জুলাই ১৭, ২০২২, ১১:২৮ এএম
নির্বাচনের সময় কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায় তাহলে প্রতিপক্ষকে রাইফেল নিয়ে দাঁড়াতে বললেন প্রধান নির্বাচন নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, আমরা সহিংসতা বন্ধ করতে পারবো না। রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ খেলোয়াড় তো আপনারা। আপনারা মাঠে খেলবেন আর আমরা রেফারি। আমাদের অনেক ক্ষমতা আছে। ক্ষমতা প্রয়োগ করবো। নির্বাচনকে অংশগ্রহণ করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। দলগুলোর সহায়তা ছাড়া আমরা ব্যর্থ হয়ে যাবো। আপনাদের সমন্বিত প্রয়াস থাকবে। কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়িয় তাহলে আপনাকে রাইফেল বা তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আপনি যদি দৌড় দেন, তাহলে আমি কি করবো? কাজেই আমরা সাহায্য করবো। পুলিশের উপর, সরকারের উপর আমাদের কমান্ড থাকবে। নির্বাচনের সময় যেটি থাকবে সেটি কিন্তু সরকার। আমি বারবার বলেছি, রাজনৈতিক দল আর সরকার এক নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। কিন্তু যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী তখন তিনি সরকার প্রধান আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নয়। এটি বুঝতে হবে। আমরা সরকারের সাহায্য চাইবো। সরকার যদি সহায়তা না করে, তাহলে নির্বাচনের পরিণতি খুবই ভয়াবহ হতে পারে।
রোববার (১৭ জুলাই) সকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে সংলাপে এমন কথা বলেন তিনি।
এর আগে স্বাগত বক্তব্যে সিইসি বলেন, ইতোপূর্বে আমরা বহুবার বলেছি সকল রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিশেষ করে প্রধানতম দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেওয়া খুবই প্রয়োজন। কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অবশ্যই বাধ্য করতে পারবো না। তবে সকল দলকে কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করতে আমরা বারবার আহ্বান করে যাবো। সে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আজকেও আপনাদের মাধ্যমে সকল দলকে আহ্বান জানাচ্ছি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা না থাকলে জনমতের সঠিক প্রতিফলন হয় না। পক্ষ-প্রতিপক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা মাঠ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সম্ভাব্য অনিয়ম, কারচুপি, দুর্নীতি, অর্থ শক্তির বৈভব ও পেশি শক্তির প্রয়োগ ও প্রভাব বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। নির্বাচন কমিশন সকলের অংশগ্রহণ, সহযোগিতা ও সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করতে চায়। অন্যথায় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের প্রয়াস যতই আন্তরিক হোক, ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। সেটা কাম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। একটি মাত্র দল ৩০০টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে সাংবিধানিকভাবে কোনো বাধা নেই। তবে ইতিহাস বলে সেক্ষেত্রে অচিরেই গণতন্ত্রের অপমৃত্যু হবে। স্বৈরতন্ত্র মাথা জাগিয়ে তুলবে। গণতন্ত্রের আরাধ্য পুনরুদ্ধার হয়ে পড়বে দুরূহ।
সিইসি বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নানাবিধ আশা, হতাশা ও তর্ক-বিতর্ক চলছে। বিতর্কগুলো নিরসন হওয়া প্রয়োজন। ইতিপূর্বে কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা কয়েটি উন্মুক্ত সংলাপ করেছি। এতে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে। কমিশনের সক্ষমতা ও সাধ্যের সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা নির্ধিদায় তা স্বীকার করে নিয়ে কারণগুলো বারবার ব্যাখ্যা করে বলেছি।
ইভিএম নিয়ে পাঁচ-সাতটি কর্মশালা করার পর আমরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এবং বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে উন্মুক্ত সভা করেছি। কেউ কোনো ত্রুটি দেখাতে পারেনি। ইভিএম এবং ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনে তুলনামূলক সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আরপিও ২৬ অনুযায়ী, কারচুপির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো প্রতিপালন করা হলে কারচুপি প্রতিরোধ করা সম্ভব বলেও জানান সিইসি।
এতো কিছুর পরেও অপপ্রচার সমানে চলছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ইভিএম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আমরা সত্যি উদ্বিগ্ন হচ্ছি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অনিয়ম, সহিংসতা, ব্যালট পেপার ছিনতাই হলে প্রতিরোধ কতটা সম্ভব হবে। আমাদের প্রত্যাশা জাতীয় নেতৃবৃন্দ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে নিবিড়ভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা ও মতৈক্য হয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর নিরসন করে আগামী সাধারণ নির্বাচনের জন্য অনকূল পরিবেশ ও সমতল ভিত্তি সৃষ্টি করবেন।
তিনি বলেন, অরাজনৈতিক সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিগত সংগঠিত হয়ে এগিয়ে এসে জাতির একটি সংকটময় মুহূর্তে তাদের প্রজ্ঞা ও জ্ঞান প্রয়োগ করে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সংলাপে আহ্বান করে আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক মতৈক্য সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারেন। আমরা নির্বাচন করতে চাই অনুকূল পরিবেশ ও শক্ত ভিত্তির ওপর। এজন্য সকলের সহায়তা কাম্য।
এদিকে প্রথম দিন সকাল সাড়ে সকাল ১০টায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে সংলাপে বসবে কমিশন। এরপর দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বাংলাদেশ কংগ্রেস এবং বিকেল ৪টা থেকে ৫টা বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএ) সঙ্গে বৈঠক করবে ইসি।
সংলাপে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে কমিশনের এ সংলাপ চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। এতে উন্মুক্ত আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা। আগামী ২০ জুলাই বিএনপিকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আর সবশেষ ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে ইসির এ কার্যক্রম শেষ হবে।
এর আগে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছিল কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। সংলাপে যেসব সুপারিশ এসেছিল, সেগুলো বই আকারে প্রকাশ করেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেছিল ইসি। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
যে ৩৯টি দল ইসিতে নিবন্ধিত, তার মধ্যে তিনটি দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০–দলীয় জোটভুক্ত। বিএনপির পাশাপাশি এ দলগুলোরও সংলাপে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে। এ ছাড়া বামপন্থী কয়েকটি এবং ধর্মভিত্তিক কিছু দলও সংলাপ বর্জন করতে পারে।
ইএফ