নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
ট্যুরিস্ট ভিসায় সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে লোক পাঠানোর নামে অভিনব প্রতারণা হচ্ছে খোদ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে। সুযোগ বুঝে ট্যুরিস্ট ভিসায় অথবা ভুয়া ভিসায় বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য এবং সেনজেনভুক্ত বিভিন্ন দেশে ১৬-১৮ লাখ টাকার বিনিময়ে গত দেড় বছরে আড়াই শতাধিক মানুষকে অবৈধ পন্থায় পাঠানো হয়েছে। ধরা পড়ে তাদের অনেককে পাঠানো হয়েছে শূন্য হাতে, কেউ জেল খেটেছেন, কেউ এখনো রয়েছেন জেলেই।
সর্বশেষ গত ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে বিমানবন্দর থানাধীন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা টার্মিনাল-২ এর পূর্ব পাশের বাদাম গাছের নিচে রাস্তার উপর গোপনে অবৈধভাবে জাল ভিসা ব্যবহার করে পরস্পর যোগসাজসে বিদেশে পাঠানোর পায়তারা চলছিল। বিষয়টি টের পেয়ে এপিবিএন এর সদস্যরা ডিবি পুলিশকে খবর দেয়।
এপিপিএনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যৌথভাবে ডিবি পুলিশরা অভিযান চালিয়ে চক্রের দুই হোতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও মোহাম্মদ কবির হোসেনসহ ৫জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতার অন্যরা হলেন বিদেশ যেতে ইচ্ছুক যাত্রী জানে আলম, সাব্বির মিয়া, সম্রাট সওদাগর।
জব্দ করা হয় তিনটি পাসপোর্ট, ৩ টি জাল ভিসা, ৪ টি এনআইডি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশের স্পেশাল কার্ড, ৪টি মাস্টার- ভিসা কার্ড, ৫টি মোবাইল, ৩টি ই-টিকেট, ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা সংশ্লিষ্ট ৫-৬ পাতা জাল ডকুমেন্ট, ১টি ড্রাইভিং লাইসেন্স, নগদ ১৬ হাজার টাকা।
ডিবি পুলিশ বলছে, আদালতের নির্দেশে এক দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ৩ যাত্রী স্বীকার করেছে ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা দালালদেরকে দিয়ে এই অবৈধ পথে ফ্রান্স, ইতালি এবং গ্রিসে যাচ্ছিলেন তারা। দুই হোতার বক্তব্যে উঠে এসেছে বাংলাদেশ বিমানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কারো কারো এই চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার(২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবিতে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মানবপাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে লাখ লাখ টাকা খোয়াচ্ছে সাধারণ মানুষ। আমরা অনেকবারই বলেছি।
তিনি বলেন, এখন নতুন পন্থা অবলম্বন করছে দালাল চক্রের সদস্যরা। তারা বাংলাদেশ বিমানের সিকিউরিটি ম্যান, কুয়েত এয়ারওয়েজের বুকিং সহকারী, কিছু জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান ও ট্রাভেল এজেন্সিসহ দক্ষ কম্পিউটার অপারেটর মিলে শক্তিশালী একটি চক্র যারা ট্যুরিস্ট ভিসার কথা বলে সেনজেন ভিসাভুক্ত দেশে কোনো রকম পাঠিয়ে দেবার চেষ্টা করছে। এরপর পৌঁছে গেলে আর ফেরত আসতে হবে না এই বলে কারো কারো কাছ থেকে ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
ডিবি প্রধান বলেন, এই কাজে যারা জড়িত তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা বলেছে, এয়ারলাইন্সের সিনিয়র কর্মকর্তা, সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার, সুপারভাইজাররা জড়িত থাকতে পারে বলে তথ্য পেয়েছি।
গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জেনেছি, পুরো চক্র মিলে আড়াই শ’ মানুষকে তারা খপ্পরে বা প্রলোভনে ফেলে ট্যুরিস্ট ভিসায় পাঠিয়েছে। যাদের অনেকে মানবেতর জীবন যাপনের পর দেশে ফিরে এসেছে। কেউ এখনো জেল খাটছে। এই চক্রটির সঙ্গে এজন্যই সিনিয়র কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারে বলে আমাদের ধারণা-কারণ আড়াই শ’ লোক বিদেশ যেতে পেরেছে অবৈধ পন্থায়! আমরা অবশ্যই রিমাণ্ডে নিয়ে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো, তারা কীভাবে টাকাটা হাতিয়ে নিচ্ছে। কারণ এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের কিছু দালাল চক্রের সদস্যরাও রয়েছে বলেও দাবি করেন হারুন।
জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে বিমানের কাউকে ছাড় নয় যদি বাংলাদেশ বিমানের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকেন তাহলে কি ধরনের ব্যবস্থা নেবেন জানতে চাইলে হারুন বলেন, বিমান বাংলাদেশের নিয়োগের প্রশ্নফাঁস থেকে শুরু করে অনেক কিছুর ব্যাপারে আমরা তদন্ত করেছি। এইক্ষেত্রে আশা করছি জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো।
আরএস