জহিরুল হক রাসেল, কুমিল্লা
জুন ১৩, ২০২২, ০৭:৫৯ পিএম
জহিরুল হক রাসেল, কুমিল্লা
জুন ১৩, ২০২২, ০৭:৫৯ পিএম
রাত পোহালেই কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এর আগে সোমবার (১৩ জুন) গভীর রাত পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে শেষ মুহুর্তের প্রচার-প্রচারণা চালান প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। ভোটারদের কাছে টানতে নানান প্রতিশ্রুতি সহ আকুতির কমতি ছিল না তাদের। মেয়র পদে তিন হেভিওয়েট প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত, মনিরুল হক সাক্কু, নিজাম উদ্দিন কায়সার- তিন জনেই প্রচার-প্রচারণাকালে ভোটার ও সাংবাদিকদের নিকট বিজয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে কুমিল্লায় অবস্থানরত দুই নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা ও আহসান হাবিব খান সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের আশ্বাস দিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ভোট কেন্দ্রে হাঙ্গামা কিংবা সহিংসতা করলে কোনোভাবেই তা বরদাশত করা হবে না। এরপরেও পরিবেশ কেউ ভোটের সুষ্ঠু নষ্ট করার চেষ্টা করলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে, প্রয়োজনে নির্বাচন স্থগিত করা হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন নির্বাচন কমিশনারগণ।
এদিকে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোট অনুষ্ঠানের জন্য নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো নগরী। নিয়োগ করা হয়েছে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাড়ে ৪ হাজার সদস্যকে।
নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা নগরী: ২৭টি ওয়ার্ডে বিভক্ত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের এবারের মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। বুধবার নগরীর ১০৫টি কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য সোমবার থেকে নগরীতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪ হাজার ২৬০ জন সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২২৯টি টিমে পুলিশ সদস্য ২ হাজার ৪৬০ জন, ১২ প্লাটুন বিজিবির ২৪০ জন সদস্য, র্যাবের ২৭টি টিমে ২৫০ জন, ১০৫ কেন্দ্রে ১ হাজার ২৬০ জন আনসার, এপিবিএন এর ৯টি গ্রুপে ৫০ সদস্য আইনশৃংখলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ৫০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। পুলিশ সহ আইনশৃঙখলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মাঠ তদারকিতে নিয়োজিত থাকবেন ৬ জন এডিসি ও ডিডিএলজি।
গণমাধ্যমের মুখোমুখি দুই নির্বাচন কমিশনার: আইনের কিছু ফাঁক-ফোকরকে ব্যবহার করে’ সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বাধা সত্বেও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থান করছেন বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। এলাকা ছাড়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে অমান্য করা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই সোমবার কুমিল্লায় নির্বাচন কমিশনার বলেন, “তিনি (এমপি বাহার) আইন অমান্য করে নির্বাচনী এলাকায় আছেন।
তবে আইনের কিছু ফাঁক-ফোঁকরকে তিনি ব্যবহার করছেন। আমাদেরও সময় আসবে। ওয়েট অ্যান্ড সি। যেখানে ভোটের পরিবেশ ভালো থাকবে না, সেই কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হবে।’ এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ব্রিফিংয়ে অনুষ্ঠানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহনের বিষয়ে নানা নির্দেশনা দেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান (অব.)।
এসময় তিনি বলেছেন, ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের হাঙ্গামা বরদাশত করা হবে না। ভোট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ভোটার ছাড়া পেশি শক্তি দেখিয়ে কেউ বুথে প্রবেশ করলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা নেবেন। এ কমিশন কুমিল্লায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট করতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিয়েছে।
রিটার্নিং অফিসারের নিকট স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ: কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে বহিরাগত ও সন্ত্রাসীদের এলাকায় মহড়ার অভিযোগ এনে তা প্রতিরোধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। সোমবার (১৩ জুন) দুপুরে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার নিকট স্মারকলিপিটি জমা দেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিনের অভিযোগ পেয়েছি, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ২৭টি ওয়ার্ডে ইভিএমে ভোট হবে। এ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। হিজড়া ভোটার দুজন। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট হবে। এ নির্বাচনে ৫ জন মেয়রপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ৩৬ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ১০৮ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন।
মক ভোটিং: সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নগরীর ১০৫টি কেন্দ্রে মক ভোটিং হয়েছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, এর মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ভোটের দিন ভোটাররা একটি উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এজন্যে জেলা জেলা-পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের সকল প্রস্ততি রয়েছে।
শেষ পর্যায়ে প্রার্থীদের গণসংযোগ: নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত সোমবার নগরীর ভল্লবপুর, ঝাউতলা, বাদুরতলা, ছোটরা, বাগিচাগাঁও, রানীর বাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন। টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল হক সাক্কু সোমবার দিনভর নগরীর নানুয়া দীঘিরপাড় তার নির্বানী কার্যালয়ে থেকে নেতাকর্মীদের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। তবে তার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলি নগরীর দক্ষিণ চর্থা, উত্তর চর্থা, শাকতলা এলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন।
মেয়র পদে ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার সোমবার নগরীর মাটিয়ারা, ধনাইতরী ও সুজানগরসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন। দুপুরে তিনি রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা বলে সাংবাদিকদের নিকট বক্তব্য দেন।