নিজস্ব প্রতিবেদক:
জুন ২, ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক:
জুন ২, ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম
ফ্রিল্যান্সিংয়ের নামে হাজারো মেয়ের সাথে প্রতারণা করছেন লিজা। ঘরে বসে মোবাইলেই করতে পারবেন ফ্রিল্যান্সিং, মাসে আয় লাখ লাখ টাকা।
অনলাইন ক্লাসে শেখানো হয় অ্যাডভান্স লেভেলের ডিজিটাল মার্কেটিং। কোর্স ফি মাত্র ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। শুধু মেয়েরাই পাবেন এমন সুবর্ণ সুযোগ।
ফেসবুকের ভিন্ন গ্রুপে এমন পোস্ট দিয়ে ছাত্রী সংগ্রহ করেন সফল ফ্রিল্যান্সার পরিচয় দেওয়া সিনথিয়া আক্তার লিজা। অ্যাডভান্স লেভেলের মার্কেটিং শিখানোর কথা থাকলেও শেখান বেসিক, তার বিরুদ্ধে কথা বললেই বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হয়, কোর্স শেষ করার আগেই গ্রুপ থেকে বের করে দেন। এভাবে অনলাইনে মেয়েদের টার্গেট করে বিক্রি করেন ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কোর্স। শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েরা তার ফাঁদে পা দিলেই হাতিয়ে নেন হাজার হাজার টাকা। ফ্রিল্যান্সিং নয় এভাবে মাসে আয় করেন লাখ লাখ টাকা তাতেই তিনি হয়েছেন সফল (ভুয়া) নারী ফ্রিল্যান্সার, পেয়েছেন পুরস্কার আর মানুষকে শুনিয়েছেন ভুয়া সফলতার গল্প।
পড়াশোনার পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে চেয়েছিলেন খুলনার মেয়ে মেহরোজ সামান্থা। ফেসবুকের গ্রুপে শূন্য থেকে কোটিপতি হওয়া লিজার গল্প পড়ে সেই স্বপ্ন আরও ডানা মেলে। লিডিং লাইটের ফেসবুক পেইজে স্বল্প মূল্যের কোর্স পেয়ে হয়ে যান ফ্রিল্যান্সিংয়ের শিক্ষার্থী।
সামান্থা বলেন, ‘আমাদের মোবাইলে বেসিক টু অ্যাডভান্স লেভেলের ডিজিটাল মার্কেটিং শিখানোর কথা ছিল। কোর্স মডিউল অনুযায়ী না শিখিয়ে মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন, অশ্লীল ভাষায় গালি দিতেন। কেউ কোনো প্রশ্ন করলেই গ্রুপ থেকে বের করে দিতো লিজা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৭ ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মোবাইল দিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখাবেন তাই ভর্তি হয়েছিলাম। ওনি ফেইক ইনকামের স্ক্রিনশট দিয়ে মেয়েদের আকৃষ্ট করে কোর্সে ভর্তি করিয়ে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন আইডি তৈরি আর বিক্রি করা শেখাতেন, যেগুলো ইউটিউব দেখেই শেখা যায়।’
নওগাঁ থেকে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চেয়েছিলেন বর্ষা ইসলাম। তবে সেই স্বপ্নপূরণ হয়নি। তিনি বলেন, ‘লিজার নিজেরই কোন মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট নাই। এনিয়ে একদিন প্রশ্ন তুললে আমাকে তার গ্রুপ থেকে বের করে দেন। আমার মতো গ্রামের হাজার হাজার মেয়ে তার কোর্স কিনে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তিনি ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি শেখাতেন এবং শিক্ষার্থীদের এনআইডি সংগ্রহ করেছেন এতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি শিখানোর কথা স্বীকার করলেও প্রতারণার অভিযোগ অস্বীকার করে লিডিং লাইটের স্বত্বাধিকারী সিনথিয়া আক্তার লিজা বলেন, ‘আমি তো মানুষ ফেরেশতা না, ভুল তো হতেই পার। ভুল সবারই আছে, আমি ক্লাস করিয়েছি কিন্তু ওরা শিখতে পারেনি, এটা কী আমার দোষ বলেন?
যারা ক্লাস ফাঁকি দিয়েছেন তারাই এসব অভিযোগ দিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং কোর্স কেনার আগে জেনেশুনে কেনার তাগিদ দিয়ে ফ্রিল্যান্সার মো.ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘কম দামে কোনো কোর্স পেলেই কেনা উচিত নয়। সস্তা জিনিস ভালো হয় না। প্রশিক্ষকের প্রোফাইল দেখে তারপর কোর্স কিনতে হবে।
মোবাইলে ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার সুযোগ নেই তবে ছোট খাটো সমস্যার সমাধান সম্ভব। ডিজিটাল মার্কেটিং মোবাইল দিয়ে কখনোই করা সম্ভব না।’
বিআরইউ