Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

ফরিদপুরের যাত্রীদের ভেঙ্গে ভেঙ্গেই চলাচল করতে হবে

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর

জুন ২৭, ২০২২, ০২:১৫ পিএম


ফরিদপুরের যাত্রীদের ভেঙ্গে ভেঙ্গেই চলাচল করতে হবে

স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ফরিদপুর হতে ঢাকা চলাচলে বাসযাত্রীদের সময় কমেছে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো। এদিকে, পদ্মা সেতু হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ২৩ রুটে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিসির বাস চলাচল করবে বলে জানানো হয়েছে। 

তবে এসব রুটের মধ্যেও ফরিদপুর নেই। তাছাড়া জেলার ভাঙ্গা উপজেলাতেও কোনো বাস টার্মিনাল নেই। এর ফলে এই পথে চলাচলে ফরিদপুরের যাত্রীদের ভেঙ্গে ভেঙ্গেই চলাচল করতে হবে। তবে বাস চলাচল চালু না হলেও পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হলে যাত্রীরা মাইক্রোবাস কিংবা প্রাইভেটকারের যাত্রী হয়ে পদ্মা সেতু হয়ে অপরপ্রান্তে যেতে পারবেন বলে জানান বাস মালিকরা।

রোববার (২৬ জুন) এই রুটে কোনো প্রকার যানজট না থাকায় ফরিদপুর হতে ঢাকা যেতে বাসযাত্রীদের সময় লেগেছে ৩ ঘণ্টা থেকে সোয়া ৩ ঘণ্টার মতো। আগে এই পথে ফরিদপুরের যাত্রীদের সময় লেগে যেতো ৫ ঘণ্টা থেকে সাড়ে ৬ ঘণ্টার মতো। 

তবে সংশ্লিষ্ট পরিবহন সূত্র বলছে, এখন ঢাকার অংশে মহাসড়কে ফোর লেন করায় সময় কিছু বেশি লাগছে। ফোরলেনের এই নির্মাণ কাজ শেষ হলে এবং ফেরি ঘাটের রাস্তার উন্নতি হলে সর্বোচ্চ আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যেই তারা যাত্রী নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে পারবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশির দশকের শুরু দিকে ফরিদপুর হতে ঢাকা রুটে সরাসরি বাস চলাচল শুরু করে পরিবহন কোম্পানীগুলো। তার আগে ঢাকার যাত্রীদের ভরসা ছিলো আরিচামুখী লোকাল বাস কিংবা ফরিদপুরের সিএন্ডবি ঘাট থেকে নৌপথের লঞ্চ চলাচল। 

তবে নব্বই সালের আগেই ফরিদপুর থেকে ঢাকার লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বাসই একমাত্র বাহন হয়ে উঠে। শুরু দিকে তিন ঘণ্টা হতে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগলেও সাম্প্রতিককালে যানজট ও অন্যান্য কারণে চার-থেকে পাঁচ ঘণ্টার আগে ফরিদপুর হতে ঢাকা কিংবা ঢাকা হতে ফরিদপুর পৌঁছানো সম্ভব হতো না। 

তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন এখন মাওয়ামুখী। এতে ফেরিঘাটের সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন আর নেই। রবিবার পদ্মা সেতু চালুর প্রথম দিনেই ফেরির জন্য নয় বরং গাড়ির জন্যই ফেরিগুলো অপেক্ষায় বসে ছিলো।

ফরিদপুর জেলা বাস মালিক গ্রুপের সদস্য রাজিব হাসান সুজন জানান, রবিবার ভোরে সূর্যমুখীর প্রথম ট্রিপ (প্রথম গাড়ি) ফরিদপুর থেকে ছেড়ে ঢাকার গাবতলীতে পৌঁছেছে সাড়ে তিনঘণ্টার মধ্যে আর বিকালে এই পরিবহন ঢাকা থেকে ছেড়ে এসে ফরিদপুরে পৌঁছেছে সাড়ে তিন ঘণ্টার একটু বেশি সময়ের মধ্যে। আগে এই সময় লাগতো কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মতো।

ফরিদপুরের গোল্ডেন লাইন পরিবহনের গাবতলীর কাউন্টার মাস্টার তৌহিদ খান বলেন, আমাদের পরিবহন ঢাকা থেকে ছেড়ে ফরিদপুরে পৌঁছাতে রবিবার সময় লেগেছে সোয়া তিন ঘণ্টার মতো। 

