এপ্রিল ৮, ২০১৬, ০৯:১৬ এএম
একটি সহযোগী পত্রিকায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে যে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ স্মরণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের চোত্তাখোলায় ২০ হেক্টর জায়গা জড়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ‘ভারত বাংলাদেশ মৈত্রীউদ্যান’। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাহাড় ঘেরা এই চোত্তাখোলার বেসক্যাম্প থেকেই মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করে মুক্ত করেছিলো ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার খ্যাত এই চোত্তাখালায় এবার ত্রিপুরার রাজ্য সরকার নির্মাণ করছে মৈত্রী উদ্যান। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে ১৩০ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের ফেনী সীমান্তের ওপারের বিলোনিয়া শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী এলাকা চোত্তাখোলা। চোত্তাখোলার তৃষ্ণা অভয়ারণ্যের পাশে ২০ হেক্টর জমিতে সাপের মত বয়ে চলা জলাশয় দিয়ে বিভক্ত সাতটি টিলার ওপর রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৩২ ফুট উচ্চতার একটি ভাস্কর্য। এটি ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া আরেকটি ১২ ফুট ভাস্কর্য রয়েছে সাভারের জাতীয় স্মৃতি সৌধের আদলে। এর সামনেই রয়েছে অস্ত্র হাতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য। সবুজ বৃক্ষরাজি ঘেরা পাহাড়ের বিচ্ছিন্ন টিলাগুলোকে যুক্ত করতে এবং প্রাকৃতিক আবহ ধরে রাখতে তৈরি করা হয়েছে কাঠের সেতু। ভাস্কর্যের পেছনে নির্মাণ করা হচ্ছে টেরাকোটায় চিত্রিত সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের নানা দিক নিয়ে স্থাপনা। সেখানে রয়েছে বেশ কয়েজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থল।ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণে মৈত্রী উদ্যান ঘুুরে এসেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল। মন্ত্রী বলেন, ভারত বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। বিশেষ করে মুক্তিযুুদ্ধে ভারতের অবদান অনন্য, এটা বলে শেষ করা যাবে না। ফেনী সীমান্তের ওপারে ত্রিপুরার চোত্তাখোলায় গড়ে উঠেছিলো মুক্তি বাহিনীর অলিখিত আশ্রয় স্থল। চোত্তাখোলায় মুক্তিকামী বাঙালিদের আশ্রয় দেয়া সহ বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করেছিলো ভারত সরকার ও স্থানীয় জনগণ। তখন মুক্তিবাহিনী চোত্তাখোলায় বেসক্যাম্প স্থাপন করে দেশের ভেতরে প্রবেশ করে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলো।মৈত্রী উদ্যানে এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের আদলে প্রতিকৃতি এবং আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে ‘স্মৃতিসৌধ’ সহ ১৪টি ম্যুরাল ও টেরাকোটা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। পাহাড় ঘেরা সবুজ বৃক্ষরাজির মধ্যে এই মৈত্রী উদ্যান দেখে যে কোন ব্যক্তিরই ভালো লাগবে। সামনে নভেম্বরে মৈত্রী উদ্যানের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। এরপর জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হতে পারে। উদ্বোধনী অনষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার থাকার কথা আছে।মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় ও ত্রিপুরা রাজ্য সরকারে প্রকাশনা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর চোত্তাখোলায় একটি ছোট্ট পার্ক উদ্বোধন করেন ত্রিপুরা রাজ্য সিপিআই এমের মুুখপাত্র গৌতম দাস। পার্ক উদ্বোধনের ওই অনুষ্ঠানে গৌতম দাস মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতিচারণ করেন। তিনি ফিরে গিয়ে বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে জানান। পরে মানিক সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে গৌতম দাস মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই চোত্তা খোলায় একটি বৃহৎ পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী গড়ে তোলা হচ্ছে ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ রুপি।মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিকে চোত্তাখোলায় ঘাঁটি গড়ে তুলেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। প্রথম দিকে এই ঘাঁটিতে ট্রানজিট স্মরণার্থীর ক্যাম্প ছিলো। চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসা শরণার্থীদের এখানে আশ্রয় দেয়া হোত। একটু সুস্থ হয়ে তারা ত্রিপুরার বাইরে চলে যেতেন। একাত্তরের মে মাসে এটি ট্রানজিট ক্যাম্পের পাশাপাশি মুক্তিবাহিনীর শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়। তখন ভারতীয় বাহিনীর সহায়তায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা চোত্তাখোলা থেকেই পাকিস্তান হানাদানদের বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনা করতেন। সে সময় চোত্তাখোলায় শতাধিক বাঙ্কার তৈরি করা হয়। বাঙ্কারগুলো এখনো চোত্তাখোলা মৈত্রী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করছে। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিলো বিশ্বস্বীকৃত-সর্বজনীন। এজন্য মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষিত আছে ভারত, লন্ডন, আমেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ত্রিপুরা রাজ্যে যে ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান করা হচ্ছে, এতে উভয় দেশের বন্ধুত্ব প্রসার হবে, তেমনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের ত্যাগের উজ্জ্বল মহিমা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি গোচর হবে। এই মহৎ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।