নভেম্বর ১৮, ২০২৩, ০৫:৫৪ পিএম
বাংলাদেশ, ভারত ও ভূটানের ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার অভাবে বিলুপ্ত হওয়ার পথে শেরপুর জেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর। আসাম, মেঘালয়, ও ভুটানের কাছে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা তুলে ধরতে নাকুগাঁওকে স্মার্ট স্থলবন্দর বিনির্মাণের জন্য ৬টি প্রস্তাব দিয়েছে শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ।
ভারত ও ভুটানের কাছে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা তুলে ধরে এ স্থলবন্দরে স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে স্মার্ট অর্থনীতিতে রূপান্তরের আহ্বান জানায় দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত ‘স্মার্ট নাকুগাঁও স্থলবন্দর উন্নয়নে করণীয় শীর্ষক’ আলোচনা সভায় এ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন আহমেদ।
সভায় মূলপ্রবন্ধের ওপর আলোচনা আলোচনা সভায় মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে, তার জন্য দরকার স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট কানেক্টিভিটি। আর এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম অর্জন করতে অন্যতম হতে পারে নাকুগাঁও স্থলবন্দর। তবে বাংলাদেশ-ভারত এবং ভুটানের ত্রিপাক্ষিক সমঝোতার অভাবে এ স্থলবন্দরটি দিন দিন বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে নাকুগাঁও বন্দর থেকে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৪ হাজার টাকা আয় হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ বন্দরের আয় হতে পারতো হাজার কোটি টাকা। যা দিয়ে শেরপুর জেলার সার্বিক রাষ্ট্রীয় ব্যয় মেটানোর পরেও জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখা যেতো।
তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও স্থলবন্দরের কাজ শুরু হয়। এ বন্দর দিয়ে ১৯টি পণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে, ২০০০ সালে কয়লা ও পাথর ছাড়া সব ধরনের পণ্য বাণিজ্যিকভাবে আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে কয়লা আমদানি ও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এ স্থলবন্দরে কর্মরত প্রায় ২ হাজার ৫০০ কর্মজীবী মানুষ এখন বেকার হতে যাচ্ছেন।
নাকুগাঁও স্থল বন্দরের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভুটান বাংলাদেশ থেকে পোশাক, ওষুধ ও শিল্প কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করতে চায়। অন্যদিকে ভুটান থেকে বাংলাদেশে আসতে পারে ফলমূল ও কৃষি পণ্য।
ভারতের আসামের জমির উদ্দিন রোডে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শুঁটকির বাজার আছে, যেখান থেকে শুঁটকি বাংলাদেশে আমদানি করা যেতে পারে। তাছাড়া ভারতের সুপারির বিশেষ কদর রয়েছে আমাদের এখানে। সেই সুপারিও এই বন্দর দিয়ে আমদানি করা যেতে পারে।
মহিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, স্থলবন্দরটি গত ৮ বছর ধরে চালু হলেও অর্থনৈতিকভাবে এখনও স্বাবলম্বী হতে পারেনি। ফলে দেশের অর্থনীতিতে যে বন্দরটি ব্যাপক ভূমিকা রাখার কথা, সেই স্থলবন্দরটি ভারত সরকারের অসহযোগিতা এবং বাংলাদেশ সরকারেরও কূটনৈতিক তৎপরতার অভাবেই মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। করোনা মহামারির পর থেকে ভারতে ভ্রমণের ইচ্ছুক পর্যটকদের যাতায়াত এখন এই বন্দর দিয়ে বন্ধ রয়েছে। অথচ এই স্থল বন্দর দিয়ে চিকিৎসার জন্য চেন্নাইয়ে যাতায়াত করা খুবই সহজ এবং খরচ কম। ভারতের মেঘালয়, শিলিগুড়ি ও ভুটান যাতায়াতের সবচাইতে সহজ পথ এই নাকুগাঁও স্থলবন্দর।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নাকুগাঁও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান। এছাড়া অতিরিক্ত সচিব দিলদার আহমেদ, অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান রতন, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব শাহ মো. আবু রায়হান আল-বেরুনি, শেরপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান সম্রাট, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি সাদিউজ্জামান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
এআরএস