Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪,

জনশুমারি থেকে বাদ পড়েছে বালিয়াকান্দির শতাধিক পরিবার 

বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

জুলাই ১২, ২০২২, ০২:৫৫ পিএম


জনশুমারি থেকে বাদ পড়েছে বালিয়াকান্দির শতাধিক পরিবার 

জনশুমারি ও গৃহগননার বাইরে থেকে গেছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের ১ ওয়ার্ডের পোড়াপাড়া গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাব বলে দাবি করেছেন তারা।
 
এবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি ও গৃহগণনা শুরু হয়। কার্যক্রম চলে ১৫ জুন থেকে ২১ জুন পর্যন্ত। ডিজিটাল জনশুমারিতে প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে ৩৫ ধরণের তথ্যসহ আরও ১০টি সহায়ক তথ্য নেওয়া হয়। প্রশ্নপত্রের ৩৫টি প্রশ্নের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন হলো খানা (পরিবার) ক্রমিক নম্বর, খানার ঠিকানা। বসবাসের ধরনের মধ্যে রয়েছে অন্য কোথায়ও বসতঘর আছে কিনা, খানার প্রকার, খানার প্রধান বসতঘরের মেঝের উপকরণ, খানার প্রধান বসতঘরের দেয়ালের উকরণ, বসতঘরের ছাদের ছাউনির উপকরণ। 

এছাড়াও বাসগৃহের সংখ্যা, ভবনের মোট তলার সংখ্যা, বাসগৃহের মালিকানা, খানার খাবার পানির প্রধান উৎস, টয়লেট সুবিধা, টয়লেট ব্যবহারের ধরণ, সাবান ও পানিসহ হাত ধোয়ার আলাদা ব্যবস্থা কি? কোনো নাগরিক বিদেশে আছে কিনা, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কিভাবে পরিচালিত হয়, গত দুই বছরে খানায় কোনো বৈদেশিক রেমিট্যান্স (অর্থ-পণ্য) গ্রহণ করা হয়েছে কিনা প্রভৃতি। এছাড়াও শুমারির রাতে খানায় অবস্থানকারী সদস্য (আত্মীয়/অনাত্মীয়সহ) সংখ্যা, শুমারির রাতে খানায় অনুপস্থিত (ভ্রমণরত/ডিউটিরত) সদস্য সংখ্যা, খানায় অন্তর্ভূক্ত মোট সদস্য সংখ্যা, খানায় কতজন বাংলাদেশী নাগরিক বিদেশে থাকেন, গত দুইবছরে খানার কতজন  বিদেশ থেকে স্থায়ীভাবে  ফেরত এসেছেন? এসব তথ্য পরিবার কেন্দ্রীক। এছাড়াও থাকবে ব্যক্তিগত তথ্য।

সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দা মোসলেম শেখ বলেন, আমি টেলিভিশনে ও ইউনিয়ন পরিষদের মাইকিং থেকে জনশুমারির বিষয়টি জানি। আমার বাড়িতে স্ত্রী, তিন ছেলে, ছেলে বউ আছে। জনশুমারির বিষয়টি জানতাম। কিন্তু আমাদের বাড়িতে কেউ তথ্য সংগ্রহ করতে আসেনি। বাড়িতে কোনো স্টিকারও লাগানো হয়নি। রাস্তার পাশেই আমাদের বাড়ি। শুনেছি এই এলাকার প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে কারও বাড়িতে তথ্য নিতে লোকজন আসে নাই।

