ঈদে প্রস্তুত রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলো

আমার সংবাদ ধর্ম ডেস্ক প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৫, ০১:২৯ এএম
  • রঙ তুলিতে সাজছে পার্ক ও বিনোদনকেন্দ্র

  • ঈদের ছুটিতে বিপুল লোক সমাগমের সম্ভাবনা

ঈদ মানে আনন্দ। আর এই আনন্দ কয়েক গুণ বেড়ে যায় বন্ধু বা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে গেলে। রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোতেও নেয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থা। নির্মল আনন্দ বিলিয়ে দিতে ইতোমধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে বিনোদনকেন্দ্রগুলোর কর্তৃপক্ষ। এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ৯ দিনের লম্বা ছুটিতে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক লোক সমাগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার ঈদে ছুটি পর্যাপ্ত থাকায় বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীর ঢল নামবে। পছন্দের তালিকায় রয়েছে জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় চিড়িয়াখানা, লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, হাতিরঝিল, বোটানিক্যাল গার্ডেন, উত্তরার দিয়াবাড়ী, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমন্ডি লেক, জিয়া উদ্যান, শ্যামলীর শিশু মেলা খ্যাত ??‘ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক’ আশুলিয়ায় অবস্থিত ফ্যান্টাসি কিংডম, সাভারের নবীনগরে নন্দন পার্ক, বুড়িগঙ্গা ইকো পার্ক, যমুনা ফিউচার পার্ক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের দিন থেকে অন্তত এক সপ্তাহজুড়ে দর্শনার্থীদের সমাগমে মুখর থাকবে বিনোদনকেন্দ্রগুলো।  দর্শনার্থীদের বরণ করে নিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ নানাভাবে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে বিনোদনকেন্দ্রগুলো। আর দর্শনার্থীরা যাতে নিরাপদে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারে এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা।

জানা যায়, জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঈদের সময় এক-দেড় লাখ দর্শনার্থীর সমাগম হয়। প্রতিদিনের মতোই চিড়িয়াখানা সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে চিড়িয়াখানায় প্রবেশের জন্য এবার ১৪টি বুথে টিকিটি বিক্রি করা হবে। এর বাইরে ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার পার্কিংয়েও একটি বুথে টিকিট বিক্রি হবে। এছাড়া ১৬টি লাইন দিয়ে প্রবেশ করার ব্যবস্থা থাকবে।

জাতীয় চিড়িয়াখানা : চিড়িয়াখানায় প্রবেশের টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা। দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর টিকিট লাগবে না। এছাড়া প্রতিবন্ধী এবং প্রতিবন্ধীর সঙ্গে যিনি অ্যাটেনডেন্ট থাকবেন, তার টিকিট লাগবে না।

চিড়িয়াখানার প্রস্তুতি নিয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ভেতরের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শেষ হয়েছে। রং করা হয়েছে। নিষ্ক্রিয় সিসি ক্যামেরাগুলো সক্রিয় করা হয়েছে। দর্শনার্থীরা কোন দিক থেকে কোন দিকে যাবেন, সেই নির্দেশনার বোর্ডগুলোও যেখানে যেখানে দরকার, বসানো হয়েছে। চিড়িয়াখানার ভেতরে কোনো খাবার পাওয়া যায় না। খাবার বিক্রি করে শুধু পর্যটন কর্পোরেশন। গত বছর পর্যটন কর্পোরেশনের দুটি রেস্তোরাঁর আওতায় দুটি বিক্রয়কেন্দ্র বাড়ানো হয়। এবার আরেকটি অস্থায়ী বিক্রয়কেন্দ্র বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি বসানো হবে জিরাফের খাঁচার বিপরীত পাশে। পানীয় জাতীয় খাবারের জন্য দর্শনার্থীদের যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, সেজন্য অস্থায়ী বিক্রয় কেন্দ্র থাকবে। ঈদের দিন থেকে শুরু করে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত এটি থাকবে।

লালবাগ কেল্লা : পুরান ঢাকার ভিড় ঠেলে কেল্লার সদর দরজা দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়বে পরী বিবির মাজার। এখানে রয়েছে দরবার হল, নবাবের হাম্মামখানা। আছে শাহি মসজিদ। রয়েছে একটি জাদুঘরও। লালবাগের কেল্লা বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রাচীন দুর্গ। মোগল আমলে স্থাপিত এই দুর্গটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি পুরান ঢাকার লালবাগে অবস্থিত। আর সে কারণেই এর নাম হয়েছে লালবাগের কেল্লা। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা। পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের টিকিট লাগবে না।

আহসান মঞ্জিল : পুরান ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মোগল আমলের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আহসান মঞ্জিল। খোলা থাকবে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা। ১২ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে ১০ টাকা আর প্রতিবন্ধীদের জন্য জাদুঘর উন্মুক্ত। এছাড়া সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ৩০০ টাকা ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য ৫০০ টাকা টিকিটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ : জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদদের স্মৃতির স্মরণে। ঢাকা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে ৪৪ হেক্টর জায়গা নিয়ে সাভার উপজেলায় এই স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স স্থাপন করা হয়েছে। এখানে প্রবেশে কোনো টিকিট নেই। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত।

