Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪,

জ্বলছে না ডিএসসিসির ১৫শ’ সড়ক বাতি

রায়হান উদ্দিন

রায়হান উদ্দিন

জানুয়ারি ১৮, ২০২৩, ০৯:২১ পিএম


জ্বলছে না ডিএসসিসির ১৫শ’ সড়ক বাতি
  • ল্যাম্পপোস্ট আছে জ্বলে না বাতি 
  • অন্ধকারে ঘটছে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা 
  • সড়ক বাতিগুলো সচল করার দাবি নগরবাসীর 
  • সড়ক বাতি সচলের কার্যক্রম চলমান- ডিএসসিসি

সারিবদ্ধভাবে লাগানো আছে ল্যাম্পপোস্ট, তবে জ্বলে না বাতি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় নষ্ট প্রায় ১ হাজার ৫শ’ থেকে ৬শ’ সড়কবাতি। নিজস্ব আলোতে চলাচল করছে যানবাহনগুলো। আর অলিগলিতে মোবাইল বা দোকানের আলোতে চলাচল করছেন পথচারীরা। অন্ধকার থাকায় বসে বখাটে-মাদকসেবীদের আড্ডা, নিয়মিতই ঘটে ছোটখাট সড়ক দুর্ঘটনাসহ চুরি-ছিনতাই। পাশাপাশি হচ্ছে অসামাজিক কার্যকলাপও। এমনকি হেনস্থার শিকার হচ্ছেন নারীরাও। সবমিলিয়ে বিব্রতকর বা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন ডিএসসিসির বাসিন্দারা।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায়ও নষ্ট রয়েছে আরও বহু সড়ক বাতি। সেখানে ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। সড়ক বাতিগুলো সচল করার দাবি নগরবাসীর।

ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, গত সপ্তাহে আমরা প্রায় ৪ হাজার বাতির টার্গের করেছিলাম। এখন পর্যন্ত দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রায় ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ ল্যাম্পপোস্টের বাতি নষ্ট রয়েছে। নষ্ট বাতিগুলো ঠিক করার বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরাণ ঢাকার কবি নজরুল কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকা সড়ক বাতিগুলো জ্বলছে না। ফলে সেখানে থাকা গণপরিবহনগুলো নিজস্ব আলোতে চলাচল করছে। এছাড়াও পুরাণ ঢাকার অলিগলিতেও বাতি জ্বলছে না। পথচারীরা দোকানের আলোতে বা মোবাইলের আলোতে চলাচল করছে। এছাড়াও সন্ধ্যার পর ডিএসসিসি এলাকায় সন্ধ্যার পর অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের কাজ করতে দেখা যায়। শুধু পুরাণ ঢাকা নয় ডিএসসিসির অন্যান্য এলাকার অবস্থাও একই। কোথাও জ্বলছে কোথাও জ্বলছে না। নষ্ট বাতির বিষয়ে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষও অবগত রয়েছেন বলে জানান। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নগরের বাসিন্দারা। এমন সুযোগে বখাটে ও মাদকসেবীরা আড্ডা জমাচ্ছেন অহরহ। পাশাপাশি ঘটছে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনাও। এমনকি অনেক নারী শিক্ষার্থী হেনস্থারও শিকার হচ্ছেন প্রায়ই।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় নষ্ট রয়েছে আরও বহু সড়ক বাতি। গুলশান লেকপাড় থেকে লিংরোড গুদারাঘাট ও মায়াগঞ্জ মোড় পর্যন্ত লাগানো ল্যাম্পপোস্টগুলো কখনোই জ্বলে না। তবে বাঁশতলা থেকে লেকপাড় পর্যন্ত কয়েকটি বাতি জ্বলে। হাতিরঝিলের এ সংযোগ রাস্তাটি সন্ধ্যা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দোকানের বাতিতে আলোকিত। দোকানপাট বন্ধের পর পুরো সড়টি থাকে ঘোর অন্ধকারে। লেকপাড়ের এ রাস্তায় নিজস্ব আলোতে যানবাহন ও পথাচারীদের চলাচল। অন্ধকার থাকায় বসে বখাটে-মাদকসেবীদের আড্ডা, নিয়মিতই ঘটে ছোটখাট সড়ক দুর্ঘটনাসহ চুরি-ছিনতাইও। এমনকি প্রগতি স্বরণীর শহীদ হারেজ সড়ক, মসজিদ রোডসহ অন্যান্যা অলিগলিতেও একই অবস্থা। সবমিলিয়ে চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ল্যাম্পপোস্টগুলোর বাতি জ্বলানোর দাবি নগরবাসীর।

