Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫,

দেশে প্রথমবার বুক না কেটে পুরোনো ভাল্বে নতুন ভাল্ব প্রতিস্থাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ১৯, ২০২২, ০২:১৫ পিএম


দেশে প্রথমবার বুক না কেটে পুরোনো ভাল্বে নতুন ভাল্ব প্রতিস্থাপন

দশ বছর আগে অ্যাওর্টিক ভাল্ব প্রতিস্থাপন করা হয় মো. আকবর হোসেনের (ছদ্মনাম)। সম্প্রতি শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। সামান্য সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হাঁপিয়ে উঠতেন। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায়, ভাল্বটি আবার সরু হয়ে গেছে। ফলে দ্বিতীয় দফায় বুক কেটে ভাল্ব প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু বয়স বেশি হওয়ায় তাতে মৃত্যুঁঝুকি বেশি। এ কারণে বুক কেটে ভাল্ব প্রতিস্থাপনে রাজি ছিলেন না সরকারের সাবেক এ সচিব। 

দেশে সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতালে প্রথম দফায় বুক না কেটেই অ্যাওর্টিক ভাল্ব প্রতিস্থানের দৃষ্টান্ত থাকলেও দ্বিতীয় দফায় এমন ভাল্ব প্রতিস্থাপনের নজির নেই। সেটিই এবার করে দেখালেন দেশের চিকিৎসকেরা। 

রোববার (১৭ এপ্রিল) আকবর হোসেনের দেহে রাজধানীর হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক প্রদীপ কুমার কর্মকারের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক ভাল্ব ইন ভাল্ব (পুরোনো অ্যাওর্টিক ভাল্বের ভেতরে নতুন ভাল্ব) অপারেশন সম্পন্ন করেন। ভালো আছেন রোগীও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৭৫ বছর বয়সী আকবর হোসেনের ২০১১ সালে প্রথমবার বুক কেটে হার্টের অ্যাওর্টিক ভাল্ব প্রতিস্থাপন করা হয়। এতদিন ভালোই ছিলেন। সম্প্রতি ধরা পড়ে, ভাল্বটি আবার সরু হয়ে গেছে। দ্বিতীয় দফায় বুক কেটে ভাল্ব প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু আকবর হোসেন তাতে রাজি ছিলেন না। দেশে-বিদেশে বিকল্প চিকিৎসার সন্ধান করতে থাকেন। পরে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার প্রদীপ কুমার কর্মকারের শরণাপন্ন হলে, বুক না কেটেই ভাল্ব প্রতিস্থাপনে সম্মত হোন এই চিকিৎসক।

আকবর হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত শরীরের অবস্থা মোটামুটি ভালো। এদিকে এর আগে বহুবার টিএভিআর পদ্ধতিতে হার্টে অ্যাওর্টিক ভাল্ব প্রতিস্থাপন করেছেন ডা. প্রদীপ কুমার। তবে পুরোনো ভাল্বে নতুন করে বুক না কেটে এটাই প্রথম কোনো অস্ত্রোপচার। 

বুক না কেটে পুরোনো ভাল্বে নতুন ভাল্ব স্থাপনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক প্রদীপ কুমার কর্মকার বলেন, সাধারণত হার্টে বুক কেটে টিস্যু ভাল্ব প্রতিস্থাপন করলে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যেই কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে এবং বেশিরভাগ রোগী পরবর্তীতে দ্বিতীয়বারের মতো বুক কেটে ভাল্ব প্রতিস্থাপনের জন্য রাজি হন না। 

কারণ মৃত্যুঝুঁকি। এ জন্য সামর্থ্যবানেরা দেশের বাইরে অনেক টাকা খরচ করে টিএভিআর পদ্ধতিতে বুক না কেটে এই অপারেশন করতে যান। কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে সেটি অনেকটা অসম্ভব। কাজেই এটি এখন দেশের সরকারি হাসপাতালেই সম্ভব হচ্ছে। এতে খরচ যেমন কমবে, পাশাপাশি যেকোন শ্রেণির মানুষ সেবা নিতে পারবেন।

[media type="image" fid="166692" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

অধ্যাপক প্রদীপ কুমার বলেন, বুক ও বুকের হাড় না কেটে টিএভিআর পদ্ধতিতে অ্যাওর্টিক ভাল্ব প্রতিস্থাপনে এক ঘণ্টার মতো সময় লাগে। রোগীকে অজ্ঞান করতে হয় না, রোগী তিনদিন পরে হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে যেতে পারেন এবং সাত দিনের মধ্যে কাজে যোগ দিতে পারেন। এই সুবিধার কারণে সারাবিশ্বে এই পদ্ধতিতে বুক না কেটে অ্যাওর্টিক ভাল্ব প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে এবং জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

এই চিকিৎসা উদ্ভাবনের মাধ্যমে অনেক রোগী যাঁদের ১০-১৫ বৎসর আগে টিস্যু অ্যাওর্টিক ভাল্ব প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং যাঁদের ভাল্বের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেছে তাঁরা খুব সহজে হার্টের এই নতুন চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবে। অনেক বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে বলেও জানান হৃদরোগের এ চিকিৎসক।

আমারসংবাদ/এআই