Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪,

গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে নারী সাংবাদিকদের মানববন্ধন

সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন মেনে নেয়া হবে না: সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ

মো. মাসুম বিল্লাহ

নভেম্বর ৫, ২০২৩, ০৭:৪০ পিএম


সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন মেনে নেয়া হবে না: সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ

সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন মেনে নেয়া হবে না। এটি একটি পরিকল্পিত হামলা ছিল। বিএনপি ও এর মিত্ররা এটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছে। এজন্য আমাদের এ প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত এরা বিচারের কাঠগড়ায় না দাঁড়ায়।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ৩ নভেম্বর (শুক্রবার) আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক নেতৃবৃন্দরা। গত ২৮ শে অক্টোবর বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। 

এ মানববন্ধনে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যমের কাজই হলো সংবাদ প্রকাশ করা। এমন অন্যায় আচরণ করলে সাংবাদিকরা ভবিষ্যতে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন প্রচার থেকে বিরত থাকবে। 

এ সময় জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, যারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা-নির্যাতন চালিয়েছে তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে। 

তিনি বলেন, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন ঢাকায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। ‘সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা হবে, সাংবাদিকরা চুপ করে থাকবে, সেটি হবে না। সাংবাদিকরা ছেড়ে দেবে না। সারা দেশে সংবাদকর্মীরা ফুঁসে উঠেছে। তারা এ ধরনের অপতৎপরতার জবাব দিতে জানে।’      

ফরিদা ইয়াসমিন আরো বলেন, এখনও নানাভাবে ঘাপটি মেরে আছে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিরা। ২৮ অক্টোবর পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর যে হামলা হয়েছে, আমরা তার প্রতিবাদে দাঁড়িয়েছি। সংবাদমাধ্যম বা গণমাধ্যম একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্ত¤ভ। সংবাদ মাধ্যমের ওপর হামলা- এই চতুর্থ স্তম্ভকে ভেঙে দেওয়া ও গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র।’
সরকারের উদ্দেশে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি বলেন, কারা এই হামলা ঘটিয়েছে- তা এত দিনেও আপনারা খুঁজে বের করতে পারেননি। টেলিভিশনের ফুটেজ দেখে এই হামলাকারীদের চিহ্নিত করুন। শাস্তির আওতায় আনুন। সংবাদকর্মীরা কোনো দলের হয়ে কাজ করে না, জনগণের জন্য কাজ করুন। সাংবাদিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করুন। প্রয়োজনে যত কঠোর হতে হয়, সেই কঠোর ব্যবস্থা নিন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, গত ২৮ অক্টোবর যে হামলা হয়েছে, সেটি নজিরবিহীন। এরই মধ্যে সে হামলা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চলছে। সেই বিভ্রান্তি থেকে জাতিসংঘ পর্যন্ত রক্ষা পায়নি। এটি একটি পরিকল্পিত হামলা ছিল। কিন্তু এখন বিএনপি ও এর মিত্ররা এটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছে। এজন্য আমাদের এ প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে, চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত এরা বিচারের কাঠগড়ায় না দাঁড়ায়। 

তিনি আরও বলেন, আমরা তিনটি দাবি জানিয়েছি। প্রথমত, সাংবাদিকদের ওপর কারা হামলা চালিয়েছে, টেলিভিশনের ফুটেজ দেখে সেটি চিহ্নিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সাংবাদিকদের ওপর হামলার জন্য বিএনপিকে ক্ষমা চাইতে হবে। তৃতীয়ত, যেসব সাংবাদিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

মানববন্ধনে সিনিয়র সাংবাদিক সূর্যবার্তা টুয়েন্টিফোর ডট কমের সম্পাদক সুমি খান বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি বিএনপি জামায়াত একাত্ত হয়ে নিরিহ মানুষের উপর হামলা করছে বার বার। তাদের শিকার হয়ে গত ২৮ অক্টোবর নির্মমভাবে প্রান হারিয়েছে আমাদের পুলিশ ভাই। মারাত্মক আহত হয়েছে ৩২ জন সাংবাদিক ও অসংখ্য পুলিশ। এই হত্যাজজ্ঞ এবং বর্বোচিত নিপিড়ন অত্যাচার আমরা দেখেছি জামায়াত বিএনপি শাষন আমলে। গণমাধ্যমের উপর তৎকালীন ক্ষমতাসীন জামায়ত বিএনপি জোট সরকার সমর্থিত সন্ত্রাসিদের  হামলায় ১২ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছে। আহত ও কারাবন্ধি হয়েছে অনেক সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী। তার মধ্যে আমিও একজন। গত ২৮ অক্টোবর পেশাগত দায়িত্বপালনরত অবস্থায় গণমাধ্যম কর্মীদের উপর যে হামলা হয়েছে তার কোন ক্ষমা নেই। তাদেরকে ক্ষমা চাইতেই হবে। 

