Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

গৃহকর্মীর মৃত্যু

ডেইলি স্টার নির্বাহী সম্পাদকসহ স্ত্রীর চার দিনের রিমান্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪, ০৬:৩২ পিএম


ডেইলি স্টার নির্বাহী সম্পাদকসহ স্ত্রীর চার দিনের রিমান্ড

গৃহকর্মীর ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমানের আদালত শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এসময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক নাজমুল হাসান তাদের দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। রিমান্ড আবেদন বলা হয়, ‍‍`আসামিদের মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিন কার্যদিবসের মধ্যে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ প্রদান করেন।

আদালতের আদেশ মোতাবেক এবং জেল কোড অনুযায়ী এ মামলার ঘটনা সংক্রান্তে আসামি সৈয়দ আশফাকুল হককে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং আসামি তানিয়া খন্দকারকে কাশিমপুর কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আসামিদ্বয় আলাদা আলাদা কারাগারে থাকায় ঘটনার বিষয়ে তাদেরকে একত্রে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি।

যার ফলে তারা ঘটনা সংক্রান্তে অনেক রহস্যজনক তথ্য দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে ঘটনার মূল রহস্য কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। এ মামলার ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা থাকলেও কোন মেমোরি কার্ড পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে  জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা কৌশলে বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। ধারণা করা যাচ্ছে ক্যামেরায় ঘটনার ভিডিও ধারণ থাকার ফলে আসামিদ্বয় ঘটনার পরপরই সেখান থেকে মামলার আলামত নষ্ট বা গোপন করার জন্য মেমোরি কার্ড লুকিয়ে রাখতে পারে।

এমতাবস্থায় তাদেরকে নিয়ে বাসায় অভিযান পরিচালনা করলে মেমোরি কার্ড উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা এ মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে, মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে আসামিদেরকে নিয়ে মামলার ঘটনার ভিডিও ধারণকৃত ক্যামেরার মেমোরি কার্ড উদ্ধার অভিযান পরিচালনা এবং উভয়েকে মুখোমুখি নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ রিমান্ডে পাওয়া একান্ত আবশ্যক।‍‍`

এরপর আসামিপক্ষে তাদের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে প্রত্যকের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি রক্তাক্ত অবস্থায় গৃহকর্মী প্রীতি উড়ানকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান বাসার কেয়ারটেকার। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয় বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক। এই ঘটনায় নিহত প্রীতি উড়ানের বাবা লুকেশ ওড়ান বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় অবহেলা জনিত মৃত্যুর অভিযোগে দণ্ডবিধি আইনের ৩০৪ (ক) ধরায় অভিযোগ করা হয়েছে।

এ মামলায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি তাদের গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক নাজমুল হাসান তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন মো. সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালত রিমান্ড ও জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একইসঙ্গে তিন কার্য দিবসের মধ্যে তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন আদালত।

মামলার এজাহারে লুকেশ ওড়ান বলেছেন, ‘আটককৃত ব্যক্তিরা (আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার) অবহেলাজনিতভাবে বাসার জানালায় নিরাপত্তা বেস্টনী না দিয়ে অরক্ষিত অবস্থায় রাখার কারণে ওই জানালার ফাঁক দিয়ে আমার মেয়ে প্রীতি উড়ান পড়ে গিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।’

মামলার এজাহারে লুকেশ ওড়ান আরও বলেন, ‘আমি ও আমার স্ত্রী খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারি যে, আমার মেয়ে প্রীতি উড়ান সকাল ৮টার দিকে বাসায় কাজ করার সময় ড্রয়িং স্পেসের জানালায় কোনও নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় থাই গ্লাসের ফাঁকা দিয়ে নিচে পার্কিংয়ের ছাদের ওপর পরে গিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়ে মারা গিয়েছে।

ওই বাসায় গৃহ পরিচারিকার কাজ করা অবস্থায় গত বছরের ৪ আগস্ট ফেরদৌসি নামে আরেক গৃহকর্মী একইভাবে জানালার নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় থাই গ্লাসের ফাঁকা দিয়ে নিচে পড়ে গিয়ে রক্তাক্ত জখম হলে বাসার মালিকের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়। আমরা বুঝতে পারি যে বাসার লোকজনসহ বাসার মালিকের অবহেলা ও গাফিলতির কারণে বাসার জানালার নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে।’

এইচআর

Link copied!