অক্টোবর ১২, ২০২৩, ০৬:৫২ পিএম
বাংলাদেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন সংবাদের জনপ্রিয় ও পরিচিত মুখ বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ত্ব রাশেদ কাঞ্চনের জন্মদিন আজ। চ্যানেল আই ও এটিএন বাংলার পরে বর্তমানে তিনি দেশের প্রথম সম্পুর্ন এইচডি টেলিভিশন চ্যানেল এসএ টিভির নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। একই সঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক রুটে বাংলাদেশের প্রথম নন-শিডিউল্ড প্রাইভেট চার্টার্ড ফ্লাইটস অপারেশনস কোম্পানি গ্যাম্বিট এভিয়েশনের বোর্ড অব ডিরক্টেরস এন্ড ইনভেস্টরস এর চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
রাশেদ কাঞ্চন ১৯৯৫ সালে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মধ্যদিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তারপর মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল কলেজের প্রভাষক এবং স্যার জন উইলসন স্কুলেও শিক্ষকতা করেন সুনামের সঙ্গে।
শিক্ষকতা পেশাতে ইতি টেনে ১৯৯৯ সালে দেশের কৃষি সাংবাদিকতার পথিকৃত ও খ্যাতিমান গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব শাইখ সিরাজের শিষ্যত্ব গ্রহন করেন এবং গণমাধ্যমকে পেশা হিসেবে বেছে নেন-যোগদান করেন চ্যানেল আইতে। শাইখ সিরাজের সরাসরি তত্বাবধানে নিজেকে গড়ে তোলেন একজন অলরাউন্ডার টেলিভিশন কর্মী হিসেবে। মাঠের সাংবাদিকতা, অনুষ্ঠান ও সংবাদ উপস্থাপনা, অনুষ্ঠান নির্মান, সেলস এন্ড মার্কেটিং, টীম অপারেশনস, টেলিভিশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনা, এজেন্সী ম্যানেজমেন্ট এবং গণসংযোগ উদৌগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
বিশ্বের সর্ববৃহত বহুজাতিক গণ সংযোগ সংস্থা গ্লোবালকম এর বাংলাদেশ কান্ট্রি চীফ হিসেবে দক্ষতার সাথে দায়িত্বরত আছেন ২০০৯ সাল থেকেই। ইউরোপের সর্ববৃহত গণসংযোগ সংস্থা আইমার্চেরও তিনি কান্ট্রি হেডের দায়িত্বে আছেন ২০১২ সাল থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক গ্লোবাল গ্রুপ ফর পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিস্ট (জিজিপিএস-ইউএস) এর সম্মানজনক অনারারী চেয়ার এর দায়িত্বেও আছেন বাংলাদেশী সফল এই গণমাধ্যম কর্মী।
ক্যারিয়ারের দীর্ঘ যাত্রায় দেশে বিদেশে নেতৃত্বের এবং সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন সব ক্ষেত্রেই। বাংলাদেশে মার্কিন, রাশিয়ান ও চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সুস্পষ্ট অবদান রেখে চলেছেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় গ্যাম্বিট এভিয়েশন-এ দেশী বিদেশী বিনিয়োগকারিদের অংশগ্রহন একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য এবং বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতের আন্তর্জাতিক অংগনে বড় ধরনের সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। গ্যাম্বিট এভিয়েশন-এ তাঁর নেতৃত্বের প্রতি পুর্ন আস্থা রাখার জন্য তিনি দেশী-বিদেশী সকল বিনিয়োগকারী ও বোর্ড ডিরেক্টরদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তাঁর দীর্ঘ টেলিভিশন ক্যারিয়ারে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য কাজ ছিলো নিজের জীবন বাজি রেখে ২০০৩ সালে ইরাকের বিভিন্ন যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে সরাসরি সংবাদ রিপোর্টং এবং ২০০১ সালে গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত পশ্চিম আফ্রিকান দেশ সিয়েরা লিওনের যুদ্ধ সংবাদ কভার করা। সে সময়ে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে লাইভ রিপোর্টিং তাঁকে ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা এনে দেয়। সকল শ্রেণীর দর্শকদের কাছে তিনি হয়ে উঠেন বিনয়ী ও নিরপেক্ষ এক সংবাদ কর্মীর প্রতীক হিসেবে।