জনশুমারি ও গৃহগণনার ব্যক্তিগত তথ্যের মধ্যে রয়েছে, সদস্যদের ক্রমিক নম্বর, খানার সদস্যদের নাম, বয়স, লিঙ্গ, খানা প্রধানের সঙ্গে সম্পর্ক, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্ম, প্রতিবন্ধী হলে তার ধরণ, পড়তে লিখতে পারেন কিনা, বর্তমানে শিক্ষার্থী কিনা, সর্বোচ্চ কি পাশ, পাশের ক্ষেত্র, কাজের মর্যাদা, কর্মরত হলে কাজের ধরণ, বর্তমানে কোনো প্রশিক্ষণে নিয়োজিত আছেন কিনা, নিজস্ব মোবাইল ফোন আছে কিনা, মাসে একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন কিনা? আর প্রশ্নের মধ্যে ব্যাংক/বিমা/ডাকঘর/সঞ্চয় একাউন্ট আছে কিনা, মোবাইল ব্যাংকিং, বিকাশ, রকেট ও নগদ একাউন্ট আছে কিনা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোড যদি থাকে, জাতীয়তা, বিদেশী হলে দেশের নাম দিতে হয়।

রোকন মুন্সী বলেন, আমাদের বাড়িতেও কেউ তথ্য নিতে আসে নাই। তবে মাসখানেক আগে একবার তথ্য সংগ্রহ করার জন্য লোকজন এসে ছিল। আমি বাড়িতেই সাংসারিক কাজ-কর্ম করি। কেউ কোনো স্টিকার লাগায় নাই। তবে অনেক আগে বিট পুলিশিংয়ের স্টিকার লাগানো আছে। তার স্ত্রীও একই কথা বলেন।

শিউলি আক্তার নামে এক গৃহিণী বলেন, আমি বছর দশেক আগে একবার আদমশুমারিতে কাজ করেছিলাম। অনেক তথ্য দিতে হয়। বিদেশ থেকে কোনো কিছু পেলে সে তথ্য দিতেও হয়। আমি এসব জানি। আমাদের বাড়িতে কেউ আসে নাই। আমি জনশুমারি চলাকালীন সময়ে একদিন কালিকাপুর গিয়ে ছিলাম। সেখানে জনশুমারির লোকদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমাকে ওই এলাকার তালিকার দিতে চেয়েছিল। আমি রাজি হইনি। কারণ আমার বাড়িতে তালিকাবদ্ধ হওয়ার ইচ্ছে ছিল। সেদিন আমার দেবর ও ননদদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছিলাম।

কলেজ শিক্ষার্থী রাব্বী মোল্লা বলেন, আমরা দুই ভাই। বাড়িতে মা-বাবা আছেন। আমাদের বাড়ি পাকা রাস্তা থেকে একটু ভেতরের দিকে। আমাদের বাড়িতেও তথ্য নিতে কেউ আসে নাই।

ওই এলাকার গণনাকারী মরিয়ম খাতুন বলেন, ওই এলাকায় আরও কয়েকজন দায়িত্বে ছিল। আমি ১৩২টি বাড়িতে গিয়েছি। এসব বাড়ির তথ্য দিয়েছি। আর কে কি করেছে তা জানি না।

সুপারভাইজার মিনারা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, আমার অধিনে এখানে ছয়জন কাজ করেছে। সবাইকে এলাকা ভাগ করে দিয়েছিলাম। আমি ৭৮৮জনের তথ্য দিয়েছি। কিন্তু এই এলাকায়ও সব বাড়িতে কাজ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। এরিয়া বড় হওয়ায় সেভাবে খোঁজখবর নিতে পারিনি।

রাজবাড়ী জেলা পরিসংখ্যান ব্যুরো’র উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রাপ্ত তথ্য ইতিমধ্যে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জোনাল অফিসার বলেছেন দুই-একটা খানা বাদ যেতে পারে। গণনাকারীর সঙ্গে আমার কথা হয়নি। এতো বেশি বাদ পরার সুযোগ নেই। তবে আপাতত আর নতুন করে যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ শুমারি শেষ হয়ে গেছে।

ঢাকা বিভাগীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের যুগ্মপরিচালক জনাব এইচএম ফিরোজ বলেন, প্রাপ্ত তথ্য ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায় থেকে চলে এসেছে। একটি গ্রাম বাদ পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা দু:খজনক। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এক্ষেত্রে কারো অবহেলা পাওয়া গেলে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। 

কেএস 

Link copied!