তিনি বলেন, ঢাকা হতে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কে ফোরলেনের কাজ চলছে। এছাড়া পদ্মায় এখন ভালো স্রোতও রয়েছে। আর ফেরিঘাটের রাস্তাগুলোরও সমস্যা আছে। এসব সমস্যা দূর হলে তারা আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই অনায়াসে ফরিদপুর হতে ঢাকা যাত্রী পরিবহন করতে পারবেন।

এদিকে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে যানজট কমে আসায় ফরিদপুরের পরিবহন মালিকরা এখনও পদ্মা সেতু হয়ে যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত নেননি। এই রুটে যানজট কম থাকায় এখন যাত্রী পরিবহন সহজতর হবে এবং পদ্মা সেতুর টোল দিয়ে যাত্রী পরিবহন করতে গেলে তুলনামুলক কম লাভের আশংকা করছেন তারা। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই রুটে বাস চলাচলে লোকসানের ঝুঁকিসহ কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা রয়ে গেছে। তাছাড়া নতুন করে বাস চলাচল শুরু হলে একটি পরিবহনের কাউন্টার ও যাত্রী উঠানামাসহ যেসব জিনিস নির্ধারণ করা দরকার সেসব ব্যাপারেও তারা এখনো পরিস্কার করে কোনোকিছু করে উঠতে পারেননি। এজন্য দেখে শুনে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন তারা।

ফরিদপুর জেলা মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি এসএম শাহ্ আলম মুকুল বলেন, রোববার পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হলেও ফরিদপুর থেকে আমরা কোনো বাস চলাচল চালু করছি না। আমরা এখনই বাস চালু করে দুইদিন পরে লস দিয়ে বন্ধ করে দিলেতো হবে না। তিনি বলেন, আসলে এই রুটে ফরিদপুরের যাত্রী তেমন নেই। মূলত বরিশাল থেকে হাজার হাজার যাত্রী যারা লঞ্চে যাতায়াত করতো তাদেরই একটা চাপ পড়বে। অন্যদিকে আমাদের যাত্রী যারা, তারা ফিক্সড যাত্রী। 

তিনি বলেন, ফরিদপুরের উপর দিয়ে ভাঙ্গা হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গাড়ি চলাচল করে তারাই পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করবে। আর আমাদেরতো পাটুরিয়া হয়ে অল্টারনেটিভ একটা পথ রয়েছেই। এজন্য এখনই লসে যেতে চাচ্ছি না। তবে দশ-পনেরো দিন দেখে তারপরে এব্যাপারে আমরা একটি সিদ্ধান্ত নেবো।

ফরিদপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সিদ্দিকী কামরুল বলেন, ফরিদপুর থেকে ঢাকা যেতে পদ্মা সেতু হয়ে বাস চলাচলে খরচ অনেক বেশি পড়ে যাবে। পথে পথে সড়ক ও সেতুর টোল দিতে হবে। তাছাড়া এই রুটে বাস কোথা থেকে যাত্রী তুলবে, কোথায় যাত্রী নামাবে সেগুলোও পরিস্কার না। 

এই পথে ঢাকা প্রান্তের বাসগুলো যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ ও গুলিস্তানে পৌঁছাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসবস্থানে ফরিদপুরের পরিবহনগুলোর কোন কাউন্টারও নেই। এসব কারণে এখনই এই রুটে বাস চালু হচ্ছে না। 

তিনি বলেন, এই রুটে মূলত: বরিশাল, খুলনাসহ দূরবর্তী যেসব এলাকার বাস চলবে তারা খরচসহ পুষিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু ফরিদপুর থেকে সেতুর দূরত্ব খুবই কম। এতে তেমন ভাড়া পাওয়া যাবে না। আবার সেতু ও সড়কের টোল দিয়ে লাভের মুখও দেখা যাবে না।
 
ফরিদপুরের মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি জুবায়ের জাকির জানান, রাজবাড়ি, ভোলা ও ফরিদপুর বাদে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় সব জেলা থেকেই রবিবার থেকে পদ্মা সেতু হয়ে বাস চলাচল করবে। তবে ফরিদপুরের বাইপাস হয়ে এই রুটে অন্যকোন জেলার বাস চলাচল করবে কিনা সেটি এখনো পরিস্কার না।

ফরিদপুরের ঢাকামুখি অন্যতম পরিবহন কোম্পানী গোল্ডেন লাইনের কাউন্টার মাস্টার আজম বলেন, আগামী এক তারিখ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে তাদের পরিবহন ঢাকার পথে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আমারসংবাদ/এআই 

Link copied!