এনামুল হক সরকার, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম)
জুন ২৭, ২০২২, ১১:১১ এএম
এনামুল হক সরকার, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম)
জুন ২৭, ২০২২, ১১:১১ এএম
দিনে-দুপুরে টাকা চুরির অপবাদে অসহায় শহিদুল ইসলাম (৩৩) কে ধরে নিয়ে গিয়ে বাড়ীর উঠানের গাছের সাথে ঝুলিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চার ভাইয়ের যৌথভাবে এলোপাতাড়ি লাঠির আঘাতে ভেঙে যায় হাতের একটি আঙুল। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের রামহরি এলাকায় অমানবিক এ ঘটনাটি ঘটেছে।
ত্রিপল নাইনে (৯৯৯) ফোন পেয়ে রাজারহাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থল হতে আহত যুবককে উদ্ধার করলেও কাউকে আটক করেনি। শহিদুল ইসলাম বর্তমানে রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। আহত শহিদুল ইসলাম একই গ্রামের নিহত বক্তার আলীর পুত্র।
জানা গেছে, বুধবার (২২ জুন) দুপুরে ঘটনাটি ঘটলেও ধামা চাপের দেবার চেষ্টা করা হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্যাতনের একটি ভিডিও প্রকাশ পেলে সকলের দৃষ্টিগোচর হয়।
ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম আমার সংবাদকে জানান, আমি দিনমজুরির কাজ করে মা হাওয়া বেওয়া সহ জীবন যাপন করেন। দিন মজুরের কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে মা-ছেলের খেয়ে না খেয়ে কেটে যায় দিন মাস বছর।
মা হাওয়া বেওয়ার বয়স বেশি হবার কারণে ব্রেইনের কিছুটা সমস্যা হয়েছে। একটানা বৃষ্টির কারণে বাড়িতে পানি উঠায় রান্নার উপায় নেই। ওই দিন দুপুরে আমি বিজলির বাজারের পাশে একজনের বাড়িতে খড়ি ফাটার কাজ পাই। আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে ওই বাজারে গিয়ে একটা দোকানে বাকিতেই খুরমা খেতে যাই।
এসময় আউয়াল, দুলাল, মানিক এবং আলম এসে আমাকে পাঞ্জা করে ধরে বলে তুই ১১হাজার ৫০৪টাকা বাড়ি থেকে চুরি করে নিছিস। এই বলে ওরা চার ভাই আমাকে তাদের বাড়ির ওঠানে গাছের সাথে বেঁধে মারধর করে। এসময় আব্দুল বাতেন মেম্বার উপস্থিত ছিলেন। তিনি বারবার নিষেধ করার পরেও তারা আমাকে ছেড়ে দেয়নি।
পরে কে বা কারা ৯৯৯ ফোন দিলে রাজারহাট থানার পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে। এসময় পুলিশ তাদেরকে রাগারাগি করে আমাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করার নির্দেশ দেন। পরে ওরা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে সন্ধ্যায়।
তাৎক্ষনিক কিছু ওষুধ কিনে দেবার পর থেকে তারা আমার কোন খোঁজ নেয়নি। গ্রামবাসীরা টাকা তুলে চিকিৎসার খরচ দিচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকার কারণে এবং পরিবারের আর কোন লোক না থাকায় মামলা করতে পারেনি।
শহিদুলের মা হাওয়া বেওয়া বলেন, মোর ছোয়াটাকে বিনা দোষে মারিল। মুই এটার বিচার চাং।
অভিযুক্ত আউয়াল বলেন, আমার বড় ভাই দুলালের বাড়ি থেকে ১১ হাজার ৫৮০টাকা হারিয়ে গেছে। আমরা নিজ চোখে দেখিনি। আমার ভাতিজি শহিদুলকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে দেখেছেন। সেজন্যই তাকে ধরে এনে মারা হয়েছে। তবে ওভাবে মারধর করাটা ঠিক হয়নি। এটা সমাধের শেষ পর্যায় এসে পৌঁছেছে। পুলিশের উপস্থিতিতেই বাতেন মেম্বার সমাধানের আশ্বাস দেন। পরে পুলিশের নির্দেশে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি এবং চিকিৎসার খরচ দিচ্ছি।
এই বিষয়ে ইউপি সদস্য আব্দুল বাতেন মেম্বার ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি শহিদুলকে মারধর করে ছেড়ে দেয়া অবস্থায় দেখতে পাই। শহিদুল হাসপাতালে থাকায় এটা কোন সমাধান হয়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলেও কাউকে আটক করেনি।
ডিউটিরত চিকিৎসক ডা: তাসলিমা আক্তার বলেন, শহিদুল ইসলাম বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার বাম হাতের একটি আঙ্গুল ভেঙ্গে গেছে। চিকিৎসা নিলেই সে সুস্থ হয়ে উঠবেন।
রাজারহাট থানার পুলিশ এসআই অনিল চন্দ্র রায় বলেন, ৯৯৯ ফোনে পেয়ে ঘটনা স্থল থেকে শহিদুলকে দড়ি খোলা অবস্থায় আমরা পাই। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে এখনও কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি।
এই বিষয়ে রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজু সরকার বলেন,বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই জানতে পারতাম। এরপরেও আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি।
আমারসংবাদ/এআই