ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪, ০৬:০৬ পিএম
কেউ বাসের হেলপার, কেউ ড্রাইভার, কেউ দোকানের কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক। কেউবা পুরাতন মালামাল ক্রেতা, রাজমিস্ত্রী। আছে সবজি বিক্রেতাও। তবে ভিন্ন পেশা হলেও সন্ধ্যা নামতেই বদলে যায় তাদের পেশা ও পরিচয়। বেড়িয়ে আসে ভয়ংকর রূপ।
ভিন্ন পেশার আড়ালে মোহাম্মদপুর ও তার আশপাশের এলাকায় তারা ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিতে জড়িত। প্রত্যেকের নামে রয়েছে একাধিক মামলা। প্রত্যেকেই জেল খেটেছেন। বেরিয়ে আবারও জড়িয়েছেন গ্যাং কালচারে।
রাজধানীর মোহাম্মাদপুর, আদাবর, হাজারীবাগ এলাকায় ‘কিশোর গ্যাং’ এর বিভিন্ন গ্রুপের ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৬ জনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো কিশোর গ্যাং ‘পাটালি গ্রুপের অন্যতম মূলহোতা সুজন মিয়া ওরফে ফর্মা সজিব এবং ‘লেভেল হাই’ এর অন্যতম মূলহোতা মো. শরিফ ওরফে মোহন ও ‘চাঁন গ্রুপ’, ‘মাউরা ইমরান গ্রুপ’সহ বিভিন্ন গ্রুপের সদস্য। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র।
শনিবার দুপুরে মোহাম্মদপুরের বসিলায় র্যাব-২ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিনায়ক (সিও) ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান।
তিনি বলেন, সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর, হাজারীবাগ ও তার আশেপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য পেয়ে গত শুক্রবার রাতে র্যাবের একাধিক দল মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তারদের মধ্যে ৫ জন পাটালি গ্রুপের, ৬ জন ‘লেভেল হাই’, ৬ জন ‘চাঁন গ্রুপ’, ৫ জন ‘লও ঠ্যালা গ্রুপ’ এবং ৭ জন ‘মাউরা ইমরান গ্রুপের সদস্য। বাকি ৭ জন অন্য গ্রুপের সদস্য। এদের গ্রুপে প্রায় ২০-২৫ জন সদস্য থাকে।
র্যাব-২ এর অধিনায়ক বলেন, পাটালি গ্রুপটি সুজন মিয়া ওরফে ফর্মা সজিবের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যাবত পরিচালিত হয়ে আসছে। নিজেদের মধ্যে অন্তঃকোন্দলের কারণে তারা ২-৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়। লেভেল হাই গ্রুপটি শরিফের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন পরিচালিত হয়ে আসছে। গ্রেপ্তারকৃতরা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো।
তিনি আরও বলেন, তারা একাকী পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যায়। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতো। মাদক সেবনসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত তারা।
গ্রেপ্তারদের পেশা সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা বিভিন্ন গাড়ির হেলপার ও ড্রাইভার, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, পুরাতন মালামাল ক্রেতা, সবজি বিক্রেতা ইত্যাদি পেশার আড়ালে তারা মূলত মোহাম্মদপুর ও তার আশেপাশের এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করতো বলে জানা যায়। গ্রেপ্তারের পর আসামিদের বিরুদ্ধে বাকি আইনি প্রক্রিয়া নেওয়া হচ্ছে।
এইচআর