নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ১৭, ২০২৪, ১১:২৯ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ১৭, ২০২৪, ১১:২৯ এএম
দীর্ঘ ৩১ দিন বন্ধের পর আজ থেকে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন না হওয়ায় মেট্রোরেল আজও চালু করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ।
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুলাই মেট্রোস্টেশনে হামলা ভাঙচুরের পর থেকেই বন্ধ রয়েছে মেট্রোরেল চলাচল।
শনিবার (১৭ আগস্ট) সকালে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইফতেখার হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেলে প্রয়োজনীয় কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ সম্পন্ন হয়নি। তাই যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ায় আজ মেট্রোরেল চালু করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত একটি তথ্য বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সবকিছু জানানো হয়েছে।
এদিকে গত রোববার (১১ আগস্ট) শিগগিরই মেট্রো চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম, এ, এন, ছিদ্দিক। তিনি বলেছিলেন, আমরা মেট্রো চলাচলের জন্য পূর্ণদমে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছি।
কবে নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাত্রীবহন শুরু করার আগে কয়েকদিন ট্রেন চলাচল করতে হবে। আপনারা দেখতে পারবেন ট্রেনটা চলাচল করছে। এটাকে আমরা বলি ব্লাঙ্ক অপারেশন। এই ব্লাঙ্ক অপারেশন শেষে সরকারের পক্ষ থেকে ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয়া হবে।
ক্ষতিগ্রস্থ স্টেশনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে এই দুইটি স্টেশন চালু করা সম্ভব না। এই স্টেশন দুটি বাদ রেখে মেট্রো চলাচল করবে।
গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারের পরদিনই ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৭ আগস্ট থেকে মেট্রোরেল চলাচল করবে। তবে এমন ঘোষণা দেয়া হলেও হঠাৎই ১৫ আগস্ট নতুন ঘোষণা দিয়ে জানানো হয় ১৭ আগস্ট শনিবার থেকে ঢাকায় মেট্রোরেল চালু হচ্ছে না।
ওইদিন ডিএমটিসিএলের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার ১১ আগস্ট ডিএমটিসিএলের আওতায় পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণাধীন এমআরটি লাইন-৬–এর মেট্রোরেল চলাচলে প্রয়োজনীয় কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সাত দিনের মধ্যে পুনরায় চালু করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে। তবে অনিবার্য কারণবশতঃ মেট্রোরেল পুনরায় চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনো শুরু করা সম্ভব হয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাত্রীবিহীন পরিচালন পরীক্ষণ শেষে মিরপুর-১০ এবং কাজীপাড়া স্টেশন ছাড়া বাকি ১৪টি স্টেশন সমন্বয়ে মেট্রোরেল পুনরায় চালুর নিমিত্তে মেট্রোরেল সিস্টেম ও মেট্রোরেলে যাতায়াতকারী যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেট্রোরেল পুনরায় চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য ডিএমটিসিএল আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।
এর আগে, আন্দোলনকারীদের ডাকা `কমপ্লিট শাটডাউন` ঘিরে সৃষ্টি হয় সহিংসতা। রণক্ষেত্রে রূপ নেয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান। রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় চালানো হয় হামলা। আগুন দেয়া হয় সরকারি গাড়ি, পুলিশ বক্সসহ সরকারি ভবনে। ভাঙচুর করা হয় নগরবাসীর যাতায়াতের দ্রুতগামী যান মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনও।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেলের দুটি স্টেশন এক বছরেও চালু করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, মেট্রোরেল না থাকায় মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। ৩০ মিনিটের পথ দুই ঘণ্টায়ও যেতে পারছে না। মেট্রোরেল কবে নাগাদ চালু হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। শনিবার (২৭ জুলাই) সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজধানীর মহাখালীতে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুভবনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিদর্শন শেষে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি আরও বলেছিলেন, আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন ধ্বংসপ্রাপ্ত। এটা এক বছরেও যন্ত্রপাতি এনে সচল করা সম্ভব হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
মেট্রোরেল চলাচল কবে নাগাদ শুরু হতে পারে জানতে চাইলে কাদের বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, ওই সিদ্ধান্তের ওপর আমরা পর্যায়ক্রমে যেখানে যা করার সেটা করব। তার সিদ্ধান্তের আগে আমরা কোনো কিছু করতে চাই না। তিনি সব কিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং তিনি প্রত্যক্ষভাবে বিটিভিসহ বিভিন্ন ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনায় গেছেন। সব কিছুর ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তার কাছে আছে। কী অবস্থায়, কখন, কোনটা চালু করা যাবে আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, এটা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কাজ নয়। তারা কোটার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। রাজনৈতিক মতলবে বিএনপি-জামায়াত এই আন্দোলনের ওপরে ভর করেছে তাদের দীর্ঘ দিনের ব্যর্থতা অবসানের জন্য। ২০১৮ সালে তারা ব্যর্থ হয়েছে, নির্বাচনের আগে অক্টোবর মাসে তারা ব্যর্থ হয়েছে, নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে তারা অংশ নেয়নি—আজকে ক্ষমতার লিপ্সা তাদের পেয়ে বসেছে।
প্রসঙ্গত, ৫ জুন সরকারি দফতর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত। ওই দিন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী আন্দোলনে নামেন। এ অবস্থায় আদালতের ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদনটির ওপর শুনানির জন্য ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বিআরইউ