব্যাহত নিয়মিত শিক্ষাক্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৫, ১২:১৭ এএম
  • নানা দাবিতে সরব শিক্ষার্থীরা

  • শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতির শঙ্কা বাড়ছে

  • পটপরিবর্তনে শিক্ষকদের পদত্যাগের হিড়িক

  • দাবি-দাওয়া আদায়ে ব্যস্ত ছিলেন শিক্ষকরা

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নানা আন্দোলনে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে দেশের শিক্ষাক্রম। ফলে চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতির শঙ্কা বাড়ছে। সময়মতো বই না পাওয়ার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা, শিক্ষকদের আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ নানা কারণে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়ছে। আর বেসরকারি স্কুল-কলেজে প্রকট শিক্ষকসংকট তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে খাদের কিনারে পৌঁছেছে শিক্ষা কার্যক্রম। 

গত বছরের জুন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন স্কিমে তাদের অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন। এতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে চলতে থাকে কোটা আন্দোলন। আর জুলাই মাস থেকে এই আন্দোলন জোরদার হয়ে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, ছড়িয়ে পড়ে দেশের সব স্কুল-কলেজেও। আর সরকার পতনের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এর প্রভাব পড়ে। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী অনেকেই পদত্যাগ করেছেন।

তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের মধ্যেও অনেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। ফলে ভিসি, প্রোভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগ দিতে দিতেই আরো দু-তিন মাস চলে যায়। এ অবস্থায় স্কুল-কলেজগুলোতে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষাবর্ষ শেষ করা হলেও শিক্ষার্থীরা ভালো করতে পারেনি। তাদের শিখন ঘাটতি নিয়েই পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে হয়েছে। কিন্তু নতুন শিক্ষাবর্ষেও আন্দোলন-অস্থিরতা-সংকট পিছু ছাড়ছে না। শিক্ষা খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ নানা দাবিতে গত সাত মাসে আন্দোলন জোরদার হয়েছে। মারামারি, সংঘর্ষেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনও সৃষ্টি করে বড় ধরনের অস্থিরতা। বর্তমানে ছোটখাটো দাবিতেও বড় ধরনের আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যেসব সমস্যা আলোচনার টেবিলে সমাধান সম্ভব, সেগুলো নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয় ও বাইরে বিক্ষোভ, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক পদত্যাগ নিয়েও অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এককথায় শিক্ষার্থীরা এখন কথায় কথায় আন্দোলনে নামছে। তাতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেমন নানা দাবি নিয়ে যখন-তখন আন্দোলন করছে, পাশাপাশি শিক্ষকরাও অনেক দাবি নিয়ে মাঠে ছিলেন। বেতন-ভাতার দাবিতে গত সাত মাসে শ্রেণিকক্ষের চেয়ে আন্দোলনের মাঠেই শিক্ষকরা বেশি ব্যস্ত ছিলেন। একাধিক শিক্ষক সংগঠন রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি, অনশন, কর্মবিরতি, বিক্ষোভ-ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি পালন করেছে। অনেক সময় শিক্ষকদের আন্দোলন থামানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে জলকামান, লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেডের ব্যবহার করতে হয়েছে। তাছাড়া অনেক স্কুল-কলেজে আন্দোলন না থাকলেও চলতি শিক্ষাবর্ষে নতুন কারিকুলাম বাতিল করে ২০১২ সালের কারিকুলামে ফিরিয়ে আনায় শিক্ষার্থীরা বই হাতে পেতে দেরি হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা বর্তমানে ১৩তম গ্রেডে বেতন পান। তারা দশম গ্রেডে বেতনের দাবিতে জোরদার আন্দোলন করছেন। নন-এমপিও শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বাড়িভাড়া, শতভাগ উৎসব ভাতার দাবিতে আন্দোলন করেছে। পাশাপাশি তারা মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ চায়। বেসরকারি প্রাথমিকের শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছে। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা এমপিওভুক্তি চান। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের শিক্ষকরা তাদের দাবি আদায়ে আন্দোলনের মাঠে রয়েছে। আর শিক্ষকরা যদি আন্দোলনে ব্যস্ত থাকে স্বাভাবিকভাবেই তা শিক্ষার মানে প্রভাব ফেলবে।

এদিকে বর্তমানে দেশের ৩২ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক শিক্ষকের পদ শূন্য। গত বছরের শুরুতে ৯৬ হাজার ৭৩৬ জন শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। কিন্তু পদ্ধতিগত জটিলতায় আবেদন করতে পেরেছেন মাত্র ২৩ হাজার ৯৩২ জন। এর মধ্যে মাত্র ২০ হাজার জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফলে আগে থেকেই ৭৬ হাজার পদ খালি। এর সঙ্গে গত দেড় বছরে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য হয়েছে। ফলে শিক্ষকসংকটের কারণে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোতে শ্রেণি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক বিশ্ববিদালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদ জানান, আগে থেকেই শিক্ষায় সমস্যা ছিল। তবে নতুন সরকার এসে শিক্ষায় তেমন কোনো উদ্যোগও নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখার সার্বিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য ছাত্রনেতারাও উদ্যোগ নিতে পারেন।