শিশুমেলা : শিশু-কিশোরদের অন্যতম প্রধান বিনোদনকেন্দ্র রাজধানীর শ্যামলীর শিশুমেলা। যা বর্তমানে ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড নামে পরিচিত। এখানে আছে ৪০টির মতো রাইড। পরিবারের সবার চড়ার মতো আছে ১২টি রাইড। শিশুমেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদের প্রথম সাতদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এটি। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা।
হাতিরঝিল : ইটপাথরের এই ব্যস্ত শহরে ক্লান্তিকর নাগরিক জীবনে রাজধানীর হাতিরঝিল হয়ে উঠেছে মনোরম এক বিনোদনকেন্দ্র। দিনে কিংবা রাতে যে কেউই ঘুরে আসতে পারেন হাতিরঝিলে। একটু সন্ধ্যা হলেই বেশি জমে ওঠে এই এলাকা। ভিন্ন ডিজাইনে করা ব্রিজের নিচ থেকে আলো যেন পুরো পরিবেশকে দিয়েছে অন্য রূপ। আর পুরো হাতিরঝিল ঘুরে দেখতে চাইলে রয়েছে বাসসার্ভিসও।

বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক : শহরের কোলাহল ছেড়ে রাজধানীর উপকণ্ঠ শ্যামপুরে প্রায় সাত একর জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে পার্কটি। সবুজ বৃক্ষরাজি আর বুড়িগঙ্গা নদী পার্কটিকে করে তুলেছে নয়নাভিরাম।

ফ্যান্টাসি কিংডম : বিশ্বমানের বিনোদন সেবা, চমৎকার ল্যান্ডস্কেপিং ও উত্তেজনাকর সব রাইডস নিয়ে তৈরি ফ্যান্টাসি কিংডম, যা এরই মধ্যে বিনোদন পিপাসু ছোট-বড় সবার কাছে বিনোদনের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় গড়ে ওঠা এই থিম পার্কটি ঈদের প্রথম সাত দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সাঁতার কাটা যাবে ওয়াটার কিংডমে।

নন্দন পার্ক : সাভারের নবীনগরের নন্দন পার্কে নানা রকম রাইড আর ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের পাশাপাশি আছে খুদে চিড়িয়াখানাও। ঈদ উপলক্ষে কনসার্টের ব্যবস্থা থাকছে এখানে। নন্দন পার্ক খোলা থাকবে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। এছাড়াও নানা রকম রাইডার এবং ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের পাশাপাশি আছে খুদে চিড়িয়াখানাও।

যমুনা ফিউচার পার্ক : যমুনা ফিউচার পার্ক ঢাকা শহরের অভিজাত জায়গা কুড়িল, বারিধারা, প্রগতি সরণি ও গুলশানের মতো জায়গার কাছাকাছি। এটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেরও খুব কাছে অবস্থিত। যমুনা ফিউচার পার্কে থাকছে নানা রকম মজার রাইড, ব্লক বাস্টারে রোমাঞ্চকর মুভি দেখার সুযোগ। এছাড়া রয়েছে শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরনের আয়োজন।

দিয়াবাড়ী : ভ্রমণপিপাসুদের কাছে একটি প্রিয় নাম ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত দিয়াবাড়ী। শরতে কাশবনের সৌন্দর্য দেখতে দিয়াবাড়ীতে মানুষের ভিড় লেগে থাকে। এছাড়া বছরের অন্য সময়গুলোতেও দিয়াবাড়ীর বটগাছ, প্রাকৃতিক শোভা দেখতেও মানুষের ঢল নামে। দর্শনার্থীদের জন্য দিয়াবাড়ীর অভ্যন্তর দিয়ে বয়ে চলা তুরাগ নদের শাখায় বেশকিছু নৌকা ছাড়া হয়েছে। তার আশপাশে পাড় বাঁধানো স্থানে দর্শনার্থীদের জন্য বসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। দিয়াবাড়ীর আশপাশে গড়ে উঠেছে বেশকিছু রেস্টুরেন্টও।

তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্ক : নতুন নতুন চমকপ্রদ রাইড ও মজার সব খেলনা উপভোগের জন্য এবং আপনার আনন্দকে আরও প্রাণবন্ত করতে এই পার্ক সাজানো হয়েছে নতুন রূপে। তাই সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্ক থেকে। এটি ঢাকার মিরপুর ১-এ অবস্থিত। খোলা থাকবে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।

ঈদ উপলক্ষে দর্শনার্থীদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে নানা প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার। তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর চিড়িয়াখানায় প্রবেশ যেন মসৃণ হয়, সেজন্য লাইনের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশপাশে যাতে যানজট না থাকে সেজন্য এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঙ্গে সমন্বয় মিটিং করা হয়েছে।