জানুয়ারি ৭, ২০২৩, ০৪:০৪ পিএম
দেশে ২০২২ সালে ৬ হাজার ৮২৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৭১৩ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৬১৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯৭ নৌ-দুর্ঘটনায় ৩১৯ জন নিহত, ৭৩ জন আহত এবং ৯২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৩৫৪ রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩২৬ জন নিহত এবং ১১৩ জন আহত হন।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ৩০৯১ জন, বাস যাত্রী ৪২৭ জন, ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি আরোহী ৪৫৩ জন, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ যাত্রী ২৬৮ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-টেম্পো-লেগুনা) ১২৪৮ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-চান্দের গাড়ি-বোরাক-মাহিন্দ্র-টমটম) ৩৯৩ জন এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ২০৬ জন নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে ২০২২ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৯৭৩টি, নিহত হয়েছেন ৩০৯১ জন এবং আহত হয়েছেন ২১৫৪ জন। নিহতের মধ্যে ৭৬.৪১ শতাংশ ১৪ থেকে ৪৫ বছর বয়সী।
সারা দেশে ৮২ শতাংশ রেল ক্রসিং অরক্ষিত। গত বছরে এসব রেল ক্রসিংয়ে ৫১ দুর্ঘটনায় ৭৯ জন নিহত হয়েছেন। বাকি ৩০৩ টি দুর্ঘটনা ঘটেছে রেল ট্র্যাকে ও ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে। এসব দুর্ঘটনায় ২৪৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। সবগুলো ঘটনা-ই দায়িত্বহীনতা ও অসচেতনতার কারণে ঘটেছে।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে।
দুর্ঘসুটনা প্রতিরোধে সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা রাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করতে হবে এবং `সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮` বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান সিদ্দিকী, আব্দুল হামিদ শরীফ, অধ্যাপক হাসিনা বেগম, নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রমুখ।
এআরএস