ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির প্রতি বেতার কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির নিন্দা

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত একীভূত তথ্য সার্ভিস বিষয়ে বিসিএস ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিসিএস তথ্য সাধারণ বেতার কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি৷

বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে সংগঠনটি৷

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিসিএস ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশন নামে গণযোগাযোগ অধিদপ্তর ও তথ্য অধিদপ্তরে কর্মরত বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারের একটি সাব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন থেকে দেয়া একটি বিবৃতি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অত্যন্ত অপেশাদার ও ঠুনকো কিছু বিষয় সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা প্রথমেই এধরণের বিবৃতির তীব্র নিন্দা জানাই।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, ২৪ এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত এই সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জনকল্যাণমুখী, দলীয় লেজুরবৃত্তিবিহীন একটি জনপ্রশাসন গড়ে তোলা। তারই প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ বরেণ্য বিজ্ঞজনের সমন্বয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনসহ একাধিক কমিশন গঠন করেছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ কমিশন তাদের সংস্কার প্রস্তাব সরকারের নিকট পেশ করেছেন। আর তখনই আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে লক্ষ্য করছি যে, বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারের একটি সাব ক্যাডার যারা নিজেদের তথ্য-সাধারণ ক্যাডার নামে পরিচয় দিচ্ছেন (বাস্তবে এই নামে কোন ক্যাডার বা সাব ক্যাডার নেই) তারাসহ বেশ কয়েকটি সার্ভিস জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছেন, এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিবৃতি দিচ্ছেন, সার্ভিস সম্পর্কে অসত্য ও অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছেন৷

তারা আরও বলেন, এ ধরনের কার্যক্রম নি:সন্দেহে জনপ্রশাসন সংস্কারের মহতী কাজকে বাধাগ্রস্ত করার চক্রান্ত। তাদের আচরণ ও বিবৃতিতে মনে হচ্ছে তারা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে যে প্রক্রিয়ায় তাদের কার্যক্রম চালিয়েছে তারা এখনো তাদের সেই ‘কমফোর্ট জোন’ ত্যাগ করতে চাচ্ছেন না। তারা নিজেদের সংস্কারে অনিচ্ছুক, তারা ভুলে গেছেন যে সরকারি চাকুরি হলো সরকারের ইচ্ছায় সরকার নির্ধারিত উপায়ে জনগণের সেবা করা, সরকারি চাকরি মানে তাদের ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধা ও হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার নিশ্চয়তা বিধান করা নয়। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার এর সার্ভিস জনমুখী ছিল না। তাদের বিবৃতি সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের সেবাবিহীন সিভিল সার্ভিস এবং বিভাজিত সিভিল সার্ভিস এর প্রতিধ্বনি বলেই প্রতিফলিত হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বর্তমান বিসিএস তথ্য ক্যাডারের ঐতিহাসিক লিগ্যাসি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৩ সালে। তৎকালীন পাকিস্তান আমলে, ব্রিটিশ আমলে নয়। সেন্ট্রাল ইনফরমেশন সার্ভিস এই ক্যাডার ১৯৬৩ সালে গঠন করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল সরকারি মালিকানাধীন তথ্য মাধ্যমে এবং বিদেশে কূটনৈতিক মিশনগুলিতে কর্মরত অফিসারদের জন্য চাকরি কাঠামোর ব্যবস্থা করা। ১৯৭০ সালে এই ক্যাডারের নাম পরিবর্তন করে ইনফরমেশন সার্ভিস অব পাকিস্তান (আইএসপি) রাখা হয়। এই ক্যারিয়ারের চাকরি তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের অধীন সংগঠনসমূহ যেমন বেতার ও টেলিভিশনের বিভিন্ন পদে এবং বিদেশে কূটনৈতিক মিশনসমূহের পদে সীমাবদ্ধ ছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৯১ সালের ৯ম বিসিএস পর্যন্ত একইসাথে গেজেটও হয়েছে।

পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই যে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এর প্রস্তাব, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন এর প্রস্তাবসহ সরকারের অন্যান্য সকল সংস্কার কমিশন এর প্রস্তাবের প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন থাকবে এবং বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক ও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সদস্য হিসেবে বিসিএস তথ্য সাধারণ বেতার কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সকল কর্মকর্তা দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে জনপ্রশাসন সংস্কারকে শতভাগ সমর্থন করে।

ইএইচ