গতানুগতিক রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব তাঁর সাংবাদিকতাকে স্পর্শ করতে পারেনি। এছাড়াও তিনি দেশের প্রথম সংবাদ কর্মী যিনি মাঠের সাংবাদিকতার পাশাপাশি একই সঙ্গে ষ্টুডিওতে সংবাদ উপস্থাপনায়ও বৈচিত্রের স্বাক্ষর রেখেছেন। একজন স্টাইলিষ্ট সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে তাঁর রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
রাশেদ কাঞ্চন তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সবসময় বেশ কিছু বিষয়ে সবার চাইতে নিজেকে ব্যতিক্রম রেখেছেন। সাংবাদিকতা করেও কখনো কোন ধরনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাকে প্রশ্রয় দেননি তিনি। নিজ পেশায় দক্ষতা দেখালেও কখনোই গণমাধ্যম কর্মী বা সাংবাদিকদের কোনো ধরনের সংগঠণের সঙ্গেও নিজেকে সম্পৃক্ত করেননি, এমনকি কোনো সংগঠনের সাধারণ একজন সদস্য হতেও তার রয়েছে ব্যাপক আপত্তি। সাংবাদিকতা পেশায় থেকেও গণমাধ্যমের স্টীকার সংযুক্ত গাড়ি ব্যবহারেও আদর্শিক বিরোধিতা রয়েছে তাঁর। কোনো ধরনের এ্যওয়ার্ড গ্রহন বা এ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে যেতেও তাঁর রয়েছে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতোক্তোর রাশেদ কাঞ্চন তাঁর আজকের অবস্থানের জন্য বিশেষভাব কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাঁর শিক্ষাগুরু ও তাঁর জীবনের আদর্শ শাইখ সিরাজ, চ্যানেল আই এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদপুর রেজা সাগর, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ডঃ মাহফুজুর রহমান, এসএ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এসএ গ্রুপ অব কোম্পানীজ এর চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইষ্ট কোষ্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী এবং মার্কিন লাইফ কোচ ও বিলিয়নেয়ার উদ্দোগতা জে টি ফক্সের প্রতি।
তিনি বলেন, `এই গুনি মানুষ গুলোর আন্তরিকতা ও সরাসরি সহযোগিতা ছাড়া আমার আজকের অবস্থানে আসা কোনো দিনই সম্ভব হতো না। এছাড়াও তাঁর সকল সাবেক ও বর্তমান সহকর্মী এবং তাঁর নিজ পরিবারের সকল সদস্যদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ।
২০০৭ সালে রত্নগর্ভা মা পদকে ভুষিত বেগম মকছুদা কবীর ও সরকারী খাদ্য কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীরের নয় সন্তানের মধ্যে রাশেদ কাঞ্চন পঞ্চম। ব্যক্তি জীবনে রাশেদ কাঞ্চন সদা হাস্যোজ্জল, বিনয়ী ও সদালাপি একজন অতি সাধারণ মানুষ। তিনি দুই কন্যা সন্তান তেরেসা কাঞ্চন ও ইবাদি কাঞ্চন এর গর্বিত জনক। তাঁর সহধর্মিনী হ্যাপি কাঞ্চন একজন সফল ও সুপরিচিত উদ্যোক্তা।
তিনি স্বপ্ন দেখেন শ্রেণী বৈষম্যহীন এক উন্নত রাষ্ট্র ব্যবস্থার-যেখানে জনগন সবসময়ই সম্মানীত হবে রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক হিসেবে। সংবিধানে নাগরিকের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি প্রতিটি নাগরিকের জন্য কর্মসংস্থানকেও মৌলিক অধিকার হিসেবে দেখতে চান এই সংবাদকর্মী। নারীর প্রতি সম্মানশীল ও আগামীর প্রজন্মের প্রতি বিশেষ যত্নবান হবার জন্য রাজনীতিবিদদের প্রতি তাঁর বিশেষ অনুরোধ সবসময়ই প্রাধান্য পায় তাঁর লেখা ও বলায়।
আরএস