Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

বহাল তবিয়তে পিজির মাস্টারমাইন্ড ডা. ফাতেমা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫, ০৭:৪৪ পিএম


বহাল তবিয়তে পিজির মাস্টারমাইন্ড ডা. ফাতেমা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত চার আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) প্রাঙ্গণে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। ওই সময় এক শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। চালানো হয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। ওই ঘটনায় কারা সম্পৃক্ত তা শনাক্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি ১৪৪ জন শিক্ষক, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে। 

এসব শিক্ষক, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চার ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল বলে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। নৃশংস ওই ঘটনার নেতৃত্ব দান ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে যারা ছিলেন তাদের মাস্টারমাইন্ড ক্যাটাগরিতে শনাক্ত করা হয়, এদের সংখ্যা ২৩ জন। এছাড়া এক ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যাচেষ্টায় জড়িত হিসেবে ১৬ জন, মারামারিতে জড়িত হিসেবে ২৫ শিক্ষক ও চিকিৎসক এবং একই অপরাধে ৮০ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে শনাক্ত করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন পিজি হাসপাতালে নৃশংসতা যাদের নেতৃত্বে ও পরিকল্পনায় সংগঠিত হয় তাদের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ডা. ফাতেমা জোহরা। যিনি পিজি হাসপাতালের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। হাসপাতালের নিজস্ব তদন্তে কমিটির প্রতিবেদনে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ফাতেমা জোহরার নাম উল্লেখ রয়েছে। ডা. ফাতেমা জোহরা পিজি হাসপাতালের খুবই প্রভাবশালীদের একজন ছিলেন। এই প্রভাবের নেপথ্যে ছিলেন তার স্বামী শাখাওয়াত মুন। ফাতেমা জোহরার স্বামী শাখাওয়াত মুন ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব। স্বামী প্রভাবশালী ও প্রধানমন্ত্রী ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়ায় তিনি নিয়মবহির্ভূতভাবে নানা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অনুমোদিত ডাক্তারদের সংগঠন ‘স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ’ (স্বাচিপ)-এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে (সদস্য নং-৭৫) কাজ করে যাচ্ছেন ফাতেমা জোহরা। স্বামী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব শাখাওয়াত মুনের প্রভাব ব্যবহার করে তিনি পিজি হাসপাতালের সহকারী প্রক্টর ও সহকারী হল প্রভোস্ট পদ বাগিয়ে নেন। এছাড়াও হাসপাতালের কেন্দ্রীয় সাজসজ্জা কমিটির সদস্য সচিব, সেমিনার সাবকমিটির সদস্য এবং ক্যাডাভারিক ট্রান্সপ্লান্ট কমিটির সদস্যের পদ হাতিয়ে নেন তিনি। পিজিতে যোগদানের মাত্র তিন বছরের মধ্যে এতগুলো পদ দখল করে নিয়েছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রভাব, স্বামীর প্রভাবে তিনি অনেক যোগ্য ও দক্ষ অধ্যাপককে টপকে উপরে উঠতে পেরেছিলেন।

পিজি হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ) সূত্রে জানা গেছে, একই বিভাগের ১৩ বছরের সিনিয়র একজন নারী ডাক্তারের পদোন্নতি ঠেকিয়ে ক্ষমতার জোরে জুনিয়র হয়েও পদোন্নতি বাগিয়ে নেন ফাতেমা। পদোন্নতি বঞ্চিত ওই নারী চিকিৎসক ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সমর্থক হওয়ায় তাকে বঞ্চিত করা হয়। শুধু পদোন্নতি বঞ্চিত করেই থেমে যাননি, পদোন্নতির আবেদন করায় সিনিয়র ওই ডাক্তারকে পিজি হাসপাতাল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

নন্দিত মুফাসসির আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর সময় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ ওঠে। ওই সময় অভিযোগের তীর যে চিকিৎসকের দিকে যায় তিনি ছিলেন বিএসএমএমইউ’র তৎকালীন হল প্রভোস্ট, আর ডাক্তার ফাতেমা জোহরা ছিলেন সহকারী হল প্রভোস্ট। ফ্যাসিশক্তির দাপটে নিজ বিভাগে তখনকার বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, নিজ বিভাগে সিনিয়র ডাক্তারদের রুম দখল করা, বিভিন্ন অজুহাতে কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগগুলো সম্পর্কে বক্তব্য জানতে ডা. ফাতেমা জোহরার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার মন্তব্য জানা যায়নি।

আরএস

Link copied!