আবার ডিএনসিসির বাঁশতলা মরিয়ম টাওয়ার-১ থেকে লেকপাড় পর্যন্ত ল্যাম্পপোস্ট রয়েছে ১৮টি, এর মধ্যে ৯টির বাতি জ্বলছে। গুলশান লেকপাড় থেকে লিংরোড গুদারাঘাট পর্যন্ত ল্যাম্পপোস্ট রয়েছে ৫৫টি, সবকটি বাতি নিভানো রয়েছে। আর গুদারাঘাট থেকে পুলিশ প্লাজার পিছনে মায়াগঞ্জ মোড় পর্যন্ত ল্যাম্পপোস্ট রয়েছে ৪২টি, এখানেও সবকটি বাতি জ্বলছে না। এসব ল্যাম্পপোস্ট লাগানোর পরে কয়েকদিন জ্বললেও গত ৪-৫ বছর ধরে জ্বলছে না। ফলে মোবাইলের আলোতে চলাচল করতে হয়। সড়কে বাতি না জ্বলায় নিয়মিত ঘটছে পতিতাবৃত্তিসহ ছিনতাইয়ের ঘটনা। মোবাইল-টাকা ছিনতাইয়ের বিষয়ে বাড্ডা-গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হলেও তা উদ্ধার হয়নি বলে অভিযোগ ফুটপাতের দোকানিদের।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আতিক বলেন, অনেকদিন ধরে বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় থাকা ল্যাম্পপোস্টগুলো নষ্ট রয়েছে। এছাড়াও পুরাণ ঢাকার অলিগলিতেও ল্যাম্পপোস্টগুলো নষ্ট রয়েছে। এ সুযোগে শিক্ষার্থীসহ অনেক পথচারী ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়েন।

কবি নজরুল কলেজের আরেক নারী শিক্ষার্থী তাহমিমা বলেন, একদিকে ঘিঞ্জি এলাকা অন্যদিকে বাতি না থাকায় বখাটেরা উত্ত্যক্ত করে। একই কথা জানালেন পুরাণ ঢাকার বাসিন্দারাও।

দুর্ঘটনার বিষয়েও কয়েকজন রিক্সাচালক বলেন, অলিগলিতে রিক্সা চালানো তো এমনিতেই কষ্ট, তারপর অন্ধকার। মাঝে মাঝে আমাদের টাকা ছিনতাইকারীরা নিয়ে যায়। পাশাপাশি দুর্ঘটনাও ঘটছে। 

গুলশান লেকপাড়ে চলাচল করা পথচারীরা বলছেন, অন্ধকার থাকার সুযোগে নেশাখোরদের আনাগোনা থাকে অহরহ। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় গুলশান লেকপাড়ের এ পথে আগে চলাচল করলেও এখন করেন না। তবে কয়েকজন একসাথে থাকলে চলাচল করেন।

মিরপুর এলাকার বাসিন্দারা বলেন, সড়ক বাতিগুলো নষ্ট রয়েছে, ঠিক করে আবার নষ্ট হয়ে যায়। বাতি না জ্বললে অপরাধীর সংখ্যা বেড়ে যায়।

পুলিশ প্লাজার পিছনে মায়াগঞ্জ মোড়ে ফুচকা বিক্রি করেন তারেক। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, আমি এখানে ৫-৬বছর ধরে দোকান করি। বছরে ১০দিন বাতি জ্বলে কিনা সন্দেহ আছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময় দোকান শেষ করে বাসায় ফেরার পথে আমার স্যামসাং ব্যান্ডের মোবাইল ও ২৪শ’ টাকা ছুড়ি ধরে টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। এ ছিনতাইয়ের বিষয়ে বাড্ডা থানায় জিডি করি, কিন্তু এর কোন হদিস মেলেনি। ল্যাম্পপোস্ট না জ্বলার কারণে এখানে প্রায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। অন্ধকার থাকায় লেকপাড়ের পাশে অসামাজিক কার্যকলাপও চলে। কেউ কিছু বলে না।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ছুটিতে রয়েছি। পরে কথা বলবো।

একই বিষয়ে জানতে বিদ্যুৎ বিভাগের আরেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম মিয়াকে কয়েক ফোন দেওয়া হলে তিনি তা রিসিভ করেন, রিপোর্টার পরিচয় জানার পর তা কেটে দেন। বিষয়টি নিয়ে জানতে ডিএনসিসির উর্ধ্বতন কারো সাথে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।

নষ্ট ল্যাম্পপোস্টের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ আমার সংবাদকে বলেন, লাইটের বিষয়ে মেয়র মহোদয়ের কড়া নির্দেশনা রয়েছে। সেজন্য আপনারা দেখতে পারবেন সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎকর্মীদের হইচই পড়ে। গত সপ্তাহে আমরা প্রায় ৪ হাজার বাতির টার্গের করেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রায় ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ ল্যাম্পপোস্টের বাতি নষ্ট রয়েছে। নষ্ট বাতিগুলো ঠিক করার বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আপনি যেহেতু আবারও জানিয়েছেন আমি এখনি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করছি।

তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ সার্কেল) মাহতাব আহমেদ এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে নারাজ বলে ফোন কেটে দেন। তিনি প্রতিবেদকের কাছ থেকে কোন কথায় শুনতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

কেএস 

Link copied!