জালাল আহমদ, ঢাবি প্রতিনিধি:
সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩, ০৯:৪৯ পিএম
জালাল আহমদ, ঢাবি প্রতিনিধি:
সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩, ০৯:৪৯ পিএম
ডিএমপির রমনা জোনের এডিসি হারুনের মারমুখী আচরণে ক্ষুব্ধ সবাই।শাহবাগ থানা এবং আশেপাশে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সবসময় এই এডিসি মারমুখী আচরণ করতে দেখা যায়। সচরাচর সরকার বিরোধী পলিটিক্যাল প্রোগ্রামে মারমুখী আচরণ করলেও ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতেন হারুন। কিন্তু গতকাল নারী ঘটিত ব্যাপার নিয়ে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই নেতা কে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় তার শেষ রক্ষা হলো না। তাকে আজ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায় , এডিসি হারুন গত ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে ৩১তম বিসিএসের এক নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ওই সময় নারী কর্মকর্তার স্বামী তার একসময়ের কর্মী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক এবং শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক মুসলিম হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাইম কে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। নারী কর্মকর্তার স্বামীও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং ছাত্রলীগের সাবেক নেতা।
দীর্ঘদিন ধরেই এই নারী পুলিশ কর্মকর্তার সাথে এডিসি হারুনের গোপন সম্পর্কের কথা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করতেন তার স্বামী।
কিন্তু গতকাল হাতেনাতে ধরা পড়লেন হারুন।
সেখানে এডিসি হারুনের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। তখন উপস্থিত ছাত্রলীগের দুই নেতা তার ওপর হামলা চালায়। পরে হারুন দ্রুত সেখান থেকে সটকে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি আবার পুলিশ ফোর্স নিয়ে সেখানে যান। এরপর ওই নারী কর্মকর্তার স্বামীকে না পেয়ে দুই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাকে শাহাবাগ থানায় নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেন।
আরো জানা যায়, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান নিউমার্কেট জোনের এডিসি শাহেনশাহ মাহমুদ। তিনি হস্তক্ষেপ করে ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তার স্বামীকে রক্ষা করেন। কিন্তু এডিসি হারুন দুই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাকে শাহবাগ থানায় তুলে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেন। এরপর অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়লে ওই দুইজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। মুহুর্তেই ছাত্রলীগের দুই নেতা কে নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ছাত্রলীগ সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানান।
বিভিন্ন আন্দোলনে হারুনের মারমুখী আচরণ:
১) ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন:
গত বছরের ১৮ এপ্রিল রাতে নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের ছাত্রদের লক্ষ্য করে পুলিশ সদস্যদের রাবার বুলেট ছোড়ার নির্দেশ দিচ্ছিলেন এডিসি হারুন। এসময় ‘গুলি শেষ হয়ে গেছে’ বলায় এক পুলিশ কনস্টেবলকে থাপ্পড় মারেন তিনি। এ নিয়ে গণমাধ্যমেও খবর প্রকাশিত হয়েছিল। শুধু নিজের সহকর্মীকেই নন- এডিসি হারুন তার নেতৃত্বে শাহবাগে সমাবেশকারীদের পেটানোর ঘটনা, এমনকি তিনি নিজেই লাঠি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের পেটাচ্ছেন- এমন ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অপ্রয়োজনে তার ভুমিকা নিয়ে ছিল সবার ক্ষোভ ছিল।
২)সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে সাংবাদিক ও আইনজীবীদের উপর হামলা:
এ বছর ১৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত ১০ জন সাংবাদিক।
আহতরা হলেন—প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাশ, জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ফজলুল হক, আজকের পত্রিকার নূর মোহাম্মদ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জান্নাতুল ফেরদৌস, বৈশাখী টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন ইব্রাহিম হোসেন, এটিএন বাংলার ক্যামেরা পারসন হুমায়ুন কবির, মানবজমিনের আবদুল্লাহ আল মারুফ।
সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে আইনজীবীরা বিক্ষোভ করলে আইনজীবীদের উপরেও পুলিশ হামলা চালায় এডিসি হারুনের নেতৃত্বে । আজ পর্যন্ত সেই হামলার বিচার হয় নি।
৩)ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সামি আবদুল্লাহ কে পেটানোর অভিযোগ:
