পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
জুলাই ৩১, ২০২২, ০৬:৩২ পিএম
পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
জুলাই ৩১, ২০২২, ০৬:৩২ পিএম
ছিটমহল বিলুপ্তির ৭ বছর পূর্তি হয়েছে ৩১ জুলাই মধ্যরাতে। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল সমূহে মাত্র ৭ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সরকার যৌথ ঘোষণায় ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ছিটমহলের নামে স্ব স্ব দেশের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে থাকা ভূ-খন্ড গুলো দেশের মূল ভূ-খন্ডের সাথে একিভূত হয়। ফলে ওইদিন থেকে ব্রিটিশদের করে রাখা ছিটমহল গুলোর বিলুপ্তি ঘটে।
পাটগ্রাম উপজেলায় বিলুপ্ত ছিটমহলের সংখ্যা বেশি। এ উপজেলায় ৫৫ টি বিলুপ্ত ছিটমহলের মধ্যে জনবসতিপূর্ণ রয়েছে ৩৮ টি। একাধিক বিলুপ্ত ছিটমহল গুলো ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার বাসিন্দাদের জীবন-যাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নে প্রতি বছরে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার।
সরকারি উদ্যোগে বিলুপ্ত ছিটমহল গুলোতে পাকা রাস্তা, ডিজিটাল সেন্টার, কমিউনিটি ক্লিনিক, পুলিশ ফাঁড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, শ্মশান, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মিত হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ, স্যানিটেশন, সুপেয় পানির জন্য টিউবওয়েল, কমিউনিটি সেন্টার, সোলার প্রদান করা হয়েছে। বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা নারী, প্রতিবন্দীদের জন্য করে দেওয়া হয়েছে ভাতার কার্ড। তাছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৬ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা স্থলসীমান্ত চুক্তি মোতাবেক বর্তমান প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১ টি ও ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১ টি ছিটমহলের বিলুপ্তি ঘটে। সেই সুবাদে উভয় দেশের অভ্যন্তরে থাকা ছিটমহলগুলো দেশের মূল ভূ-খন্ডের সাথে যোগ হয়। এতে ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দারা বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশি ছিটমহলের বাসিন্দারা ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভ করে। চুক্তির সফল বাস্তবায়নের পর বাংলাদেশের মানচিত্রে যোগ হয় ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর জমি।
পাটগ্রাম উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মাহবুব আলম জানান, গত ৭ বছরে বিলুপ্ত ছিটমহলে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ৩ টি ব্রিজ, ২টি মসজিদ, ১টি মন্দির, ১টি শ্বশান, কবরস্থানের বাউন্ডারী ওয়াল, কমিউনিটি সেন্টার, প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাটগ্রাম উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল সমূহে প্রায় ১ হাজার নলকুপ, দুই শত রিংওয়েল নলকুপ, ৮ শ স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিন স্থাপন করা হয়েছে।
শিক্ষা অধিদপ্তর জানায়, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষায়িত ১৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের আওতায় বিলুপ্ত ছিটমহলে চারটি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিলুপ্ত ছিটমহলের ৮ নং ভোটবাড়ী, ১৪ নং লতামারী, ২১ নং পানিশালা ও ১১৯ নং বাঁশকাটা বিদ্যালয় বিহীন এলাকায় চার কক্ষ বিশিষ্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় উদ্যোগে তিনটি নিম্ন মাধ্যমিক ও দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বাশঁকাটা দয়ালটারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মোমিনপুর বাশঁকাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় চলতি বছরে এমপিও ভুক্তি হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে ইতিমধ্যে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪০ কিমি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় সকল বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
ছিটমহল বিলুপ্তির ৭ বছর পূর্তি ও ছিটমহল বিলুপ্তির দিনটি পালনে এখানকার বাসিন্দা ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। রোববার (৩১ জুলাই) দুপুরে বাঁশকাটা কমিউনিটি সেন্টারে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন, বিশেষ অতিথি ছিলেন পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন- বিলুপ্ত বাঁশকাটা ছিটমহলের নেতা নজরুল ইসলাম। অন্যান্যদের মধ্যে পাটগ্রাম উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি পূর্ণ চন্দ্র রায়, উপজেলা পরষিদের ভাইস চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন লিপু, পাটগ্রাম উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল ওহাব প্রধান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান নিলু, আবু তালেব, জোংড়া ইউপি চেয়ারম্যান মজিবর রহমান, ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মইনুল হক ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা প্রমূখ।
এছাড়াও মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা, রাতে মোমবাতি প্রজ্বলনের আয়োজন করা হয় বলে জানান, বিলুপ্ত ছিটমহল উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি গোলাম মতিন রুমি।
কেএস