সিনিয়র সাংবাদিক ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি নাসিমা আক্তার সোমা বলেন, আমাদের দেশে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানি নতুন কোনো ঘটনা নয়। অনেক আগে থেকেই এ ধরণের ঘটনা ঘটে চললেও বিগত কয়েক দশকে দেশে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, হয়রানি ও আক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ছে যা সংবিধান স্বীকৃত স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার খর্ব করে। বিচারিক তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে সাংবাদিক নির্যাতনে জড়িতের বিচার হওয়ার নজির খুব কমই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাংবাদিক হত্যার বিচার ঝুলে যাচ্ছে। এ কারণে অপরাধী নতুনভাবে আক্রমণের সাহস পাচ্ছে। 

তিনি আরো বলেন, দেশের টেকসই গনতন্ত্র প্রতিষ্টায় জাতীয় সংসদ ও সংবাদপত্রের ভূমিকা বিপরীতমূখী নয়। বরং তা একে অপরের পরিপূরক। রাজনীতিবিদদের স্মরণ রাখা প্রয়োজন, গণমাধ্যম ও রাজনীতিবিদদের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। এ কারণে রাজনীতিবিদদের গণমাধ্যমের প্রতি স্মামানবোধ থাকা উচিত এবং গণমাধ্যমেরও দ্বায়িত্বশীলতা পালন করা আবশ্যক।

সিনিয়র সাংবাদিক লাবণ্য ভূঁইয়া বলেন, সাংবাদিকদের উপর হামলা বন্ধ করতে হবে।  আমাদের যে ৩২ জন সাংবাদিকের উপর জামায়াত বিএনপির নেতা কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন তাদের খুঁজে বের করতে হবে। অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে। সাংবাদিকরা এই অন্যায় মেনে নিবে না। 
নিউজ নাউ বাংলার সম্পাদক শামীমা আক্তার দোলা বলেন, সাংবাদিকরা যে কোন দলের কর্মসূচিতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। তারা কোন দলের হয়ে কাজ করেন না। তাই তাদের ওপর বর্বরোচিত হামলা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে সাংবাদিক নিপীড়নে যুক্তদের পরিচয় উন্মোচন করে তাদের সংবাদ বয়কট করতে হবে। 

দৈনিক ভোরের কাগজের ডেপুটি চিফ রিপোর্টার ঝর্ণা মনি বলেন, স্টপ ভায়োলেন্স এগেনিস্ট জার্নালিস্ট। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে আমাদের ৩২ জন সাংবাদিক নির্মমভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এজন্য বিএনপিকে ক্ষমা চাইতে হবে। এর দায় নিতে হবে। অন্যথায় বিএনপির কোনো সংবাদ আমরা করবো না। করবো না। করবো না। 

একাত্তর টিভির বিশেষ প্রতিনিধি ও ঢাকা রির্পোটার্স ইউনিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শাহনাজ শারমিন বলেন, গণমাধ্যম কখনো কারো বন্ধু হয় না। সবার কথা বলে গণমাধ্যম। গণমাধ্যম কর্মীদের যারা নির্যাতন করেছেন তারা মনে রাখবেন গণমাধ্যম যদি স্বাধীনভাবে কথা বলতে না পারে তাহলে আপনাদের সম্পর্কে গুজব, ভুল বার্তা বা সংবাদ জনগণের কাছে যাবে। তাই গণমাধ্যমকে সরকার বা বিরোধী দল আপনাদের মুখোমুখি দাঁড় করাবেন না। যে কোন পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম কর্মীদের উপর নির্যাতন বন্ধ হোক। 

সাপ্তাহিক পঙক্তি’র সম্পাদক ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না বলেন, আমরা সমাজের সর্বস্থরের মানুষের কথা বলি। মানুষের যে কোন সংকটে পাশে দাঁড়াই। সরকার ও বিরোধীদলসহ সকল রাজনৈতিক সকলের নিউজ কাভার করে থাকি। কিন্তু আমরা যদি কর্তব্যরত অবস্থায় নিরাপদ থাকতে না পারি তাহলে সঠিক চিত্র সাধারণ মানুষ জানবে কিভাবে? গত ২৮ অক্টোবরবিএনপি জামায়াত সাংবাদিকদের উপর অত্যান্ত নির্মম ভাবে হামলা করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। বিএনপি জামায়াতকে অবশ্যই এর জন্যে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। 

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন, যুগ্ম সমপাদক খায়রুল আলম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে)ও কুষ্টিয়া জেলা ইউনিটের সহ সভাপতি আফরোজা ডিউ, দপ্তর সম্পাদক সেবিকা রানী, সাংবাদিক নেতা মানষ ঘোষ, সিনিয়র সাংবাদিক আঙ্গুর নাহার মন্টি, সিনিয়র সাংবাদিক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য রওশন ঝুনু, শরিফা বুলবুল, বিবার্তা ২৪ ডট নেটের সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি। 

অন্যান্যের মধ্যে আরো যারা উপস্থিত ছিলেন, সাজেদা হক, সালমা আফরোজ, হোসনেয়ারা রিয়া, স্বপ্ন রোজ, ইশরাত জাহান স্বর্না, নুূপুর আহমেদ, সানিয়া সুলতানা প্রমুখ। 

আরএস

Link copied!