Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

আল জাজিরার অনুসন্ধান

যুক্তরাজ্যে ৩৬০, দুবাইয়ে তিন শতাধিক বাড়ি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের!

আমার সংবাদ ডেস্ক

আমার সংবাদ ডেস্ক

অক্টোবর ২২, ২০২৪, ০৫:১৬ পিএম


যুক্তরাজ্যে ৩৬০, দুবাইয়ে তিন শতাধিক বাড়ি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের!

মাথায় চোখ ওঠার মতো খবর দিচ্ছে আল জাজিরা। কাতারভিত্তিক এ সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনে যে বাড়িতে থাকেন, সেটির দাম বাংলাদেশি টাকায় ১৬৮ কোটি টাকা।

এছাড়াও  আলোচিত এ সাবেক মন্ত্রীর যুক্তরাজ্যেই রয়েছে ৩৬০টি বাড়ি। আর মধ্যপ্রাচ্যের আমিরাতের দুবাই শহরেই রয়েছে তিন শতাধিক বাড়ি।

আল জাজিরার ইনভেস্টিগেশন বলছে, লন্ডনের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের পাশ দিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর হেঁটে যাওয়ার দৃশ্যও তাদের ইনভেস্টিগেশন টিমের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। লন্ডনে ৯০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের ছয়টি সম্পত্তির মালিক সাবেক ভূমিমন্ত্রী। যুক্তরাজ্যে তার যে সম্পত্তির সাম্রাজ্য রয়েছে, এটি তার একটি ছোট অংশ।

আল জাজিরা বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রে সাইফুজ্জামানের আরও কয়েকশ অ্যাপার্টমেন্ট আছে। গত সেপ্টেম্বরে ‘দ্য মিনিস্টার্স মিলিয়নস’ শিরোনামের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে আল-জাজিরা এসব সম্পত্তির মূল্য আনুমানিক ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বলে ধারণা দিয়েছিল।

সাবেক এই মন্ত্রী আল-জাজিরার পরিচয় গোপন করা (আন্ডারকভার) সাংবাদিকদের কাছে গর্ব করে বলেছিলেন, যুক্তরাজ্যের লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে তার অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে তিনি শুধু যুক্তরাজ্যেই ৩৬০টির বেশি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন।

২০২৩ সালে নতুন করে ফাঁস হওয়া সম্পত্তির তথ্যে দেখা যায়, সাইফুজ্জামান সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৫০টির বেশি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক। এই সম্পত্তির মূল্য ১৪ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।

নথি থেকে জানা যায়, সাইফুজ্জামানের স্ত্রী রুকমিলা জামান দুবাইয়ে ২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের আরও ৫০টি সম্পত্তির তালিকাভুক্ত মালিক।

দুবাইয়ে সম্পত্তির যে তথ্য আগে ফাঁস হয়েছিল (২০২০ ও ২০২২ সালের), তাতে সেখানে এই দম্পতির ৫৪টি সম্পদের মালিকানার তথ্য উন্মোচিত হয়েছিল। এই তথ্য প্রথমে পায় সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ (সি৪এডিএস)। পরে তা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ই২৪ ও অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) মাধ্যমে পায় আল-জাজিরা।

গোপনে ধারণ করা ভিডিওতে সাইফুজ্জামান দুবাইয়ের অভিজাত অপেরা এলাকায় একটি পেন্টহাউসের মালিক হওয়ার বিষয়ে গর্ব করেছিলেন। জমির রেকর্ড যাচাই করে আল-জাজিরা নিশ্চিত হয়েছে, তিনি সেখানে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক, যার দাম ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি।

নতুন তথ্যে দেখা গেছে, সাবেক এই মন্ত্রী ও তার স্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩০০টির বেশি উচ্চমূল্যের অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে প্রায় ১৭ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছেন। সামগ্রিকভাবে এই দম্পতি বিশ্বজুড়ে ৬০০টির বেশি সম্পত্তির তালিকাভুক্ত মালিক।

বিদেশে সাইফুজ্জামান কতটি বাড়ির মালিক, তা নিয়ে মঙ্গলবার ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি, যিনি আল জাজিরার অনুসন্ধানী টিমেও কাজ করেন।

তিনি লিখেছেন, বলেছিলাম না লন্ডন শহরে চোরেরা ক্যাপ পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে? এই যে দেখুন বিশাল বপু সেই চোরকে। আমরা যে তাকে অনুসরণ করছিলাম সেটা তিনি মোটেও বুঝতে পারেননি। সম্প্রতি জনাব চোরের দুবাইতে ৩০০টিরও বেশি বাড়ির খোঁজ পেয়েছি আমরা। যা আজ আল জাজিরা আই-ইউনিটের এক নতুন প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।

জুলকারনাইন সায়ের সামি লিখেছেন, এর আগের প্রতিবেদনে আমরা তার লন্ডনের ৩৬০টি বাড়ি, দুবাইর ৫৪টি ও যুক্তরাষ্ট্রের ৯টি সম্পত্তির বিস্তারিত তুলে ধরেছিলাম। আজ প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং আগেরটি মিলিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামান এবং তার সন্তানদের মোট ৭২৩টি বাড়ির দালিলিক প্রমাণ বের করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। আর এসবের মোট মূল্য ছাড়িয়েছে ৮৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

এদিকে, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার সাবেক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ নিয়ে জোরেশোরে তদন্ত শুরু করেছে। সেই তালিকায় আছেন সাইফুজ্জামানও। সাবেক এই মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে। যদিও তিনি পরিবারসহ দেশের বাইরে।

বিদেশে থাকা বাড়ি ও সম্পত্তির বিষয়ে সাইফুজ্জামান আল-জাজিরাকে বলেছেন, বিদেশে সম্পত্তি কেনার জন্য তিনি যে অর্থ ব্যবহার করেছেন, তা বাংলাদেশের বাইরে তার বৈধ ব্যবসা থেকে এসেছে। তিনি অনেক বছর ধরেই এই ব্যবসার মালিক।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর দাবি, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি হিসেবে তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

বিআরইউ

Link copied!