Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

লোডশেডিং মুক্ত বরিশাল

আরিফ হোসেন, বরিশাল

আরিফ হোসেন, বরিশাল

জুলাই ২০, ২০২২, ০৫:৪৪ পিএম


লোডশেডিং মুক্ত বরিশাল
  • রাত ৮টার পর দোকান বন্ধ

বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে ডিজেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থগিত করে মঙ্গলবার থেকে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ে গিয়েছে দেশ। সেক্ষেত্রে এলাকা ভিত্তিক মাত্র এক ঘন্টা করে লোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। একঘন্টায় যদি বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবেলা করা সম্ভব না হয় তাহলে এলাকা ভিত্তিক প্রতিদিন লোডশেডিং দুইঘন্টা করারও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এমন ঘোষণার পর আপাতত বরিশালবাসীর দুশ্চিন্তার কারণ নেই। 

মঙ্গলবার ও বুধবার বরিশালে কোন ধরনের লোডশেডিং হয় নিই বলে জানা গেছে। বরিশালের বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দৈনিক যে লোডশেডিং শুরু হচ্ছে বরিশাল সে তালিকায় পরার কোন সম্ভাবনা নেই। আর যদি পরবর্তীতে হয়েও থাকে তাহলে সেটা ভোগান্তি হওয়ার মতো দীর্ঘ স্থায়ী কোন লোডশেডিং হবে না। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড-১’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এটিএম তরিকুল ইসলাম বলেন, লোডশেডিং করার জন্য আমাদের কাছ থেকে কোন তালিকা নেয়া হয়নি। তাছাড়া এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমরা কিছুই অবগত নই। 

তিনি আরও বলেন, ধারণা করা যাচ্ছে বরিশাল লোডশেডিংয়ের আওতামুক্ত থাকবে। 

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সরবরাহ ও বিতরনসহ বিভিন্ন কারনে বরিশালে বরাবরই লোডশেডিং কম হয়ে থাকে। আশা করছি এবারও তাই হবে। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বরিশালে তিনটি বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। তাই লোডশেডিং হবার সম্ভাবনা নেই। 

বিদ্যুত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বরিশাল বিভাগের ভোলার ২২৫ মেগাওয়াট গ্যাসটারবাইন পাওয়ার প্লান্ট, এগ্রিকো ও নগরীর সামিট বরিশাল পাওয়ার লিমিটেড থেকে বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় পাঁচ শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রীডে যাচ্ছে। এরমধ্যে গ্যাসটারবাইন পাওয়ার প্লান্ট থেকে ২৭০ মেগাওয়াট, এগ্রিকো থেকে ৯৫ ও সামিট থেকে ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়। 

সূত্রে আরও জানা গেছে, যে অঞ্চলে বিদ্যুত উৎপাদন হয় সেই অঞ্চলের চাহিদা পুরন করার পর সরবরাহের নিয়ম। সে অনুযায়ী বরিশালে লোডশেডিংয়ের সম্ভাবনা কম। 

বরিশালের বিদ্যুত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বরিশালে বর্তমানে বিদ্যুৎ চাহিদা দুইশ’ মেগাওয়াট। এ চাহিদার পুরোটাই আমরা পাচ্ছি। তাই সারাদেশে লোডশেডিং হলেও বরিশালে লোডশেডিংয়ের কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। 

বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক কর্মকর্তারা বলেন, ভোলা থেকে পর্যাপ্ত বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে। বরিশালে আপাতত লোডশেডিংয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। 

পল্লী বিদ্যুতের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক প্রকৌশলী বলেন, গুণগত, মানসম্পন্ন এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কাজ করছে। আমাদের চাহিদার পুরোটাই গ্রীড থেকে সরবরাহ হচ্ছে। জেলা তো ভালো বিভাগের কোথাও সেই অর্থে লোডশেডিংয়ের সম্ভাবনা নেই। নামেমাত্র যেটুকু লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজের সমস্যা রয়েছে তা দূর করার কাজ চলমান রয়েছে। 

অন্যদিকে বরিশালের সকল শপিংমল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আলোকসজ্জা রাত আটটার পর বন্ধ রাখার জন্য সকাল থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরীতে প্রচার-প্রচারনা চালানো হচ্ছে। প্রচারণাকালে  এই আইন অমান্য করা হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে হুঁশিয়ার উচ্চরন করা হয়। 

বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর বলেন, গুণগত, মানসম্পন্ন এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কাজ করছে। আমাদের চাহিদার পুরোটাই সরবরাহ হচ্ছে। শুধু জেলা নয়, বিভাগের কোথাও সেই অর্থে লোডশেডিং সম্ভাবনা নেই। যেটুকু লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজের সমস্যা রয়েছে তাও আর থাকবে না বলে আশাবাদী আমরা। এটা দূর করার কাজ চলমান আছে। 

এদিকে সরকারি ঘোষণার প্রথম দিন মঙ্গলবার বরিশাল নগরে রাত ৮টার পর দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুত সাশ্রয়ে সরকারের নির্দেশনা মানতে আটটার পর থেকে দোকান ও শপিংমল বন্ধ করা হয় বলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের উপ-মহাপরিদর্শক মো. ইউসুফ আলী জানিয়েছেন। 

তিনি জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রাত ৮টার মধ্যে দোকান ও শপিংমল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিন হিসেবে সবাইকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। 

কিন্তু এরপর থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে উপ-মহাপরিদর্শক বলেন, প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তিনি জানান, প্রথমদিনে তাদের পাঁচটি টিম নগরে কাজ করেছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। 

এ বিষয়ে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকোর) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. এটিএম তরিকুল ইসলাম বলেন, রাত ৮টার পর দোকানপাট, শপিংমল খোলা থাকলে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে মনিটর করবে বিদ্যুৎ বিভাগ। এজন্য তাদের ২টি ইউনিট থেকে দুটি টিম নগরে কাজ করছে। 

তিনি বলেন, এ বিষয়ে সবাইকে অবহিত করে মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে এ বিষয়টি সবার কাছে পৌঁছে গেছে। রাত ৮টার পর থেকে দোকানপাট খোলা রেখে বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে কোনো সতর্ক নয়, সঙ্গে সঙ্গে সংযোগ কেটে দেওয়া হবে।

কেএস 

Link copied!