গত ৭ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামি আবদুল্লাহ। তখন তার মাথায় ১৪টি সেলাই। এই শিক্ষার্থী জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শাহবাগে একটি সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। সেদিন ‘শান্তিপূর্ণ’ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ব্যাপক লাঠিপেটা করে পুলিশ। এতে তিনিসহ অন্তত ১২ জন আহত হন।
সেদিনের ঘটনায় নেতৃত্বে দেন এডিসি হারুন অর রশীদ। এডিসি হারুন সম্পর্কে এ ধরনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের মন্তব্য হলো ‘তিনি (এডিসি হারুন) শুধু পেটান।’
তাছাড়া চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধির জন্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালিয়ে তাদের কে আটক করে জেলে পাঠানোর অভিযোগ আছে এই হারুনের বিরুদ্ধে।
হারুনের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের দুই নেতা কে থানায় নিয়ে নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং নির্যাতনকারী এডিসি হরুন অর রশিদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আজ ১০ সেপ্টেম্বর রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশের এই বিক্ষোভ মিছিল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এডিসি হারুনের মারমুখী আচরণের শাস্তি দাবি করেন।
ছাত্রদলের উদ্বেগ:
শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে পুলিশের মারধরের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদল।
রোববার রাতে শাখা ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক মাহমুদুল হাসান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।উদ্বেগ জানিয়ে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, ছাত্রলীগের মদদে ছাত্রদের উপর পুলিশি নির্যাতনের কলঙ্কজনক সংস্কৃতির শিকার এখন খোদ ছাত্রলীগ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম রক্ষাকর্তা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ (এডিসি হারুন) ফ্যাসিবাদের দুই ফুট সোলজার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাবি`র শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিমকে থানায় ধরে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছে।
বিগত পনের বছর ধরে পুলিশের সহযোগিতায় ছাত্রলীগ সারাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে ত্রাসের রাজত্ব কয়েম করেছে। ছাত্রদলসহ সকল বিরোধী ছাত্রসংগঠন এবং সাধারণ ছাত্রদের নির্মম নির্যাতন করেছে। নির্যাতিত, মুমূর্ষু ছাত্রদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। পুলিশ তাদেরকে গায়েবি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে এনে আবার নির্যাতন করেছে। বিরোধী ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের উপরে অমানবিক পুলিশি নির্যাতনের ঘটনাগুলোতে বুনো উল্লাস করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
অন্যায়ের শাস্তি পাবেন হারুন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
রাজধানীর শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে ধরে নিয়ে বেধড়ক মারধরের ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ যে অন্যায় করেছেন, তার যথাযথ শাস্তি পাবেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
এডিসি হারুন কে প্রত্যাহার:
ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে থানায় ধরে নিয়ে বেধড়ক পিটুনির ঘটনায় এডিসি হারুন অর রশিদকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে আজ রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এডিসি হারুনকে রমনা বিভাগ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয়েছে।
শেষ রক্ষা হবে না হারুনের:
বারবার মারমুখী আচরণের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বা পুলিশ সদরদপ্তর থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো দীর্ঘদিন স্বপদে বহাল ছিলেন তিনি। কিন্তু ছাত্রলীগের দুই নেতা কে নির্যাতনের ঘটনায় তার শেষ রক্ষা হবে না বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা প্রতিবাদে সরব হয়েছেন।
ভুক্তভোগী শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিমের সহযোদ্ধা এবং
শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ জাহিদুল ইসলাম জানান,১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে
রাজপথে রক্ত দিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ দেশের জন্য রক্ত দেয়। কিন্তু ব্যক্তির জন্য নয়।এডিসি হারুনের দাম্ভিকতার কারণে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের আচরণ করতে সাহস পাবে না।
আরএস